মাহে রমজানের গুরুত্বপুর্ন ১১ টি আমল করার নিয়ম জানেন কী ?

ইসলামিক শিক্ষা May 30, 2017 1,101
মাহে রমজানের গুরুত্বপুর্ন ১১ টি আমল করার নিয়ম জানেন কী ?

রমযান মাসের মর্যাদা অনেক। তাই এ মাসে আমলের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। কুরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াতে এবং অনেক হাদীস শরীফে এ মাসের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। মাহে রমজানে আমল করলে আল্লাহ তায়ালা অধিক সাওয়াব দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন পবিত্র কোরআন মজিদে । মুমিনদের জন্য এটা নেক আমল করার উত্তম সময়।


যেসব আমল এই রমজানে করা যেতে পারে সেগুলো উল্লেখ করা হলো ।


আহলান সাহলান রমজানুল মোবারক


১. রোজা রাখা

রমজানের দিনের বেলার বিশেষ ফরজ আমল হল সওম বা রোজা। রোজা জীবনের সকল গুনাহ মুছে দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা ও তারাবিহ আদায় করবে, সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল।” (সহিহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস: ২২০১।)


২. বিশ রাকাত তারাবিহ পড়া

রমজানের রাতের বিশেষ আমল হল কিয়ামে রমজান তথা তারাবিহের নামাজ। এটি আল্লাহ তা’আলার অফুরন্ত রহমত ও মাগফিরাত লাভের অন্যতম উপায়। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে তারাবিহ আদায় করে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৭।)


৩. কুরআন মাজিদ তেলাওয়াত করা

এ মাসে অধিক পরিমাণে তেলাওয়াত করা উচিত। কারণ এ মাসের সঙ্গে কুরআনের সম্পর্ক অনেক গভীর। এ মাসেই কুরআন নাজিল হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে অনেক বেশি তেলাওয়াত করতেন। হাদিস শরিফে এসেছে, “হযরত জিবরাঈল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতেন এবং তারা একে অপরকে কুরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬।)


সুতরাং প্রত্যেকের উচিত, রমজান মাসে একবার হলেও কুরআন মাজিদ খতম করা। সালাফে সালেহিনের জীবনীতে দেখা যায়, তাঁরা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা প্রত্যেকেই রমজানে বহুবার কুরআন মাজিদ খতম করতেন।


৪. বেশি বেশি জিকির করা

রমজানে অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির করা উচিত। চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে সর্বদা কালিমা তাইয়্যেবা,সুবহানআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার পড়তে থাকা যায়। সকাল-সন্ধ্যা ও বিভিন্ন সময়ের মাসনুন জিকির ও দু’আসমূহ পড়া যায়। দরুদ শরিফও বেশি বেশি পড়া যায়।


৫. নফল নামাজ পড়া

অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ মাসে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া দরকার। কমপক্ষে বিভিন্ন সময়ের সাথে সম্পর্কিত নফল নামাজগুলো আদায় করা। যেমন-ইশরাক, চাশত, আওয়াবিন ও তাহাজ্জুদ। আসর ও ঈশার পূর্বে চার রাকাত সুন্নত এবং জোহর ও ঈশার পরের সুন্নত শেষে দুই রাকাত নফল পড়া। প্রতিদিন অন্তত একবার তাহিয়্যাতুল অযু ও দুখলুল মসজিদ পড়া। সাহরির জন্য উঠে দু’চার রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ অনায়াসে পড়া যায়।


৬. অধিক পরিমাণে দু’আ করা

রমজান দু’আ কবুলের মাস। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রোজাদারের দু’আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদিস: ৮৯৯৫।


সুতরাং এ মাসের রহমত, বরকত, মাগফিরাত, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের জন্য এবং পার্থিব বৈধ প্রয়োজনাদির জন্যও আল্লাহ তা’আলার কাছে বেশি বেশি দু’আ করা একান্ত কাম্য।


৭. তাওবা ও ইস্তেগফার করা

রমজান মুমিনের জন্য ক্ষমার সুসংবাদ নিয়ে আসে। যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও নিজের গুনাহসমূহ মাফ করাতে পারল না তার ওপর জিবরাঈল আ. ও দয়ার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ করেছেন। তাই জীবনের কৃত গুনাহের কথা স্মরণ করে বেশি বেশি তাওবা ইস্তগফার করা এবং আল্লাহ তা’আলার দরবারে ক্ষমা মন্জুর করিয়ে নেয়ার এটিই উত্তম সময়। বিশেষ করে ইফতার ও তাহাজ্জুদের সময় আল্লাহ তা’আলার দরবারে অধিক হারে ক্ষমা চাওয়া ও তাওবা করা উচিত।


৮. দান-সদকা করা

দান-সদকা সর্বাবস্থায় উৎকৃষ্ট আমল। তবে রমজানে তার গুরুত্ব ও ফজিলত আরো বেড়ে যায়। হাদিস শরিফে আছে, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল মানুষের চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন। রমজান মাসে তাঁর দানের হস্ত আরো বেশি প্রসারিত হতো।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯০২।)


তাই এ মাসে বেশি বেশি দান করা, নফল সদকা যথাসাধ্য বাড়িয়ে দেয়া, অনাদায়ী যাকাত আদায় করা, গরিবদের সহায়তা করা এবং দ্বীনের প্রচার প্রসারে অংশগ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ আমল।


৯. রোজাদারকে ইফতার করানো

রোজাদারকে ইফতার করানোও অনেক বড় ফজিলতপূর্ণ আমল। রাসুলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে ওই রোজাদারের অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে। তবে রোজাদারের সওয়াব সামান্য পরিমাণও হ্রাস করা হবে না।” (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৮০৭)


১০. ইতিকাফ করা

রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নত। এটি রমজানের যাবতীয় ফায়দা-ফজিলত, রহমত, বরকত ও মাগফিরাত লাভ করা এবং শবে ক্বদর পাওয়ার সহজ সহজ উপায়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মাদানি জীবনে প্রতি বছর ইতিকাফ করেছেন। সাহাবিরা তাঁর সাথে ইতিকাফে শরিক হয়েছেন।”


১১. শবে ক্বদর অন্বেষণ করা

হাজার রজনী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ রাত হল শবে ক্বদর। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে বিশেষত শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে শবে ক্বদর অন্বেষণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। সুতরাং ইবাদত-বন্দেগীর সাথে এ রাত্রী জাগরণ করা উচিত। সব ধরনের গুনাহ, বিদআত ও ভুল আমল থেকে বিরত থাকা চাই।


আল্লাহ তাআলা সবাইকে উপরোক্ত আমলগুলোর মাধ্যমে রমজানকে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত করে তোলার তাওফিক দান করুন। আমিন।