কম বয়সে কি চুল পেকে যাচ্ছে? তবে আর চিন্তা নেই

রূপচর্চা/বিউটি-টিপস July 5, 2017 908
কম বয়সে কি চুল পেকে যাচ্ছে? তবে আর চিন্তা নেই

এক সময় ছিল যখন ৫০ পেরলে চুলে পাক ধরত। কিন্তু এখন স্ট্রেসের মারে ৩০ পেরতে না পেরতেই কালা চুলের ফাঁকে উঁকি মারতে শুরু করে সাদা চুলের দল। আর যত সময় এগতে থাকে তত যেন এদের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ছেলে হোক মেয়ে, চুলের চিন্তায় তাদের রাতের ঘুম যে মাথায় ওঠে, তা বলাই বাহুল্য! তবে আর চিন্তা নেই।


এই প্রবন্ধেটিতে একবার চোখ রাখলেই দেখবেন একটাও সাদা চুলের খোঁজ আপনি পাবেন না। কীভাবে? আরেই সেটাই তো সিক্রেট! যদি সাদা চুলকে চিরদিনের জন্য কালো করতে চান তাহলে এই লেখাটি পড়ে ফেলে জেনে ফেলুন এমন কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে যা এক্ষেত্রে মহৌষধির কাজ করে।


চুলের রং তখনই বদলাতে শুরু করে যখন তার মধ্যে থাকা পিগমেন্টের উৎপাদন কমে যায় বা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। কারণ এই পিগমেন্টের কারণেই চুলের রং কালো হয়। প্রসঙ্গত, অনেক কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। যেমন- বার্ধক্য, জিনগত কারণ, স্ট্রেস, ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি, হাইপোথাইরয়েডিজম, ভিটিলিগো, ধূমপান, পুষ্টির ঘাটতি, পার্নিসিয়াস অ্যানিমিয়া, পরিবেশ দূষণ এবং চলের যত্ন ঠিক মতে না প্রভৃতি। এই বিষয়গুলির দিকে খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন।


তবে পরিসংখ্যান বলছে ৩০ বছর বা তার কম বয়সে চুল পেকে যাওয়ার পিছনে স্ট্রেসই বেশি পরিমাণে দায়ি থাকে। কারণ এই বয়সিদের স্ট্রেস লেভেল বাকিদের তুলনায় অনেক অনেক বেশি হয়। তাই সাবধান! এই একটা ফ্যাক্টরকে যদি কন্ট্রোল করে নিতে পারেন, তাহলেও অনেকটাই নিস্তার মিলতে পারে। আর যদি ইতিমধ্যেই চুল পেকে গিয়ে থাকে তাহলে নিচে আলোচিত ঘরোয়া পদ্ধতিগুলিকে কাজে লাগাতে পারেন। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন।


এক্ষেত্রে যে যে ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি দারুন কাজে আসে সেগুলি হল…


১. আমলকি: সময়ের আগে পেকে যাওয়া চুলকে পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আমলকির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এক্ষেত্রে একটা বাটিতে অল্প করে নারকেল তেল এবং কয়েক টুকরো আমলকি নিয়ে গরম করুন। তারপর সেই তেলটা ধীরে ধীরে সারা চুলে লাগিয়ে কয়েক মিনিট ভাল করে মাসাজ করুন। এমনটা ১৫ দিন করলেই দেখবেন সুফল পেতে শুরু করেছেন। আসলে আমলকিতে উপস্থিত বিশেষ কিছু উপদান পিগমেন্টের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সাদা চুল কালা হতে শুরু করে।


২. আদা: ১ চামচ মধুর সঙ্গে পরিমাণ মতো আদা মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। তারপর সেটি প্রতিদিন চুলে লাগান। এই ঘরোয় মিশ্রনটি চুলকে দীর্ঘসময় কালো রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।


৩. নারকেল তেল: চুলের যত্নে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এক্ষেত্রে একটা বাটিতে সম পরিমাণে নারকেল তেল এবং লেবুর রস নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। তারপর মিশ্রনটা স্কাল্পে লাগিয়ে ভাল করে কয়েক মিনিট মাসাজ করুন। এই পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নিলে চুল তো পাকেই না। সেই সঙ্গে চুলের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্যও ফিরে আসে।


৪. ঘি: সাদা চুলের সমস্যা দূর করতে সপ্তাহে দুবার পরিমাণ মতো ঘি চুলে লাগিয়ে মাসাজ করুন। এমনটা কয়েক দিন করলেই চলে পরিবর্তন আসতে শুরু করবে।


৫. কারি পাতা: নারকেল তেলে আল্প পরিমাণ করি পাতা ফেলে গরম করুন। যখন দেখবেন পাতাটা একেবারে কালো হয়ে গেছে তখন আঁচটা বন্ধ করে সেই মিশ্রনটি স্কাল্পে লাগিয়ে মাসাজ করুন। এই ঘরোয়া ওষুধটি চুল পড়া কমাতে এবং পিগমেন্টের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, নারকেল তেলের পরিবর্তে দই অথবা বাদাম মিল্কের সঙ্গে কারি পাতা মিশিয়েও চুলে লাগানো যেতে পারে।


৬. হেনা: একটা বাটিতে ২ চামচ হেনা পাউডার, ১ চামচ মেথি বীজ, ২ চামচ তুলসি পাতার পেস্ট, ৩ চামচ কফি পাউডার, ৩ চামচ মিন্ট পাতার জুস এবং ১ চামচ দই মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। তারপর সেটি প্রতিদিন চুলে লাগাতে শুরু করুন। এমনটা করলে সাদা চুল নিয়ে আর চিন্তায় থাকতে হবে না। ইচ্ছা হলে নারকেল তেলের সঙ্গে হেনা পাইডার মিশিয়েও চুলে লাগাতে পারেন। এক্ষেত্রেও সমান উপকার পাওয়া যায়।


৭. লিকার চা: কড়া করে বানানো এক কাপ লিকার চায়ে ১ চামচ নুন মিশিয়ে নিন। তরপর চা টা চুলে এবং স্কাল্পে লাগিয়ে নিন। ১ ঘন্টা পর ভাল করে চুলটা ধুয়ে ফেলুন। প্রসঙ্গত, এই ঘরোয়া চিকিৎসাটি কিন্তু প্রতিদিন করতে হবে। তবেই দ্রুত ফল মিলবে।


৮.পেঁয়াজ: এতে উপস্থিত বিশেষ কিছু এনজাইম সাদা চুলের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি চুল পড়া কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো পিঁয়াজ থেকে রস সংগ্রহ করে সেটা চুলে লাগাতে হবে।


৯. গোলমরিচ: ১ গ্রাম গোলমরিচের সঙ্গে হাফ কাপ দই এবং কয়েক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। তারপর সেই পেস্টটা স্কাল্পে এবং চুলে লাগায়ে ভাল করে কয়েক মিনিট মাসাজ করুন। এইভাবে যদি সপ্তাহে ২-৩ দিন চুলের যত্ন নিতে পারেন তাহলেই কেল্লাফতে!


১০. বাদাম তেল: সম পরিমাণে বাদাম তেল, লেবুর রস এবং আমলকির রস মিশিয়ে সেই মিশ্রনটি চুলে লাগালে এই ধরনের সমস্যায় দারুন উপকার পাওয়া যায়।


১১. অ্যালো ভেরা জেল: অসময়ে পেকে যাওয়া চুলের যত্ন নিতে এই প্রাকৃতিক উপদানটি দারুন কাজে আসে। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো অ্যালো ভেরা জেল নিয়ে প্রতিদিন চুলে লাগাতে হবে। তবেই উপকার মিলবে।


১২. সরষের তেল: একেবারেই ঠিক শুনেছেন! সাদা চুলকে পুরনো অবস্থায় ফিরয়ে আনতে সরষের তেল দারুন কাজে আসে। এক্ষেত্রে ২৫০ গ্রাম সরষের তেলের সঙ্গে ৬০ গ্রাম হেনা পাতা মিশিয়ে ভাল করে গরম করুন। যখন দেখবেন হেনা পাতাটা একেবারে পুরে গেছে তখন আঁচটা বন্ধ করে তেলটা স্কাল্পে এবং চুলে লাগান। এইভাবে প্রতিদিন চুলের যত্ন নিলে অল্প দিনেই একটাও সাদা চুল খুঁজে পাবেন না।


১৩. অশ্বগন্ধা: চুলের অন্দরে মেলানিনের মাত্রা বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে পাকা চুলের সংখ্যা কমাতে এই ঘরোয়া পদ্ধতিটি দারুন কাজে আসে। তবে এর সুফল পেতে প্রতিদিন অশ্বগন্ধা স্কাল্পে লাগাতে হবে।


১৪. ভৃঙ্গরাজ: তেল হিসেবে অথবা অষুধ হিসেবেও ভৃঙ্গরাজকে কাজে লাগাতে পারেন। তবে যেভাবেই ব্যবহার করুন না কেন। নিয়মিত যদি এই প্রকৃতিক উপাদানটিকে কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে মাথা ভর্তি কালো চুলের স্বপ্ন পূরণ হবেই হবে। সেই সঙ্গে চুলের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটবে।


১৫. নিম তেল: এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ব্য়াকটেরিয়াল প্রপাটিজ স্কাল্পে জন্ম নেওয়া ব্য়াকটেরিয়াদের মেরে ফেলে একাধিক যেমন চুলের একাধিক সমস্যার সমাধান করে, তেমনি চুল পড়া এবং সাদা চুলের সংখ্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।