৭২ বছর পর প্রেমিকের কাছে পৌছলো প্রেমপত্র

সাধারন অন্যরকম খবর May 13, 2017 1,146
৭২ বছর পর প্রেমিকের কাছে পৌছলো প্রেমপত্র

বাহাত্তর বছর পর প্রেমিককে খুঁজে পেল এক প্রেমপত্র। এর মধ্যে পটোম্যাক দিয়ে গড়িয়ে গেছে অনেক পানি। পৃথিবীর সভ্যতায় এসেছে বিবর্তন। কিন্তু প্রেমপত্রের সেই চিরায়ত আকুতি অনুনয় হারিয়ে যায় নি। সেই প্রেমপত্রের কাহিনী অনলাইন সিএনএন তুলে ধরেছে এভাবে- নিউ জার্সির ওয়েস্টফিল্ড। সেখানে বাসার সংস্কার কাজ করছিলেন অ্যালেন কুক ও তার মেয়ে মেলিসা। এ সপ্তাহের কাহিনী এটা।


এক পর্যায়ে তারা সিলিংয়ের এক ফাঁকে একটি ফাটলের মতো দেখতে পান। সেখানে গোঁজা রয়েছে একটি খাম। তাতে ভরা হৃদয় নিঙরানো ভালবাসার কাহিনী।


অ্যালেন কুক বলেন, খামটি ছিল অনেক পুরনো আর হলুদ রঙের। এটা কখনো খোলা হয় নি। আমার জামাই যখন এটা পড়া শুরু করলো তখন অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। ওই চিঠির প্রেমিকা তার প্রেমিককে তাদের অনাগত সন্তানের বিষয়ে লিখেছিলেন। এ কাহিনীর শুরু ১৯৪৫ সালের। এটা নিয়ে হয়ে যেতে পারতো রহস্যময় ভালবাসার একটি সিনেমার কাহিনী।


১৯৪৫ সালের ৪ঠা মে ওই চিঠিটি ভার্জিনিয়া নামে এক নারী তার স্বামী রফ ক্রিস্টোফারসেনকে লিখেছিলেন। এটা ছিল টাইপ করা। ঘটনার সময় তার স্বামী ছিলেন নরওয়ের নৌবাহিনীর একজন নাবিক। খামটির ওপর লেখা ছিল বিলি না হলে প্রেরকের কাছে ফেরত পাঠান। এ সপ্তাহের আগে চিঠিটি কখনোই তার স্বামীর হাতে পড়ে নি। চিঠিটি হাতে পেয়ে অ্যালেনের মেয়ে মেলিসা ইন্টারনেটে খুঁজেতে থাকেন রফ ক্রিস্টোফারসেন নামে কাউকে। খুঁজতে থাকেন তার ফোন নম্বর। এক পর্যায়ে পেয়ে যান। তিনি ফোন করেন। ফোন ধরেন রফ ক্রিস্টোফারসেনের ছেলে। তিনি থাকেন ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারায়। রফ ক্রিস্টোফারসেনের ছেলের বয়স এখন ৬৬ বছর। তিনিই ফোন ধরেন।


এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, আমি তখন অফিসে ছিলাম। কেউ একজন আমাকে ফোন করলেন। তিনি আমার নাম নিয়ে এক রকম গোলকধাঁধায় পড়লেন। কারণ, আমার পিতার নাম আর আমার নাম একই। মেলিসা আমার কাছে জানতে চাইলেন আমি কোথায় বড় হয়েছি। আমি তাকে বললাম। এসব শুনে তিনি আমাকে চিঠির বিষয়টি বললেন। এভাবেই আমি তা খুঁজে পেয়েছি।


তার মা ভার্জিনিয়া যখন চিঠিটি লিখেছিলেন তখন জন্ম হয় নি তার ছেলে রফ ক্রিস্টোফারসেনের। তা সত্ত্বেও তাকে নিয়ে তার মা যেসব কথা লিখে গেছেন তা তার কাছে অত্যন্ত স্পেশাল।


এখন থেকে ৬ বছর আগে তার মা মারা গেছেন। তিনিই সেই ১৯৪৫ সালে তার স্বামীর উদ্দেশে ওই প্রেমপত্রখানি লিখে গেছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, আমি তোমাকে ভালবাসি রফ, যেমনটি আমি ভালবাসি সূর্য্যরে উত্তাপ। আমার জীবনে তোমার অর্থ এমনটাই। সূর্য্যই তো সব কিছুর নেপথ্যে। তার জন্যই তো আমি আবর্তিত হই।


সবচেয়ে আনন্দের কথা হলো এখনও ভার্জিনিয়ার স্বামী রফ ক্রিস্টোফারসেন বেঁচে আছেন। ছেলে ক্রিস্টোফারসেন চিঠিটি হাতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তার পিতা ক্রিস্টোফারসেনকে ফোন করেন। তার পিতার বর্তমান বয়স ৯৬ বছর। তিনি বসবাস করেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। তাকে ছেলে ক্রিস্টোফারসেন চিঠি পড়ে শোনান ফোনেই। ৭২ বছর পরে স্ত্রীর লেখা প্রেমপত্র পেয়ে তার বুকটা প্রসারিত হয়ে উঠেছে। আবেগে তিনি কেঁদেছেন।


ওই প্রেমপত্রে তিনি খুঁজে পেয়েছেন সেই কুসুম কুসুম ভালবাসার ঘ্রাণ।


তিনি বলেন, এতটা বছর পরেও আমার জন্য এমন বিস্ময় অপেক্ষা করছিল! এই চিঠিটি পেয়ে আমি ভীষণ খুশি। চিঠিটি এখনও টিকে আছে ভাবতেই আমার অবাক লাগে। আসল ভালবাসা একেই বলে। আমি ভার্জিনিয়ার স্পর্শ পাচ্ছি যেন। আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছি আমি।


চিঠি খুলে ছেলে ক্রিস্টোফারসেন কাঁদেন। মায়ের কথা মনে করে স্মৃতির ঝাঁপি আলগা হয়ে যায়। তিনি নিজেকে সংবরণ করতে পারেন না। অনেকটা কেঁদে তিনি বলেন, এই মা দিবসে মায়ের কথাগুলো আমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে কি অদ্ভুত রকম মানুষ ছিলেন আমার মা। তিনি আমাদের কতটা ভালবাসতেন! এর সঙ্গে তুলনা হয় না কিছুর!