অনর্থক প্রশ্ন করা নিয়ে সতর্ক করে যা বললেন আমাদের প্রিয়নবি!

ইসলামিক শিক্ষা April 27, 2017 933
অনর্থক প্রশ্ন করা নিয়ে সতর্ক করে যা বললেন আমাদের প্রিয়নবি!

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অসংখ্য আয়াতে নসিহত ও নির্দেশ পেশ করেছেন, তাঁরা যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর পরিপূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপন করে।


সাহাবায়ে কেরামকে আহলে কিতাবদের ব্যাপারে (ইয়াহুদি ও খ্রিস্টান) সতর্ক থাকতে বলেছেন, ‘তোমরাও ইয়াহুদিদের মতো তোমাদের রাসুলকে অবাধ্যতামূলক অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে বিরক্ত করো না। যে প্রশ্নে কুফরির আশংকা থাকে। এক পর্যায়ে মানুষ ঈমান হারা হয়ে যায়।


আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-


অর্থাৎ ‘তোমরা কি তোমাদের রাসুলকে সেরূপ প্রশ্ন করতে চাও, যেরূপ মুসাকে (আলাইহিস সালাম) করা হয়েছিল। এবং যে (প্রশ্ন) ঈমান তথা বিশ্বাসের পরিবর্তে (কুফরি) অবিশ্বাসকে গ্রহণ করে; নিশ্চিতভাবে সঠিক পথ হারায়।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১০৮)


উল্লেখিত আয়াতে বলা হয়েছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কার কুরাইশদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত দিতে লাগলেন, তখন মক্কার কুরাইশরা ঈমান গ্রহণের শর্তস্বরূপ তাঁকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাজিল করেন।


ইয়াহুদিরা তিলকে তাল করে এবং সূক্ষ্ন বিষয়ের অবতারণা করে মুসলমানদের সামনে নানা ধরণের প্রশ্ন উত্থাপন করতো।


সাহাবায়ে কেরামকে এ বলে উস্কানি দিতো যে, এটা জিজ্ঞেস করো, ওটা জিজ্ঞেস করো। তাই এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে ইয়াহুদিদের নীতি অবলম্বন থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করে দিয়ে এ আয়াত পেশ করেন।


আবার প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও মুসলমানদেরকে এ মর্মে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, তিলকে তাল করা বা অনর্থক প্রশ্ন করার প্রবনতা আগের উম্মতরা ধ্বংস হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা ইসলামের কোনো বিষয়েই তোমরা আহলে কিতাব তথা কুচক্রী মহলের ফাঁদে পা দিয়ো না।


ইয়াহুদি খ্রিস্টানরা বিশ্বনবিকে এভাবে শর্তারোপ করতো-

>> অবিশ্বাসীরা এ দাবি করলো যে, আপনি সাফা পাহাড়কে স্বর্ণে পরিণত করুন, তখন তিনি বললেন, এ পাহাড়কে স্বর্ণে রূপান্তরিত করা সম্ভব কিন্তু এ কথা মনে রেখ, যদি (তোমাদের আকঙ্ক্ষা মোতাবেক) পাহাড়কে স্বর্ণের পাহাড় বানানো হয় এবং তারপরও তোমরা নাফরমানি করবে; তোমাদের পরিণতি হবে বনি ইসরাইলের পরিণতির মতোই।


বনি ইসরাইলের আবেদন মোতাবেক আসমান থেকে খাবার আসার পরও যখন তারা কুফরি করলো তখন তাদেরকে শুকরে পরিণত করা হলো। (নাউজুবিল্লাহ)


>> আল্লামা বাগভি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ইয়াহুদিরা যখন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হয়ে বলেছিলেন, যেভাবে মুসা আলাইহিস সালাম তাওরাত নিয়ে এসেছিল, ঠিক তেমনি আপনি পবিত্র কুরআন আসমান থেকে একবারেই নিয়ে আসুন। তাদের এ কথার জবাবে আলোচ্য আয়াত নাজিল হয়।


>> কেউ কেউ বলেন, ‘পৌত্তলিকরা বলেছিল যে পর্যন্ত আপনি আসমানে আরোহন না করবেন আর আসমান থেকে কিতাব নিয়ে না আসবেন এবং নিয়ে আসা কিতাব আমরা যে পর্যন্ত না পড়বো। ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবো না। তাদের এ উক্তির জবাবে আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাজিল করেন।


পরিশেষে...

আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল যে বিষয়গুলোর ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেনি সেগুলোর পেছনে জোকের মতো লেগে না থাকাই ঈমানের দাবি। কারণ মাত্রাতিরিক্ত প্রশ্ন মানুষকে কুফরির দিকে নিয়ে যায়। তাই আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল মুসলিম উম্মাহকে যে নির্দেশগুলো প্রদান করেছেন; সেগুলো মেনে চলা এবং যে বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করা হয়েছে সেগুলো না করাই উত্তম।


আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অপ্রয়োজনীয় কথা বাদ দিয়ে কাজের কথার প্রতি মনোযোগ দেয়ার তাওফিক দান করুন। কুরআনের বিধান নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে তা যথাযথ পালন করে পরকালে মুক্তি লাভের তাওফিক দান করুন।


আমিন।