উচ্চ রক্তচাপে করণীয়

সাস্থ্যকথা/হেলথ-টিপস July 3, 2017 840
উচ্চ রক্তচাপে করণীয়

একবিংশ শতাব্দির শুরুর দিক থেকে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। তবু হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক, হূদনিষ্ক্রিয়া ও কিডনি রোগের একটি মূল কারণ হিসেবে এটি চিহ্নিত হয়ে আছে। স্বাভাবিক রক্তচাপ থাকা উচিত ১২০/৮০ এর নিচে এবং অনেক লোক এর নিচে রক্তচাপকে নামাতে সক্ষম হননি। রক্তচাপের অসংখ্য ওষুধ ইতিমধ্যে উদ্ভাবিত হয়েছে। তবুও অনেক লোক রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। যারা রক্তচাপ বিশেষজ্ঞ তারা বলেন, উচ্চ রক্তচাপ অনেকটাই প্রতিরোধ যোগ্য।


উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের একটি তাত্পর্যপূর্ণ অংশ জানেনই না যে তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। কারণ এদের মধ্যে অনেকেই কখনই ডাক্তারের কাছে যান না চেক আপের জন্য।


বাকি যে অংশ তাদের অবস্থা সম্বন্ধে অবহিত অনেকেই মনে করেন না এটি গুরুত্বর একটি রোগ। সেজন্য চিকিত্সাও নেন না, ডাক্তার বললেও একে অবহেলা করেন।


অনেকে জীবন যাপনের বিধীতে তেমন কোন পরিবর্তন আনেন না। যেমন স্থূল শরীরের দিকে নজর দেন না, ব্যায়াম করেন না, লবণ খেয়ে চলেন বেশি বেশি, তখন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ দু:সাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। আমেরিকার উইল কর্নেল মেডিকেল কলেজের ক্লিনিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক এবং উচ্চ রক্তচাপ বিশেষজ্ঞ ডা:স্যামুয়েল জে ম্যান আরেকটি সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন, উচ্চ রক্তচাপ রোগী যাদের চিকিত্সা হচ্ছে এদের ৭১ শতাংশ নিচ্ছেন ভূল ওষুধ অথবা সঠিক ওষুধ নিচ্ছেন ভূল মাত্রায়।


ডা. ম্যান বলেন, প্রতিটি রোগীর রক্তচাপ সমস্যার অন্তনিহিত কারণ ও ও ওষুধের পাশ্বপ্রতিক্রিয়া বা যে জন্য রোগী চিকিৎসা ছেড়ে দেন, সে সব বিষয় বিবেচনা করা উচিত। তিনি দেখেছেন যখন ব্যক্তি বিশেষে রোগীর চিকিৎসা যখন লাগসই করা হয়, উপযোগী করা হয় তখন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ অনেক সহজ হয়ে যায়। আর একার্যটি করা যায় সামান্য পাশ্বপ্রতিক্রিয়া করে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে। বেশিরভাগ রোগীর জন্যই নতুন ওষুধের প্রয়োজন পড়েনা। যা প্রয়োজন তাহলো প্রাপ্তিসাধ্য ওষুধের সঠিক ব্যবহার।


অনেক সময় সাধারণ চিকিৎসকরা রক্তচাপের ওষুধগুলোর মধ্যে কোনটি সে রোগীটির জন্য উপযোগী হবে, এরজন্য সূক্ষ্ম বিচার বিবেচনার ব্যাপারটি রয়েছে এর প্রতি মনোযোগী হন না। রোগীর পর রোগীকে একই ওষুধ পরপর প্রয়োগ করাতে কাজের কাজ হয়না। রোগী বিশেষে শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাটি বেছে নেবার যে কৌশলটি তাহলো রোগীর উচ্চ রক্তচাপের অন্তনিহিত কারণ বা প্রকাশটি খুজে পাওয়া এবং সে হিসাবে চিকিৎসা দেওয়া।


লবণ-সংবেদী উচ্চ রক্তচাপ, বয়স্ক লোক ও আফ্রিকান-আমেরিকানদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। মূত্রবর্ধক ওষুধ এবং ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকারস্ ওষুধ দিলে এদের ক্ষেত্রে বেশ কাজ হয়।


কিডনি হরমোন রেনিনের সঙ্গে সম্প্রর্কিত উচ্চ রক্তচাপ এসিই ইনহিবিটারস ওষুধ এবং এণজিওটেনসিন রিস্পেটার ব্লকারস্ ওষুধ, সরাসরি বেনিন ইনবিহিটারস ও বিটাব্লকারস ওষুধে কাজ হয়।


নিউরোজেনিক উচ্চ রক্তচাপ হলো সমবেদী স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। এদের ক্ষেত্রে বিটাব্লকারস, আলফাব্লকারস, ক্লোনিডিনের মত ওষুধে কাজ হয়।


ডা. ম্যানের ভাষায়, নিউরোজেনিক উচ্চ রক্তচাপের মূলে রয়েছে অবদমিত মানসিক বিষন্নতা। তিনি দেখেছেন এদের মধ্যে জীবনের প্রথম দিকে থাকে আঘাত, অত্যাচার বা নির্যাতনের ইতিহাস। বাহিরে তারা শান্ত ও তৃপ্ত, দেখতে লাগলেও অন্তর্দহনের জ্বালা তাদের পুড়িয়ে মারে। ডা. ম্যান তেমন একজন রোগীর চিকিত্সার কথা বলেছেন, তার ২০ বছর বয়স থেকে ছিলো উচ্চ রক্তচাপ। পারিবারিক চিকিত্সকের পরামর্শে তিনটি ওষুধে বেশ ভালো চলছিলো চিকিৎসা। ৪০ বছর বয়সে মাঝে মাঝে রক্তচাপ চেক করে দেখা গেলো, উচ্চ রক্তচাপ বেশি হয় মাঝে মাঝে খুব বেশি। ব্যবস্থাপত্রের ওষুধগুলোর মাত্রা বাড়লেও কাজ হলো না। অনেক ভেবে চিন্তে ওষুধ দিলেন ডা: ম্যান। ওষুধের সংখ্যা কমলো। ব্যবস্থাপনা ভালো হলো। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম হলো। তবে বেশিরভাগ রোগীদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন নেই। ইন্টানিস্ট বা পারিবারিক চিকিৎসকই যথেষ্ট।


এক বা একাধিক ওষুধ নিম্ন মাত্রায় শুরু করলে, যেমন ডাইইউবেটিক স্বাভাবিক চাপ অর্জনের জন্য ওষুধ ও ওষুধের মাত্রার মধ্যে তারতম্য ক্রমে ক্রমে করা যেতে পারে। ১০-১৫ শতাংশ রোগী যাদেরকে তিন রকম ওষুধ দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এদের জন্য বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্রয়োজন হয়।


উচ্চ রক্তচাপের পেছনে অনেক সময় থাকে অন্তনির্হিত অন্য কোনও রোগ যার চিকিৎসা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। চার বা পাঁচটি ওষুধ লাগা উচিত নয়। যদি লাগে তাহলে তা প্রশ্নের বিষয়।