কানের লতিতে সংক্রমণে কী করবেন?

সাস্থ্যকথা/হেলথ-টিপস April 28, 2017 724
কানের লতিতে সংক্রমণে কী করবেন?

আপনার পাঁচ বছরের কন্যাটি কানে অলংকার পরার বায়না ধরলে আপনি হয়তো না করতে পারবেন না। তবে তখন একটি বিষয় সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। আর সেটি হলো, কানের লতিতে ইনফেকশন বা সংক্রমণ। কারণ, কানে অলংকার পরতে দেওয়া মানেই কানের লতিতে ঝুলতে থাকবে একের পর এক বিভিন্ন মেটাল দিয়ে তৈরি রকমারি অলংকার। এসব মেটালিক ইয়ার রিং একাধারে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করতে থাকলেই কারো কারো কানের লতিতে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।


বিশেষজ্ঞদের মতে, কানে মেটালের তৈরি অলংকার পরা মানেই কানের ত্বকে ব্যাকটেরিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো। কারণ, মেটালিক অলংকারের ঘর্ষণে কানের লতির ত্বকে ক্ষত হলে, সেই ক্ষতের ওপর সহজেই বাসা বাঁধতে পারে ব্যাকটেরিয়া। পরিণতিতে কানের লতিতে দেখা দেবে সংক্রমণ।


মেটালের অলংকার পরার কারণে সংক্রমণ হলে :

কানের লতির ইয়ার রিংয়ের চারদিকে লালাভ হয়ে থাকবে

আক্রান্ত স্থান থেকে কষ ঝরবে

স্থানটিতে ক্ষতের মতো থাকবে

একপর্যায়ে কিছু স্থানে বস্টি বা ক্রাস্ট তৈরি হবে। কানের লতির ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে হলে সঠিক লোক দিয়ে কানের লতি ফুটো করাতে হবে। এ জন্য বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে ডার্মাটোলজিস্ট বা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞকে দিয়ে কানের লতি ফুটো করানো ভালো। কানের লতি ফুটো করানোর কাজে জীবাণুমুক্ত ইয়ার রিং ব্যবহার করা ভালো। এই কাজটি চিকিৎসককে দিয়ে করানো উচিত এ কারণে যে, একজন চিকিৎসকই জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি ও জীবাণুমুক্ত পদ্ধতি প্রয়োগের ব্যাপারটি ভালো বোঝেন।

সংক্রমণ প্রতিরোধে

কান পরিষ্কার রাখুন

সদ্য ফুটো সলিউশন দিয়ে মুছে দিতে হবে


এছাড়া সদ্য ফুটো করা কানের লতিতে অ্যান্টিবায়োটিক মলম (যেমন : নিওবেক্রিন, নেবনল ইত্যাদি) লাগানো যেতে পারে

উল্লিখিত প্রক্রিয়াগুলো কানের লতি ফুটো করার প্রথম দু-তিন দিন অব্যাহত রাখতে হবে।


এরপর ফুটো করা স্থানটি সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে।


স্বর্ণ ব্যবহারই আসলে ভালো

আপনার কন্যাসন্তানের কানে খাঁটি মেটাল, যেমন : রূপা, স্বর্ণ ইত্যাদি ইয়ার রিং পরিয়ে দিন। অনেক লোক আছেন, যাঁদের নিকেলের প্রতি অ্যালার্জি। নিকেল একটি সহজলভ্য মেটাল।


এটি ব্যবহারে কানের লতিতে অ্যালার্জিজনিত কারণে ইনফেকশন দেখা দেয়। ২৪ ক্যারেট সোনার একটি ইয়ার রিং ব্যবহার করলে সেটি সত্যিকার অর্থে কানের ইনফেকশন প্রতিরোধে কাজে আসবে। ১০ থেকে ১৪ ক্যারেট স্বর্ণের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ নিকেল মেশানো থাকে। এতে সেগুলোতেও কানে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। তবে ২৪ ক্যারেট সোনাই খাঁটি, যা জুয়েলারি থেকে সহজেই সংগ্রহ করা যায়।


সংক্রমণের প্রথমেই

কানের লতিতে ইনফেকশন দেখা দিলে প্রথমে কানের অলংকারটি খুলে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিশুকন্যা হয়তো কানের অলংকার খুলতে রাজি হবে না। কিন্তু তারপরও একে খুলে ফেলতে হবে। কানের লতিতে ইনফেকশন থাকা অবস্থায় ইয়ার রিং পরে থাকাটা খুবই পরিতাপের বিষয়। কানের লতিতে ইনফেকশন থাকা অবস্থায় ইয়ার রিং পরে থাকলে ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে পড়ে। কাজেই কোনো না কোনোভাবে কানের লতি থেকে ইয়ার রিংটিকে দূরে রাখতে হবে। ইয়ার রিং বের করার পরে স্থানটি সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। কথামতো কাজ করলে দুই থেকে তিন দিনেই সংক্রমণ সারাতে শুরু করবে।


সংক্রমণ হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে প্রথমে কানের অলংকারটি খুলে রাখতে হবে। কানের লতিতে ইনফেকশন থাকা অবস্থায় ইয়ার রিং পরে থাকাটা খুবই পরিতাপের বিষয়।


সংক্রমণ থাকা অবস্থায় ইয়ার রিং পরে থাকলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে পড়ে।


কাজেই কোনো না কোনোভাবে কানের লতি থেকে ইয়ার রিংটিকে দূরে রাখতে হবে। ইয়ার রিং বের করার পর স্থানটি সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। কথামতো কাজ করলে দুই থেকে তিন দিনেই সংক্রমণ সারতে শুরু করবে।


সংক্রমণ হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড সলিউশন এবং অ্যান্টিবায়োটিক মলম এর আগে উল্লিখিত নিয়মানুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।


কানের লতির ইনফেকশন তীব্র হলে তখন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিকের সম্পূর্ণ কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।


উল্লিখিত উপায়ে কানের লতির সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। তবে কানের লতি ও কানে সংক্রমণ হলে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এমনকি কানের তরুণাস্থিকে নষ্ট করে কানের আকারে বিকৃতি ঘটাতে পারে। তাই কানের লতিতে সংক্রমণ হলে নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।


লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ।