ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন সুন্দরবন

দেখা হয় নাই June 26, 2017 1,505
ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন সুন্দরবন

ভ্রমণ পিপাসু মানুষ একটু সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে নতুন দিগন্তের খোজে। যারা সবুজ অরণ্য আর পুরাকৃতি আর সমুদ্রের মন মাতানো ঢেউ পাড়ে আছড়ে আছড়ে পড়া শব্দের খোজে ছুটে চলে একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। তাদের যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাতক্ষীরা।


বাংলাদেশ নামের ব’দ্বীপের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমের ১৯৮৪ সালে জন্ম নেওয়া জেলারটির পাশ্চিমে জুড়ে রয়েছে ২৭৮ কিলোমিটার ভারতীয় সীমান্ত। এর মধ্যে ১৩৮ কিলোমিটার স্থল ও ১০০ কিলোমিটার জলসীমা। দক্ষিণপাশে রয়েছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর।


যেখানে আসলে যেকোন পর্যটকের নজর কাড়ে। এর পাশাপাশি সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র এর মধ্যে হলো আকাশলীন, উড়াল উড়াল মন, বরষা রিসোর্ট অ্যান্ড টুরিজম, কারাম মোরা ম্যানগ্রোভ ভিলেজ, জোয়ার ইকো কটেজ ইত্যাদি।


এছাড়া রয়েছে মোজাফফর গার্ডেন, মাইচম্পার দরগা, ভোমরা স্থলবন্দর, সাতঘরিয়া জোড়া মন্দির, .. হাড়দ্দাহ সীমান্ত, লিমপিড গার্ডেন, ঐতিহাসিক বনবিবি তলা(দেশের অন্যতম বড় বঢগাছ), দেবহাটা জমিদার বাড়ি, রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যাটন কেন্দ্র, সীমান্তের ইছামতি নদীর তীরে টাকীর ঘাট, ঐতিহাসিক তেঁতুলিয়া জামে মসজিদ, নলতা রওজা শরীফ, সোনাবাড়িয়া মঠ মন্দির, রাজা প্রতাপাদিত্যের জাহাজঘাটা, শ্যামনগর জমিদার বাড়ি, ঐতিহাসিক গির্জা।


পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে আসা পর্যটকের মন কাড়ে সবুজের সমরোহ। সেই সাথে নীল আকাশের কোলে সাদা মেঘের ভেলা, দখিনা বাতাসে দেহ মন শীতল করা, রাতের গায়ে জোনাকির আলোয় সাগর পাড়ে তারার মেলা আর তটিনীর মৃদু ছন্দে কাব্যিক আবেশে মানসিক প্রশান্তির এক অবারিত দুয়ার পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জ। প্রকৃতির এই অরূপ রাজকন্যা সুন্দরবনের যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই যেনো সুন্দরের আগুন।


গাছের পাতা উপর সবুজের সমরোহ আর সুন্দরবনের বুক চিরে বয়ে যাওয়া খোল পেটোয়া কালিঞ্চি নদির বুকে রূপালী চাঁদের মুঠো মুঠো আলোয় শুধু চোখই জুড়াবে না, এমনই আবেশে প্রকৃতির এ নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাতছানি দেয় সুন্দরবন।


প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নৈসর্গিক লীলাভূমি অফুরন্ত সম্পদের চারণভূমি পৃথিবী শ্রেষ্ঠ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তালিকায় নিঃসন্দেহে সেরা।


বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৬ হাজার ১৭ বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবনে রয়েছে হাজার খানিক নদ-নদি। সেখানে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ, ৩৭ প্রজাতির চিংড়ি, ৩৩৬ প্রজাতির শামুক ও ঝিনুক ১৬ প্রজাতির কাঁকড়া ৭ প্রজাতির কাছিম, ১০ প্রজাতির ডলফিন এবং ৩ প্রজাতির তিমি, ৫ প্রজাতির লবস্টার পাওয়া যায়। তাছাড়া ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণি ও ৩৩৫ প্রজাতির গাছপালায় শোভিত সুন্দরবন।


বনবিভাগের ২০১৩ সালের তথ্য অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৪৪০টি। তন্মধ্যে ৪১৯টি প্রাপ্ত বয়স্ক, ২১টি বাচ্চা। ১২১টি পুরুষ, এবং ২৯৮টি স্ত্রী। হরিণের সংখ্যা ৮০-৮৫ হাজার। কুমির ২০০-২৫০ এবং বানরের সংখ্যা ৪০-৫০ হাজার। আরো আছে নাম না জানা অসংখ্য বিচিত্র প্রাণি। সাগর বক্ষে জেগে ওঠা নয়নাভিরাম দুবলার চরে গড়ে উঠেছে বিশাল শুটকি পল্লী।


পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা আকষর্ণীয় স্থান কলাগাছিয়া, মান্দারবাড়িয়া (মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত), পুটনি আইল্যান্ড (বিবিরমেদে) লতাবেকী, মুন্সিগঞ্জ, কালিরচর (বঙ্গবন্ধুর চর), দৈবেকী, কালিরচর, পুষ্পকাটি, নোটাবেঁকী, জলঘাটা, কাকাদোবেকী প্রভৃতি। অপরূপা সুন্দরবন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে সব সময়।