লিউকোরিয়া কেন হয়, করণীয়

সাস্থ্যকথা/হেলথ-টিপস May 21, 2017 676
লিউকোরিয়া কেন হয়, করণীয়

লিউকোরিয়া বা সাদাস্রাব নারীদের খুব সাধারণ একটি সমস্যা। একে শ্বেতপ্রদরও বলা হয়।


এটা আসলে রোগ নয়, উপসর্গ। আবার অনেক ক্ষেত্রেই এটা কোনো রোগ ছাড়া এমনিতেই হতে পারে। আবার বিশেষ কোনো রোগের কারণেও হতে পারে।


কী কারণে হয়?

• শুরুতেই বলেছি, সাদাস্রাব বা লিউকোরিয়া কারণ ছাড়াই হতে পারে। ডাক্তারি ভাষায় একে বলে ফিজিওলজিক্যাল। শরীরের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের কারণে লিউকোরিয়া হতে পারে। জন্মের পরপর কন্যাশিশুদের লিউকোরিয়া হতে পারে। এটা হয় মায়ের শরীর থেকে পাওয়া ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে। প্রাপ্ত বয়সে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণের সময়ও লিউকোরিয়া হতে পারে।


• দুর্বল স্বাস্থ্য, অপুষ্টি, ভিটামিন, প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের অভাব, রক্তশূন্যতা, কিডনির অসুখ, যক্ষ্মা, বিষণ্ণতা ইত্যাদি কারণেও লিউকোরিয়া হতে পারে।


• জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, কপারটির কারণেও লিউকোরিয়া হতে পারে।


• জীবাণুজনিত কারণে লিউকোরিয়া হতে পারে। ট্রাইকোমানাল ভ্যাজাইনালিস, ক্যানডিডা এলবিকানস, নাইসেরিয়া গনোরি (গনোরিয়ার জীবাণু) ইত্যাদি জীবাণু এ জাতীয় লিউকোরিয়ার কারণ হতে পারে।


• ডায়াবেটিস, অ্যান্টিবায়োটিকের দীর্ঘকালীন ব্যবহার, মেনোপজ এসব জীবাণুর সংক্রমণ ও প্রকোপ বাড়ায়।


লক্ষণ

ফিজিওলজিক্যাল লিউকোরিয়ার ক্ষেত্রে সাদা শ্লেষ্মার মতো রস নিঃসৃত হয়। পরিমাণে কম হয়।


ট্রাইকোমানাস ভ্যাজাইনালিস নামক জীবাণুর কারণে হলে স্রাবের পরিমাণ বেশি হয়। স্রাব কখনো সাদা দইয়ের মতো, কখনো কিছুটা ঘন সবুজাভ বা হলুদাভ ক্রিম রঙের হয়।


ক্যানডিডা এলবিকানসের কারণে হলে জননাঙ্গে ইচিং হয়।


গনোরিয়ার জীবাণু দ্বারা হলে স্রাবে দুর্গন্ধ হয়।


সব ক্ষেত্রেই তলপেটে, কোমরে বা পিঠে ব্যথা হতে পারে।


শরীর দুর্বল, মাথা ঘোরা, খাবারে অরুচি ইত্যাদি উপসর্গও থাকতে পারে।


ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ ও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে।


চিকিৎসা

প্রথমেই রোগের কারণটি বুঝতে হবে। যদি কোনো রোগ ছাড়াই হয়, মানে যদি ফিজিওলজিক্যাল লিউকোরিয়া হয়, তাহলে ঠিকভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে এবং আশ্বস্ত করতে হবে।


ঋতুস্রাবের সমস্যা, অন্যান্য সমস্যা দূর করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।


অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে।


জীবাণুঘটিত কারণে হলে টিনিডাজোল, মেট্রোনিডাজোল গ্রুপের ওষুধ খেতে হয়। অনেক সময় অ্যান্টিফাংগাল ক্রিম, ভ্যাজাইনাল ট্যাবলেট ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। ক্ষেত্রবিশেষে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। বিবাহিত হলে স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই চিকিৎসা নিতে হয়।


পরামর্শ

ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। নিয়মিত ধোয়া অন্তর্বাস পরতে হবে। ১০০ ভাগ সুতি অন্তর্বাস হতে হবে।


কুসুম গরম পানি ও কম ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করতে হবে।


কোনোরকম সুগন্ধি স্প্রে ব্যবহার করবেন না।


পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত পানি খাবেন। খাবার তালিকায় যেন রসালো ফল, শাকসবজি থাকে।


লেখক : আবাসিক চিকিৎসক, বিএসএমএমইউ।