পবিত্র রমজানে জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

ইসলামিক শিক্ষা June 2, 2017 711
পবিত্র রমজানে জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

প্রত্যেক জুমার দিনই অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। পবিত্র রমজানের জুমার দিন হওয়ায় এর ফজিলত আরও অনেকগুণ বেশি।


পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জুমার দিনের বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।


কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, শপথ গ্রহ-নক্ষত্রের কক্ষপথবিশিষ্ট আকাশের। এবং প্রতিশ্র“ত দিবসের। এবং সেই দিবসের যে উপস্থিত হয় এবং যাতে উপস্থিত হয়। (বুরুজ-১-৩) এ আয়াতে শাহিদ- যে দিবস উপস্থিত হয় বলে জুমার দিনকে বোঝানো হয়েছে। আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জুমার দিনের শপথ করছেন। সুতরাং এতেই জুমার দিনের গুরুত্ব বুঝে আসে।


কারণ গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়েরই শপথ করা হয়। বিভিন্ন হাদিস শরিফেও জুমার দিনের অনেক ফজিলত ও তাৎপর্য বর্ণিত হয়েছে। একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সূর্য উদিত হয় এমন সব দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন। এদিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এদিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। আবার এদিনেই তাকে তা থেকে বেরও করা হয়েছে।


জুমার দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। (তিরমিজি) জুমার দিনে মৃত্যুবরণের বিশেষ ফজিলতও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যে মুসলমান জুমার দিনে বা রাতে মারা যায় আল্লাহতায়ালা তাকে কবর আজাব থেকে রক্ষা করেন।(তিরমিজি-১/১০৫)


হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত- হজরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যে মুসলমান জুমার দিবসে বা রাতে মারা যায় তাকে কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেয়া হয় এবং কিয়ামত দিবসে সে শহীদের মোহর লাগানো অবস্থায় উপস্থিত হবে। (শরহুস সুদুর : ২০৯) হজরত আতা ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত- হজরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, কোনো মুসলমান নর-নারী জুমার দিনে মৃত্যুবরণ করলে কবরের আজাব ও কবরের ফেৎনা থেকে মুক্তি পায়। এবং সে আল্লাহর সঙ্গে এমতাবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে তার কোনো হিসাব থাকবে না।


জুমার : ফজিলতগুলো দিবসে সে এমতাবস্থায় উপস্থিত হবে যে তার সঙ্গে সাক্ষীরা থাকবে। তারা তার জান্নাতের জন্য সাক্ষী দেবে। অথবা তার ওপর মোহর থাকবে। (শরহুস সুদুর : ২০৯) পবিত্র রমজানে মৃত্যুবরণকারীদের সম্পর্কেও বিশেষ ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।


যেমন একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যে মুসলমান রমজানে মৃত্যুবরণ করবে তার কবর আজাব হবে না। জুমার দিনে দোয়া কবুল হয় বলেও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আমর ইবনে আওফ আল মুযানী (রা.) থেকে বর্ণিত।


রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে কোনো বান্দা যদি সেই মুহূর্তে আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চায় তাহলে আল্লাহতায়ালা তাকে অবশ্যই তা দান করবেন। (তিরমিজি)


জুমার দিনের দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্তটি সম্পর্কে অন্য একটি হাদিসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, জুমার দিনের যে মুহূর্তে দোয়া কবুলের আশা করা যায় তোমরা সে মুহূর্তটিকে বাদ আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান কর। (তিরমিজি)


নইমাম আহমদ (র.) বলেন, জুমার দিনের দোয়া কবুলের মুহূর্তটি সম্পর্কে অধিকাংশ হাদিসেই বাদ আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের কথা উল্লিখিত হয়েছে। তবে সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ার পর থেকেও তা আশা করা যায়। (তিরমিজি) হজরত আওস ইবনে আওস থেকে বর্ণিত।


রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যে জুমার দিনে সকাল সকাল গোসল করে এবং (নিজ স্ত্রীকে) গোসল করায় তারপর ইমামের কাছে গিয়ে বসে চুপ কর মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে তার প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে রয়েছে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব। (তিরমিজি)


জুমার দিনের এমন অনেক ফজিলত ও তাৎপর্য বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত রয়েছে।


সর্বোপরি রমজানের প্রতিটি জুমার দিনের পূর্ণ ফজিলত অর্জনের জন্য সবার চেষ্টা করা উচিত। যাতে রমজানুল মোবারকের অফুরন্ত রহমত লাভ করে আমরা ধন্য হতে পারি।