বর্ষায় চিকুনগুনিয়া জ্বর প্রতিরোধে করণীয়!

সাস্থ্যকথা/হেলথ-টিপস April 24, 2017 857
বর্ষায় চিকুনগুনিয়া জ্বর প্রতিরোধে করণীয়!

জ্বরের সঙ্গে শরীরের গিঁটে গিঁটে প্রচণ্ড ব্যথা। জ্বরটা কয়েক দিন থাকার পর ভালো হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ব্যথাটা থেকেই যাচ্ছে।


গত কয়েক দিনে এমন সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে যাচ্ছেন অনেকেই। চিকিৎসকেরা বলছেন, এগুলো চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ। ভাইরাসজনিত জ্বরটি এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। এতে মৃত্যুঝুঁকি নেই, তবে ভোগান্তি আছে। তাই চিকিৎসা নেওয়ার চেয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়াই ভালো। সচেতন হলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়া ঠেকানো সম্ভব।


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইইডিসিআরের প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, এডিস ইজিপ্টি ও এডিস অ্যালবোপিকটাস মশার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। মশাগুলো সাধারণত ভোরবেলা ও সন্ধ্যাবেলায় কামড়ায়। এই মশা পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। এ কারণে ঘর ও আশপাশে পানি যেন জমে না থাকে সেদিকে নজর দেওয়া দরকার। এ ছাড়া কামড় থেকে বাঁচতে জানালায় নেট লাগানো, প্রয়োজন ছাড়া দরজা-জানালা খোলা না রাখা, ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা ও শরীরে মশা প্রতিরোধক ক্রিম ব্যবহার করার পরামর্শ তাদের।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, এই রোগে আক্রান্তদের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। নেই কোনো টিকাও। অনেক ভোগান্তি থাকলেও মৃত্যুঝুঁকি নেই। জ্বর ও ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেলেই হবে।


রোগীকে প্রচুর পরিমাণ তরল যেমন পানি, শরবত ও স্যালাইন খেতে হবে। জ্বর সেরে যাওয়ার পরও কয়েক সপ্তাহ শরীরে ব্যথা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেন।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু ও জিকার মতো চিকুনগুনিয়াও এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। ১৯৫২ সালে তানজানিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ‘চিকুনগুনিয়া’ নামটিও এসেছে সেখানকার মাকোন্ডে নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা কিমাকোন্ডে থেকে, যার অর্থ গিঁটের ব্যথায় কুঁকড়ে যাওয়া। নামের মধ্যে রয়েছে রোগের মূল বৈশিষ্ট্য।


বাংলাদেশে রোগটির আগমন সম্পর্কে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলেন, ২০০৫-০৬ সালে ভারতে এই ভাইরাস দেখা যায়। তখন থেকে বাংলাদেশেও এটি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। ২০০৮ সালে রাজশাহীর পবা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম এই ভাইরাসের খোঁজ মেলে।


পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে ঢাকার দোহারে এই রোগ দেখা যায়। তিনি বলেন, শরীরের গিঁটে গিঁটে প্রচণ্ড ব্যথার সঙ্গে জ্বর, হাড়ের সংযোগস্থল ফুলে যাওয়া, মাংসপেশিতে ব্যথা, চামড়ায় লালচে দানা চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান লক্ষণ। সাধারণত জুন-জুলাইয়ে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তবে এবার বর্ষা মৌসুমের আগেই থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় এর সময়কাল খানিকটা এগিয়েছে। কারণ, বৃষ্টির জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে।