ভয়-দুশ্চিন্তা বেড়ে গেলে কী করবেন

লাইফ স্টাইল May 2, 2017 784
ভয়-দুশ্চিন্তা বেড়ে গেলে কী করবেন

রাতের আঁধারে বা দিনের আলোয় যে কোনো সময় ভয়, দুশ্চিন্তা বা অ্যাংজাই গ্রাস করতে পারে আমাদের। এছাড়া আমরা যে কিসে ভয় পাবো, তা আগে থেকে জেনে যাওয়া একেবারেই সম্ভব নয়। তাই তো এক্ষেত্রে পূর্ব প্রস্তুতির কোনো সুযোগই থাকে না।


তবে বেশ কিছু সহজ নিয়ম আছে, যা মেনে চললে ভয়কে পিছনে ফেলে সুন্দর জীবনযাপন করা সম্ভব। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা একাধিক পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখেছেন ভীতি বা দুশ্চিন্তার কারণে গত এক দশকে একাধিক রোগের প্রকোপ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।


সেই সঙ্গে বেড়েছে এই সব রোগ সম্পর্কিত মৃত্যুর হারও। এখন তো পরিস্থিতি এমন জয়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে দেশে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন ভয় বা অ্যাংজাইটির শিকার হচ্ছেন।

তাই তো বলতেই হয় যে, এখন থেকেই যদি ভয়কে মন থেকে বের করে দেয়া না যায়, তাহলে আগামী দিনে কিন্তু বিপদ আরও বাড়বে!


▶ তাহলে আসুন জেনে নেয়া যাক ভয়ভীতিকে জয় করার কৌশল:


ভয়কে চিনুন: নিজের প্রতিপক্ষকে যত চিনবেন, তত তাড়াতাড়ি তাকে হারাতে পারবেন। তাই কিসে আপনি ভয় পান সে সম্পর্কে জানাটা একান্ত প্রয়োজন। এছাড়া অ্যাংজাইটি আমাদের শরীরের জন্য মোটেই ভালো নয়। বরং এতে পেটের রোগ, ক্রনিক শ্বাসকষ্ট, হার্টের রোগ এবং রক্তচাপের মতো রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়।


ভয়কে চিহ্নিত করুন: কখনও অফিসের কাজে ভুল হয়ে যাওয়ার ভয়, কখনও প্রিয়জনদের হারানোর ভয়। আবার কখন জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ভয়। এমন নানা ধরনের ভয়ের করণে আমাদের মন এবং শরীর সব সময়ই যেন কুঁকড়ে থাকে। আর এমনটা দীর্ঘ সময় চলতে থাকলে শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব পরতে শুরু করে। তাই কী কারণে ভয় পাচ্ছেন সেটি জানা খুব দরকার।


ই এফ টি: ভয়কে হারাতে প্রাচীন এই পদ্ধতিটির সাহায্য নিতে পারেন। কী এই ই এফ টি? ই এফ টি-এর পুরো নাম হল "ইমোশনাল ফ্রিডম টেকনিক"। যখনই মনে হবে ভয় লাগছে, তখনই আঙুলের ডগা দিয়ে শরীরে বিশেষ কিছু জয়গা, যেমন: মাথার মাঝখানে, ভুরুর উপরে, চোখের পাশে, চোখের তলায়, নাকের নিচে, থুতনিতে, ঘাড়ে এবং বুকে চেপে চেপে টিপতে থাকবেন। এমনটা করলেই দেখবেন নিমেষে ভয় পালিয়ে গেছে।


ভয় থেকে বাঁচুন: আমাদের মধ্যে অনেকেই ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব চিন্তায় থাকেন। সেই চিন্তা কখন যে দুশ্চিন্তায় এবং ধীরে ধীরে অ্যাংজাইটি বা ভয়ের আকার নেয়, আমরা তা বুঝে উঠতেও পারি না। তাই বর্তমানে বাঁচুন। এখন যেটা হাতে আছে, সেটা নিয়ে ভাবুন।


হাইপনোসিস: আমাদের মন এবং মস্তিষ্কে প্রতিনিয়ত খারাপ ভাবনা এবং ভাল ভাবনার মধ্যে লড়াই চলতে থাকে। যখন যখন খারাপ ভাবনা জিতে যায়, তখনই আমাদের মনে ভয় নিজের জায়গা করে নেয়। হাইপনোসিস পদ্ধতিটি হল, সব সময় ভাল কিছু ভাবতে হবে। যত ভালো ভাবনা দিয়ে আমরা আমাদের মন এবং মস্তিষ্ককে ভরিয়ে তুলতে পারবো, তত খারপ ভাবনা দূরে পালাবে, সেই সঙ্গে পালাবে ভয়ও।


ভয়কে বন্ধু বানান: যে কারণে ভয় পাচ্ছেন, সেই ভবনাটাকে প্রশ্রয় না দিয়ে ভাবুন এই ভয়ের করণে আপনার জীবনে কী কী ভাল হতে চলেছে। যেমন ধরুন অনেকে লোক সমাজে কথা বলতে ভয় পান। এক্ষেত্রে ভয়ের কথা না ভেবে ভাবতে থাকুন, যে সুযোগটা আপনি পেয়েছেন তা অনেকেই পায় না। সেই সঙ্গে নিজের মনের কথা হাজারো মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন আপনি।


ভয়কে লিখে রাখুন: যে বিষয়টি নিয়ে ভয় পাই, সেটা নিয়ে এতটাই ভাবতে থাকি যে ভয় থেকে বেরনোর পরিবর্তে দুশ্চিন্তার ঘেরাটোপে আটকে পড়ি। ফলে মন ভালো হওয়ার জায়গায় আরও খারাপ হতে শুরু করে। এক্ষেত্রে সহজ একটা পদ্ধতি বেশ কাজে আসে। কী সেই পদ্ধতি? এবার থেকে ভয় পেলেই কারণটা কাগজে লিখে রাখবেন। এমনটা করলে খারাপ চিন্তা আর আপনাকে জ্বালাবে না।


টিভি দেখুন বা বই পড়ুন: কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তার পরিবর্তে মনকে ভোলানোর চেষ্টা করুন। যখনই দেখবেন খারাপ চিন্তা মনকে কাবু করে ফেলছে, তখনই সিনেমা দেখবেন অথবা বই পড়বেন বা নিজের পছন্দের কোনো কাজে জড়িয়ে পরবেন। এমনটা করলেই দেখবেন ভয়ের কারণ থেকে দূরে সরে আসছে মন। যত মন আর ভয়ের মধ্যে দুরত্ব বাড়বে, তত আপনার শারীরিক এবং মানসিক অস্বস্তি কমতে শুরু করবে।


ডায়েট: বিশ্বাস না করলেও একথা ঠিক যে, আমরা কী খাবার খাচ্ছি তার সঙ্গে আমাদের ভয় পাওয়া বা না পাওয়ার সরাসরি যোগ রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে খাবারে উপস্থিত নানা উপাদান আমাদের শরীর এবং মনের ভারসাম্য বিগড়ে দেয় এমন ধরনের সমস্যাকে দূরে রাখে। তাই প্রতিদিনের ডায়েট ঝাল মশলা দেয়া ভাজা জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে না রেখে পরিবর্তে সবজি এবং ফল খাওয়া শুরু করুন।


ব্যায়াম: শরীরে জমতে থাকা নেগেটিভ এনার্জি বের করে দিতে যোগ ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। আসলে ব্যায়াম করার সময় আমাদের শরীরে এমন কিছু টক্সিনের ক্ষরণ বেড়ে যায় যে ভয় দুশ্চিন্তা সব দূরে সরে যায়।


প্রসঙ্গত, অনেক সময় নিজের থেকে ভয়কে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে চিকিৎসেকর পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।