দান-সদকার উত্তম সময় মাহে রমজান

ইসলামিক শিক্ষা June 12, 2017 918
দান-সদকার উত্তম সময় মাহে রমজান

গরিব-দুঃখীদের জন্য সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করে সাওয়াব অর্জনের সর্বোত্তম সময় রমজান। অনেক গরিব-দুঃখী মানুষ আছেন, যারা সেহরি ও ইফতারে সামান্য খাবারও জোগাড় করতে হিমশিম খান।


বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজানে তাদের দুঃখ খানিকটা বেড়ে যায়। এ ধরনের মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি কর্তব্য। সদকা মানুষকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘পানি যেমন আগুনকে নিভিয়ে দেয়, নিশ্চয়ই তেমনি সদকাও কবরের আজাবকে নিভিয়ে (বন্ধ করে) দেয়। ’ (জামে তিরমিজি) তাই তো রাসুলে করিম (সা.) বলেন, তোমরা খেজুরের সামান্য অংশ সদকা করে হলেও নিজেদের জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)


অভাবী মানুষকে খাবার প্রদান করা একটি উত্তম সদকা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, এক লোক নবীজি (সা.)-কে প্রশ্ন করল, ‘ইসলামের কোন কাজটি উত্তম?’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘কাউকে খাবার খাওয়ানো...। ’ (সহিহ বুখারি)


অভাবী প্রতিবেশীকে ক্ষুধার্থ রেখে যে ব্যক্তি উদরপূর্তি করে খায়, রাসুলে করিম (সা.) তাকে কঠিন ভাষায় সতর্ক করেছেন।


এমনকি ‘সে মুসলমান নয়’—এমন কঠিন ভাষাও তিনি প্রয়োগ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সেই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে তার প্রতিবেশীকে ক্ষুধার্থ রেখেও পেট ভরে খায়। ’ (সুনান আল কুবরা)


অনেকে গরিব ও অসহায়দের জন্য দান-সদকা করলেও মা-বাবা অথবা পরিবারের সদস্যদের জন্য খরচ করতে উদাসীনতা প্রদর্শন করেন। তাদের ধারণা হলো—মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানের জন্য খরচ করলে তো আর সাওয়াব পাওয়া যাবে না। এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। মুমিনের পারিবারিক খরচও সদকা হিসেবে গণ্য হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাওয়াবের আশায় কোনো মুসলিম যখন তার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করে, তা সদকা হিসেবে গণ্য হয়। (সহিহ মুসলিম)


অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একটি দিনার তুমি জিহাদের জন্য খরচ করেছ, একটি দিনার দাসমুক্তির জন্য ব্যয় করেছ, একটি দিনার একজন নিঃস্বকে দান করেছ এবং একটি দিনার নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করেছ।


এগুলোর মধ্যে সাওয়াবের দিক থেকে সর্বাধিক বড় হলো, যা তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করেছ। (সহিহ মুসলিম)


সন্তানের জন্য ঈদের পোশাক কেনার সময় প্রতিবেশীর ছোট্ট শিশুর কথাও মনে রাখা উচিত, যার বাবা অসামর্থ্যের কারণে সোনামণির মুখে হাসি ফোটাতে পারেন না। গরিব প্রতিবেশীর ছোট্ট শিশুকে একটি জামা কিনে দিলে শিশুটির মুখে যে হাসি ফুটবে, তা আল্লাহ তাআলার আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।


রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বস্ত্রহীনকে কাপড় পরাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ রেশমি কাপড় পরাবেন।


যে ব্যক্তি কোনো ক্ষুধার্থ ব্যক্তিকে আহার করাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোনো তৃষ্ণার্তকে পানি পান করাবে, মহামহিম আল্লাহ তাকে জান্নাতের পবিত্র প্রতীকধারী শরাব পান করাবেন। ’ (আবু দাউদ)


ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোকে আল্লাহ তাআলা তার নিজের সেবার সঙ্গে তুলনা করেছেন। কেউ যদি তার সাধ্যমতো দুর্গত মানুষের সেবায় এগিয়ে আসে, সে যেন আল্লাহ তাআলারই সেবা করল। বিত্তশালীরা যদি আল্লাহর পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এই মানুষের মানবেতর জীবনযাপন দেখেও তাদের সাহায্যে এগিয়ে না এসে হাত গুটিয়ে বসে থাকে, তাহলে আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসিত হবে।