খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে নিন

লাইফ স্টাইল June 21, 2017 1,053
খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে নিন

জীবনের তাগিদে বেঁচে থাকার জন্য খাবার খেতে হয় আমাদের। তাই বলে খাবার খেলাম অর শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠল, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।


তাছাড়া খাবার খাওয়ার একটা ধরন আছে, তা না মানলে যতই পেট পুরে খান না কেন, শরীরের কোনো উপকারেই লাগে না। উল্টো আরো দেহের ক্ষয় হয়।


পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ জানেই না কীভাবে খাবার খেতে হয়। যে কারণেই অনেকে নানাবিধ পেটের রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেই সঙ্গে শরীরে দেখা দেয় পুষ্টির অভাব।


তাই খাবার খাওয়ার সময় কী কী নিয়ম মেনে চলা উচিত, সে সম্পর্কে জ্ঞান থাকাটা জরুরি। নইলে কিন্তু বিপদ!


আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, খাবার খাওয়ার সময় কিছু বিষয়ে নজর রাখা জরুরি। এমনটা করলে খাবার ঠিক মতো হজম হবে।


ফলে পেট খারাপ ও শরীরের পুষ্টির অভাব হওয়ার আশংকা একেবারেই থাকবে না। নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকাও কমে যাবে।


নিম্নে খাবার খাওয়ার সঠিক নিয়মগুলি আলোচনা করা হলো;


* খাবার খাওয়ার সময় ততক্ষণ পর্যন্ত খাবার চিবতে হবে, যতক্ষণ না তা মিহি পেস্টে পরিণত হচ্ছে। যখন দেখবেন এমনটা হয়ে গেছে তখনই গিলবেন, তার আগে নয়।


* টিভি দেখা বা কোনও কাজ করার সময় খাবার খাবেন না। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, মন দিয়ে খাবার না খেলে শরীরের কোনও উপকারে আসে না। বরং এমনটা করলে নানাবিধ ক্ষতি হওয়ার আশংকা বাড়ে।


* খেতে খেতে কথা বলতেও মানা করেন অনেক চিকিৎসক। এমনটা করলেও শরীর খারাপ হয়। মোট কথা মনোযোগ সহকারে খাবার খেতে হবে।


* খাবার খাওয়ার আগে ভুলেও ঠাণ্ডা পানি খাবেন না। এমনটা করলে হজম প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হবে। ফলে বদ-হজম, গ্যাস-অম্বল, পেটে অস্বস্তি প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়ার আশংকা বৃদ্ধি পায়।


* খেতে খেতে কোল্ড ড্রিঙ্ক খাওয়া একেবারেই চলবে না। কারণ এমনটা করলে হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা হবে। ফলে খাবার ঠিক মতো হজম না হওয়ার কারণে দেখা দেবে বহু সমস্যা।


* তাড়াতাড়ি খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। বরং খাওয়ার সময় মনকে শান্ত রেখে থেমে থেমে খাবার গেলা স্বাস্থের জন্য ভালো। এমনটা করলে হজম ক্ষমতার যেমন উন্নতি ঘটে, তেমনি খাবারে থাকা পুষ্টি ঠিকমতো শরীর দ্বারা শোষিত হয়।


* খাবার খাওয়ার পর মনে করে একটু বসে নেবেন, তারপর কাজ শুরু করবেন বা অফিসে রওনা দেবেন। দ্রুত (নাকে-মুখে) খাবার খেয়ে অফিসে বেরিয়ে পড়ার অভ্যাস ছাড়ুন। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে স্টমাকের এক তৃতীয়াংশ যতক্ষণ না ভরছে ততক্ষণ পর্যন্ত তাড়াহুড়ো করে খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।


* ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ এবং ডিনারের মাঝে যেন কম করে ৩-৪ ঘণ্টার ব্যবধান থাকে। কারণ যে কোনও খাবার ঠিক মতো হজম হতে এ সময়টা লাগে। তাই ৩-৪ ঘণ্টার আগে বারে বারে খাবার খেলে পেট খারাপ হওয়ার আশংকা বাড়ে।


* সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত আমাদের হজম ক্ষমতা খুব ভালো থাকে। যেই না অন্ধকার হতে শুরু করে, আমনি ঘরির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হজম শক্তিও কমে যেতে শুরু করে। সেই কারণেই তো দুপুর পর্যন্ত ভারি খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। এর পর থেকে খাবার পরিমাণ কমিয়ে ফেলাটাই উত্তম।


* খাবার খাওয়ার সময় পানির তাপমাত্রার যেন স্বাভাবিক থাকে। বেশি ঠাণ্ডা পানি পানে হজমে সহায়ক অ্যাসিডগুলি ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। ফলে বদ-হজমসহ আরও সব পেটের সমস্যা দেখা দেয়ার আশংকা বাড়ে।


* যাদের খুব খিদে পায়, তারা অল্প অল্প করে বারে বারে খেতে পারেন। তবে প্রতিটি খাবার খাওয়ার মধ্যে যেন কম করে ৩ ঘণ্টার ব্যবধান থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখার চেষ্টা করবেন।


* ভারি কোনও খাবার খাওয়া আগে সুযোগ থাকলে অল্প করে আদা বা লেবু খেয়ে নেবেন। এমনটা করলে শরীরে পিত্তের ভারসাম্য ঠিক থাকবে।


আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, রাতের খাবার ৮টার মধ্যে সেরে ফেলা জরুরি। শুধু তাই নয়, রাতের খাবার হতে হবে হলকা এবং সহজপাচ্য। যাতে তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যেতে পারে।


এছাড়া আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, ভালোবেসে বানানো খাবার শরীরে পজেটিভ এনার্জির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে মন এবং মস্তিষ্ক চাঙ্গা হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, খিটখিটে বা অখুশি মন নিয়ে বানানো খাবার খেলে শরীর খারাপ হওয়ার আশংকা বাড়ে।