শ্রমজীবী মানুষের খোঁজ অ্যাপে!

এপস রিভিউ May 1, 2017 2,195
শ্রমজীবী মানুষের খোঁজ অ্যাপে!

সকালে উঠেই দেখলেন বাথরুমের ট্যাপ থেকে পানি টপ টপ করে পড়ছে। ট্যাপের কল ডানে-বাঁয়ে ঘুরিয়েও কাজ হচ্ছে না।


আবার হঠাৎ করেই একটা ঘরের বাতি, ফ্যান কিছুই কাজ করছে না। হাতের কাছে এই কারিগরি কাজ করার কোনো কর্মীকে পাচ্ছেনও না। হাতের স্মার্টফোনের পর্দায় কয়েকবার আঙুল ছুঁয়েই যদি কারিগরি কাজের মানুষ পাওয়া যায়, তবে তো ভালোই হবে।


বৈদ্যুতিক, তালা, গ্যাস, রং, গাড়ির মিস্ত্রি থেকে শুরু করে চর্মকার, স্যানিটারি সেবাদাতা, ইন্টারনেট সেবাদাতা, লন্ড্রি, সংবাদপত্রের হকার, ডেকোরেটর, তাঁতি, বাসা বদলের জন্য শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন ‘ডিজিটাল মানুষ’-এ। কয়েকজন ছাত্র মিলে বানিয়েছেন এই অ্যাপ। শনিবার অ্যাপটির একজন উদ্যোক্তা ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পুরকৌশলের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. খন্দকার আলিফের সঙ্গে কথা হয়।


শুরুর কথা

শুরুটা গত বছরের ১ মে। ছুটির দিন। খন্দকার অলিওল আজম, খন্দকার আলিফ ও খন্দকার কাফি আনান—এই তিন ভাই বাসায় বসে গল্পগুজব করছেন। ‘তখনই মনে এল আজ তো মে দিবস। আমরা এত অ্যাপ বানাই, গেম বানাই, কিন্তু শ্রমিক ভাইবোনদের জন্য আমরা কি কোনো কিছু করছি? এর পরেই আমরা তিন ভাই শ্রমজীবী মানুষের একটি “ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম” বানানোর পরিকল্পনা করলাম।’ বললেন খন্দকার আলিফ।


কাজটা দু-তিনজনে করা সম্ভব না, তাই এই তিন ভাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হলেন সাজিদ হাসান, মোস্তাহিত আহমেদ ও নাজমুল আকাশ। শুরু হলো ডিজিটাল মানুষ গড়ার কাজ। আলিফ বলেন, ‘এটা শুধু একটা ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপস নয়, এটা আমাদের একটা স্বপ্নের প্ল্যাটফর্ম।’


অ্যাপটি যেভাবে কারিগরি মানুষ খুঁজবে

অ্যাপটিতে মোট ২২টি বিভাগ আছে। এই বিভাগগুলো থেকে দরকারি কাজের কর্মী খুঁজে পাবেন। ঢাকা শহরের ৮৪টি এলাকার কর্মীদের খুঁজে পাওয়া যাবে। আপনি যে এলাকায় থাকেন সেই এলাকা ‘লোকেশন’ হিসেবে নির্বাচন করতে হবে।


এরপর অ্যাপে চলে আসবে নির্দিষ্ট কাজের শ্রমজীবীদের তালিকা। সেখানে তাঁদের নাম, পরিচয়, তথ্য ও ফোন নম্বর পাবেন। ‘কল’ বোতামে চাপ দিলেই তাঁর কাছে ফোন যাবে।


আপনি তাঁর সঙ্গে কথা বলে সব বুঝিয়ে দিতে পারবেন। পারিশ্রমিকের ব্যাপারেও কথা বলে নিতে পারবেন। এরপর আপনার বাসায় এসে তিনি কাজটি করে দেবে।


কাজের মূল্যায়ন ও অভিযোগ

এই অ্যাপে আপনি কর্মীর কাজের মান সম্পর্কে রিভিউ দিতে পারেন। পরবর্তী সময়ে অন্য ব্যবহারকারীদের সুবিধা হবে এতে। কোনো কর্মীর কাজ বা আচরণ খারাপ হলে সে ব্যাপারে অভিযোগ গেলে ডিজিটাল মানুষের তালিকা থেকে তিনি বাদ পড়বেন।


যেভাবে তালিকা করা হয়েছে

‘বিভিন্ন এলাকা খুঁজে খুঁজে আমরা শ্রমজীবীদের তথ্য ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বুঝিয়েছি।


এক বছর ধরে আমরা এ কাজ করছি। যাঁরা যুক্ত হতে আগ্রহী, তাঁদের তথ্য এ তালিকায় যুক্ত করেছি।’ বললেন খন্দকার আলিফ। তথ্য সংগ্রহ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কাজে লাগানো হয়েছে। উদ্যোক্তারা টিউশন করে, গেম বানিয়ে, ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে যা আয় করেছেন, তার পুরোটাই এই অ্যাপের জন্য খরচ করেছেন।


আজ আসছে অ্যাপটি

আজ মে দিবসে ‘ডিজিটাল মানুষ’ অ্যাপ গুগল প্লেস্টোরে ছাড়া হচ্ছে। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম-চালিত স্মার্টফোনে অ্যাপটি ব্যবহার করা যাবে। নামানোর ঠিকানা: https://goo.gl/xiXZGR । এ ছাড়া www.digitalmanush.com ঠিকানার ওয়েবসাইটেও এই সেবা পাওয়া যাবে।


অ্যাপ নির্মাতারা মনে করছেন, এই অ্যাপ একই সঙ্গে শ্রমজীবী মানুষ ও সেবাগ্রহীতাদের কাজে লাগবে।