গরমে ভালোভাবে রোজা রাখার ১১ উপায়

সাস্থ্যকথা/হেলথ-টিপস June 9, 2017 720
গরমে ভালোভাবে রোজা রাখার ১১ উপায়

কয়েক বছর ধরে গরমের সময় রমজান মাস পড়ছে। এ জন্য রোজা রাখতে হচ্ছে গরমের সময়। এ সময় রোজা রাখার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল না রাখলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ও জটিলতা দেখা দিতে পারে।


মানবদেহের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ পানি। গরমে পানিশূন্যতা বেশি হয়। এ জন্য দেহের কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়, শরীরের পিএইচ (pH )-এর পরিবর্তন ঘটে। এ কারণে মানবদেহের স্বাভাবিক খাদ্য পরিপাকের ও হজমের এনজাইমগুলো নষ্ট হয়। এটি বিপাকের অস্বাভাবিকতা করে পেটে সমস্যা তৈরি করে। যেমন : পেটে গ্যাস, বদহজম, খাবারে অরুচি, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি।


অতিরিক্ত গরমে শরীর থেকে দরকারি পানি ও ইলেকট্রোলাইট (লবণ ও মিনারেল) বের হয়ে মারাত্মক পানিশূন্যতা হয়। এ থেকে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে শরীরে জমানো গ্লাইকোজেন শক্তির উৎস কমতে থাকে, শরীরে গ্লুকোজ সরবরাহ কমে যায়। এতে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্জকম নষ্ট হয়ে মনোযোগ কমে যেতে পারে।


গরমে ভালোভাবে রোজা রাখতে

১. গরমে পানিশূন্যতা বেশি হয়। এ থেকে রক্ষা পেতে ইফতার ও সেহরিতে বেশি করে তরল খাবার খেতে হবে। একসঙ্গে বেশি পানি পান না করে ইফতার থেকে সেহরির মাঝখানে একটু একটু করে বারবার পানি পান করতে হবে। এ ছাড়া শরীরে বেশি পানি ধরে রাখে এমন খাবার খেতে হবে। যেমন : লেবু, কমলা, শসা, কলা, তরমুজ, ডাবের পানি ইত্যাদি।


২. ইফতার ও সেহরিতে ভাজাপোড়া, বেশি মসলাযুক্ত খাবার খেলে পানি পিপাসা বাড়ে, ক্লান্তি ভাব তৈরি হয়। এ সময় আদর্শ, সুষম খাবার খান; প্রচুর পরিমাণে দেশি ফল, ফলের শরবত ও শাকসবজি খান।


৩. বেশি ঠান্ডা পানি দিয়ে ইফতার করবেন না। বেশি ঠান্ডা পানি রক্তনালি সংকোচন বাড়িয়ে হজমে সমস্যা করে, পানি পিপাসা বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রচণ্ড গরমে বরফঠান্ডা পানি বা শরবত পান না করে কম বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি বা শরবত পান করুন।


৪. ক্ষতিকর চর্বিজাতীয় খাবার সেহরিতে খাবেন না। কারণ, চর্বিজাতীয় খাবার শরীরে বেশি গরম তৈরি করে। এতে শরীর থেকে পানি বের হয়ে গিয়ে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। তাই উপকারী চর্বি, যেমন—সামুদ্রিক মাছ, অলিভ অয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল খেতে পারেন।


৫. সেহরিতে আমিষ/প্রোটিন খাবার খান। যেমন : ডিম, দুধ, মাছ, মুরগির মাংস, ডাল ইত্যাদি। এতে ক্ষুধা কম লাগবে এবং অনেকক্ষণ শক্তি থাকবে।


৬. চা, কফি, কোমল পানীয় খাওয়া যাবে না। এগুলো পানিশূন্যতা বাড়িয়ে তোলে।


৬. এ সময় অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, শুকনো ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এগুলো শরীরকে পানিশূন্য করে; ক্লান্ত ভাব তৈরি করে।


৭. কোনো সেহরি বাদ দেওয়া যাবে না। মাঝরাতে সেহরি না খেয়ে শেষ মুহূর্তে সেহরি খেতে হবে। এতে সারা দিন শরীরে শক্তি থাকবে।


৮. গরমে আরামের জন্য দিনে দুই থেকে তিনবার গোসল করতে পারেন। তবে বেশি বেশি গোসল করে আবার সর্দি লাগিয়ে ফেলবেন না। সুতির সাদা বা হালকা রঙের কাপড় পরুন। এতে শরীর ঠান্ডা থাকবে।


৯. গরমে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না। বাইরে বের হলে ছাতা বা ক্যাপ ব্যবহার করুন।


১০. ইফতার ও সেহরিতে গরম গরম খাবার খান। খাদ্য রান্না ও সংরক্ষণে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।


১১. রোজার দিনগুলোতে পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিন। এতে ক্লান্তি কম লাগবে।


লেখক : সহকারী অধ্যাপক, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার।