আবশ্যকীয় যেসব বিষয়ের কমতি থাকলে দিনভর রোজা রাখাই বৃথা হতে পারে আপনার

ইসলামিক শিক্ষা May 26, 2017 1,469
আবশ্যকীয় যেসব বিষয়ের কমতি থাকলে দিনভর রোজা রাখাই বৃথা হতে পারে আপনার

আজ শুক্রবার চন্দ্রমাসের ২৯ শাবান। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে শনিবার বা রবিবার (২৭ বা ২৮ মে) আরবি রমজান মাস শুরু হবে। সারা বিশ্বের মুসলমানগণ রমজান মাসের ১ তারিখ থেকে রোজা পালন শুরু করেন। রোজা শব্দটি ফারসি। এর আরবি পরিভাষা হলো সওম এবং এর বহুবচন হলো সিয়াম। সওমের অর্থ হলো বিরত থাকা, পরিত্যাগ করা।


অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার (নিয়ত সহকারে) থেকে বিরত থাকা। রোজা রাখা প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান নরনারীদের জন্য ফরজ। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন “হে মুমিনগণ, তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি, যাতে তোমরা আল্লাহ ভীরু হতে পারো, পরহেজগার হতে পারো” (সূরা বাকারা)। রমজানের সাথে পাক কোরআনের নিগূঢ় সম্পর্ক রয়েছে।


পথ প্রদর্শক ও হেদায়েতের বিষদ বর্ণনা সহ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য পাক কোরআন নাজিল করেছেন রমজান মাসের ২৭শে রমজান কদরের রাতে। আল্লাহ পাক কোরআনে ঘোষণা করেছেন “নিশ্চয়ই আমি কদরের রজনীতে কোরআন নাজিল করেছি।


আপনি জানেন কি? কদরের রজনী কি? কদরের রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ অবতীর্ণ হন, জিবরাইল (আঃ) সহ তাদের রবের নির্দেশে ও অনুমতিক্রমে সব বিষয়ে শান্তির ফয়সালা নিয়ে তা ঊষার উদয় পর্যন্ত” (সূরা-কদর আয়াত ১-৫)। এরপর থেকে হজরত জিবরাইল (আ.) ধীরে ধীরে আল্লাহর হুকুমে তেইশ বছরে পাক কোরআন পৌঁছিয়ে।


রমজান মাসের আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো আল্লাহ এ মাসটিতে অধিকাংশ ওহি, সহিফা ও আসমানি কিতাব মানুষের হেদায়েতের জন্য তাঁর (আল্লাহর) প্রেরিত নবী রাসুলগণের প্রতি পাঠিয়েছেন। হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর সহিফা রমজানের ১ তারিখ, হযরত মুসা (আ.) এর উপর তাওরাত রমজানের ৬ তারিখ, হযরত দাউদ (আ.) এর উপর জাবুর রমজানের ১২ তারিখ, হযরত ঈসা (আ.) এর উপর ইঞ্জিল রমজানের ১৮ তারিখ, সর্বশেষ আসমানি কিতাব পাক কোরআন আখেরি নবী হযরত মোহাম্মদ (দ.) উপর পাঠিয়েছেন রমজানের শবে কদরের রাতে।


মাহে রমজানে শেষ রাতে সেহেরি খেয়ে রোজার নিয়ত পড়ে সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকার মধ্যেই রোজার সফলতা নয়।


পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ অবশ্যই পড়তে হবে। সময় ও সুযোগ মত পাক কোরআন তেলোয়াত করা খুবই সওয়াবের কজ। এর সাথে সাথে নিজেদের নফছকে লোভ লালসা, হিংসা বিদ্বেষ, পরনিন্দা, ঝগড়া ফেসাদ, অন্যকে ঠকানো, কাজে ফাঁকি দেয়া, কুৎসা রটানো, কুচিন্তা করা মোটকথা সবরকম মন্দ ও নিন্দনীয় কাজ থেকে নিজেদের রক্ষা করার মধ্যেই রোজার সফলতা।


আমরা ব্যক্তিগত জীবনে অনেকে ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে জড়িত। এদের মধ্যে সিংহভাগ ব্যবসায়ীদের দেখা যায় রমজান মাস আসার আগে থেকে মালামাল মজুদ করতে শুরু করে দেন।


সাথে সাথে মালামালের দামও বাড়াতে শুরু করে দেয় যা ধর্মীয়ভাবে গর্হিত কাজ। এ ব্যাপারে হাদিসে সতর্ক করে বলা হয়েছে “পণ্যদ্রব্য আটক (মজুদ) করে অধিক মূল্যেবিক্রয়কারী অবশ্যই পাপী (মিসকাত)।


হাদিস শরীফে এরকম অনেক সাবধানবাণী রয়েছে ব্যবসায়ীদের জন্য। অশ্লীল বাক্য, অন্যের ক্ষতির চিন্তা, ফ্যাসাদ সৃষ্টি সহ সকল প্রকার অনৈতিক কর্মকা- পরিত্যাগ করা প্রত্যেকের উচিত। প্রিয় নবী রাসুল (দ.) ইরশাদ করেছেন “ রোজার দিনে কেউ যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং শোরগোল না করে। তার সঙ্গে কেউ ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হলে সে যেন (অধৈর্য্য না হয়ে) বলে আমি রোজাদার ” (বুখারি)।