মাহে রমজান : অসুস্থ ও মুসাফিরের রোজার বিধান

ইসলামিক শিক্ষা June 2, 2017 960
মাহে রমজান : অসুস্থ ও মুসাফিরের রোজার বিধান

মাহে রমজানে রোজার বাধ্যবাধকতা, সুযোগ-সুবিধা বা ছাড় সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে না জানার কারণে অনেকে মারাত্মক অসুস্থতা নিয়েও প্রতিদিন রোজা পালন করে থাকেন।


ইসলামের বিধিবিধান অবগত হওয়া সত্ত্বেও কেউ যদি অসুস্থ অবস্থায় রোজা পালন করতে গিয়ে স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন করে, তাহলে তা সুস্পষ্টভাবে দেহ ও মনের ওপর জুলুম বা অত্যাচার করা হবে—এটা আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করেন। রুগ্ণ ব্যক্তির জন্য রোজা বা উপবাস খুবই স্বাস্থ্যহানিকর। সে ক্ষেত্রে উপবাসী হলে তার রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।


এ অবস্থায় রোজা থেকে তাকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে ইসলামের সুস্পষ্ট নীতি মোতাবেক তার বিকল্প পদ্ধতির বিধান দেওয়া হয়েছে। এ জন্য রমজান মাসে অসুস্থতার কারণে কিংবা ভ্রমণরত অবস্থায় রোজা রাখা কষ্টদায়ক হলে অনুরূপ সংখ্যক, অর্থাৎ যে কটি রোজা পালন করা সম্ভব হয়নি, তা অন্য সময়ে পালন করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সে রোজা রাখাও সম্ভবপর না হলে ফিদ্ইয়া হিসেবে গরিব-মিসকিনকে খাদ্যদানের মাধ্যমে তা পূরণের সুযোগ রয়েছে। সম্ভব হলে, অর্থাৎ কষ্টদায়ক না হলে রোজা পালন করাই বিশেষ কল্যাণকর।


ইবাদতের বিষয়ে শারীরিক সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে রুগ্ণ ও প্রবাসী মুসাফিরের জন্য রোজার বিধান যথেষ্ট শিথিল করা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোজাদারেরা যথাযথ খাবার গ্রহণ না করার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তা ছাড়া অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ ও অপর্যাপ্ত ঘুম দেহকে বিপাকে ফেলে দেয়। তাই অসুস্থ ও ভ্রমণরত ব্যক্তিদের রোজা পালন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের কেউ যদি অসুস্থ হয়ে যায় কিংবা কেউ যদি সফরে থাকে, সে ব্যক্তি সমপরিমাণ দিনের রোজা (সুস্থ হয়ে গেলে অথবা সফর থেকে ফিরে এলে) পরে আদায় করে নেবে। এরপর যাদের জন্য রোজা রাখা একান্ত কষ্টকর ব্যাপার বলে মনে হবে, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে। যে ব্যক্তি খুশির সঙ্গে সৎ কর্ম করে তার জন্য তা কল্যাণকর হয়। আর যদি রোজা রাখো তবে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পারো।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪)


রমজান মাসে গর্ভবতী নারী এবং দুগ্ধপোষ্য শিশুর মায়েদের জন্য রোজা পালন বাধ্যতামূলক নয়। আল্লাহ তাআলা গর্ভজাত ও নবজাত শিশুসহ মায়েদের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণের জন্য রোজা পালনের কড়াকড়ি শিথিল করেছেন। সুস্থ হলে বা সক্ষমতা অর্জন করলে পরবর্তী সময়ে অবশ্যই এ রোজা পূর্ণ করতে হবে। যেসব মা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান, তাঁরা রোজা রাখলে দুধের পরিমাণ কমে যায় বলে শিশু পর্যাপ্ত দুধ পায় না।


অন্যদিকে গর্ভবতী নারী রোজা রাখলে কষ্ট হওয়া ছাড়াও গর্ভজাত সন্তানের প্রয়োজনীয় পুষ্টিপ্রাপ্তি, শারীরিক গঠন ও বয়োবৃদ্ধিতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তাই যে নবজাতকের মা শিশুকে দুধ পান করান, তাঁর জন্য রোজা পালন করার বাধ্যবাধকতা পর্যন্ত শিথিল করে দেওয়া হয়েছে।


এ দৃষ্টিকোণ থেকে মসজিদের ইমাম, খতিব, আলেম সমাজ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা গর্ভবতী নারী এবং দুগ্ধপোষ্য শিশুর মায়েদের রোজা না রাখার পরামর্শ প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ মুসাফিরের ওপর থেকে চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের অর্ধেক রহিত করে দিয়েছেন এবং মুসাফির, স্তন্যদানকারিণী ও গর্ভবতী নারী থেকে মাহে রমজানের রোজা পালন করার বাধ্যবাধকতাও শিথিল করে দিয়েছেন।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ ও নাসাঈ)


অসুস্থ ব্যক্তি বলতে, রোজা রাখতে যার কঠিন কষ্ট হয় অথবা রোগ মারাত্মক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কোনো বিশেষ রোগব্যাধির উল্লেখ করে অসুস্থ ব্যক্তির রোজা কাজা করার নির্দেশের পরিধিকে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়নি। যেকোনো ধরনের রোগ যাতে রোজা রাখা তার জন্য দুরূহ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রের জন্য এ অনুমতি। প্রকৃতপক্ষে অসুস্থ ব্যক্তি যদি রোজা রাখার কারণে কোনো শারীরিক ক্ষতি বা মৃত্যুর আশঙ্কাবোধ করে, তাহলে এ অবস্থায় রোজা রাখবে না। সুস্থ হওয়ার পর কাজা আদায় করবে।


শুধু মনের ধারণায় অসুস্থতার অজুহাতে রোজা রাখা থেকে বিরত থাকা দুরস্ত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ বা নিজের পূর্ব অভিজ্ঞতা কিংবা কোনো লক্ষণ দ্বারা প্রবল ধারণা জন্মে যে, রোজা রাখলে ক্ষতি হবে, তখন রোজা ত্যাগ করা যাবে।


রাসুলুল্লাহ (সা.) সাবধান করে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাহে রমজানের এক দিনের রোজা কোনো (শরিয়ত অনুমোদিত) ওজর বা অসুস্থতা ব্যতীত ভঙ্গ করবে, সারা জীবনের রোজায়ও এর ক্ষতিপূরণ হবে না, যদি সে সারা জীবনও রোজা রাখে।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদ)


রমজান মাসে রোজা না রাখার জন্য অনেকেই বিভিন্ন অজুহাত খোঁজেন। বিশেষ করে, কারও যদি সামান্য অসুস্থতা থাকে, তাহলে তিনি রোজা না রাখার পেছনে সে বিষয়কেই তুলে ধরেন। অথচ সামান্য অসুস্থতা তো দূরে থাক, অনেক দীর্ঘস্থায়ী নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগেও রোজা রাখার ব্যাপারে কোনো বিধিনিষেধ নেই। আর সুস্থ অবস্থায় রোজা রাখা যে শরীরের জন্য উপকারী, তা বলাই বাহু