গরমের অসুখ থেকে পরিত্রাণের উপায়

সাস্থ্যকথা/হেলথ-টিপস April 22, 2017 706
গরমের অসুখ থেকে পরিত্রাণের উপায়

সারা দেশে এখন বইছে গরম হাওয়া। এ গরমে সুস্থ থাকা দায়! সুস্থ থাকার জন্য তাই অবলম্বন করতে হবে কিছু সাধারণ কৌশল; যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।


প্রচুর পানি পান করুন

গরমের দিনে এমনিতেই একটু বেশি পানি পান করা উচিত। কারণ এ সময় অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর পানিস্বল্পতায় ভোগে। তাছাড়া যারা কায়িক পরিশ্রম বেশি করেন এবং অনেকক্ষণ ধরে রোদে অবস্থান করেন তাদের ক্ষেত্রে বেশি পানি পানের ব্যাপারে বাড়তি আগ্রহ থাকতে হবে।


শরীরের পানি ও লবণ ঘাটতি মেটানোর জন্য মুখে খাওয়ার স্যালাইন গ্রহণ করতে হবে। শিশুরা নিজ থেকে পানি পান করতে ততটা আগ্রহী থাকে না। তাই শিশুকে এ গরমে পরিমাণমতো পানি অবশ্যই পান করাতে হবে, যাতে শিশুর শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা না দেয়।


পানিস্বল্পতা হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। গরমের সময় প্রস্রাব হলুদাভ বর্ণের হলে বুঝতে হবে শরীরে পানিস্বল্পতার সৃষ্টি হয়েছে। অন্য কোনো অসুখ বিশেষ করে হেপাটাইটিস বা জণ্ডিসের কোনো উপসর্গ না থাকলে প্রস্রাবের হলুদাভ রঙ থেকেই শরীরের পানিস্বল্পতা সম্পর্কে ধারণা করা যায়। প্রস্রাব হলুদাভ রঙের হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর পানি পান করতে হবে। যতক্ষণ না প্রস্রাবের রঙ স্বাভাবিক হবে ততক্ষণ এ পানি পান চালিয়ে যেতে হবে।


শরীর বেশি অসুস্থ হলে স্যালাইন পানি পান করা ভালো। তবে অন্য পানীয় পানে বিশেষ কোনো উপকার নেই। বিশেষ করে অ্যালকোহলযুক্ত বেভারেজ পান করলে শরীরে আরও বেশি পানিস্বল্পতার সৃষ্টি হয়। তাই পানিস্বল্পতা রোধ করতে গিয়ে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান করলে শরীর আরও বেশি পানি হারাবে।


চোখে ঠাণ্ডা পানির ঝাঁপটা দিন

প্রচণ্ড গরমে অনেকেরই চোখ জ্বালা করে। এ পরিস্থিতিতে চোখে ঠাণ্ডা পানির ঝাঁপটা দিলে আরাম লাগবে। পারলে কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা পরিবেশে বিশ্রাম নিতে হবে, পান করতে হবে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি।


শরীর থেকে দুর্গন্ধ দূর করতে পরিচ্ছন্ন গোসল

পরিচ্ছন্নতার জন্য গরমকালে দু’বার গোসল করা ভালো। দুর্গন্ধ দূর করতে বারবার সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ত্বকের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। তবে গোসলে বিশেষ ধরনের সাবান অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সোপ ব্যবহারে উপকার আছে।


ঘাম প্রতিরোধে ডিওডোরেন্ট

শরীরে ঘামজনিত দুর্গন্ধ দূর করার জন্যই ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করা হয়। আর অ্যান্টিপারসপিরেন্ট ঘাম তৈরিতে বাধা দেয়। ডিওডোরেন্ট ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে এবং ঘামকে বিশ্লেষণ করে। ডিওডোরেন্ট গোসলের পরপরই ব্যবহার না করে গোসলের কিছু সময় পর শরীর শুকনো ও ঠাণ্ডা করে তারপর ব্যবহার করুন। এতে ডিওডোরেন্ট দীর্ঘসময় কার্যকারিতা পাবে।


চোখের অস্বস্তি দূর করতে সানগ্লাস

গরমের শানিত রোদে চোখে অস্বস্তিবোধ হওয়াই স্বাভাবিক। পারলে এ অবস্থায় চোখে সানগ্লাস পরা যেতে পারে। সানগ্লাস চোখকে রোদের অস্বস্তি থেকে রেহাই দেবে।


খেতে হবে শাকসবজি ফলমূল

গরমের দিনে চর্বিযুক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো। চর্বি জাতীয় খাবারে শরীর আরও উত্তাপ লাভ করবে। ঘাম ও অস্বস্তি দুই-ই বাড়বে। চর্বির সঙ্গে অতিমাত্রায় চিনিযুক্ত খাবারও এড়িয়ে চলা স্বস্তিদায়ক। এ সময় নিয়মিত খাবারের তালিকায় যোগ করতে হবে ফলমূল ও শাকসবজি।


অ্যাজমা রোগীদের সতর্ক থাকতে হবে

অতিরিক্ত গরমে অনেকেরই অ্যাজমার সমস্যা তীব্র হয়। এ অবস্থায় অ্যাজমা রোগীরা যাতে গরমের অস্বস্তিকর পরিবেশের মুখোমুখি না হন সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসকের দেয়া চিকিৎসা নিয়মিতভাবে গ্রহণ করতে হবে; মেনে চলতে হবে উপদেশগুলো। এ সময় অ্যাজমার জন্য দেয়া শ্বাসনালি প্রসারক ইনহেলারটি হাতের কাছে রাখতে ভুলবেন না।


সূর্যের পোড়া এড়াতে সানস্ক্রিন

সূর্যের দাবদাহ থেকে ত্বককে রক্ষার জন্য শরীরের উন্মুক্ত অংশে সানস্ক্রিন ক্রিম মাখা যেতে পারে। সানস্ক্রিন প্রতি তিন ঘণ্টা অন্তর মাখতে হয়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সানস্ক্রিন বা সানব্লকার ক্রিম পাওয়া যায়। আমাদের দেশের জন্য এসপিএফ-১৫ শক্তিসম্পন্ন সানব্লকারই যথেষ্ট বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গরমে অনেকেরই ত্বক লালাভ হয়ে ওঠে। ত্বকে চাকা চাকা র‌্যাশও ওঠে অনেকের। এ র‌্যাশগুলো খুব চুলকায়। এ ধরনের র‌্যাশ ঠাণ্ডা পরিবেশে অর্থাৎ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকলে কমে যায় বা চলে যায়। অবস্থাটা এ রকম হলে বুঝতে হবে গরমে ত্বকের অতিসংবেদনশীলতার জন্য এমনটি হচ্ছে।


ফুড পয়জনিং থেকে বাঁচুন

পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় আমাদের খাবার ঠিক থাকে না। খাবারের অনিয়ম মানেই পেটের সমস্যা। ছোটখাটো পেটের সমস্যায় দু-একটা ওষুধ খেলেই সেরে যায়; কিন্তু যদি অসুখের নাম ‘ফুড পয়জনিং’ হয় তাহলে এত সহজে মেটে না এমনকি বিষয়টি ৪৮ ঘণ্টার বেশি যদি থাকে তাহলে প্রাণনাশের আশংকা পর্যন্ত দেখা যায়। তাই ‘ফুড পয়জনিং’ থেকে সাবধানে থাকুন। তবে কিছু বিষয় এড়িয়ে চললে ফুড পয়জনিংয়ের সমাধান সহজেই করতে পারবেন।


* এ ধরনের সমস্যা হলেই প্রথমেই ঘণ্টা ২-৩ পানি এবং কোনো ধরনের খাবার খাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিন।


* ঘণ্টা ২-৩ পর সোডা জাতীয় কিছু পানীয় খান। তবে সাধারণত যেভাবে এ জাতীয় পানীয় খান তার থেকে অন্যভাবে পান করতে হবে এ সময়। প্রথমে এ পানীয়তে ১ থেকে দুটি বরফ দেবেন এবং প্রতিটি সিপে অল্প পরিমাণে সোডা খান। একসঙ্গে বেশিমাত্রায় পানীয় খেলে সমস্যা কমার বদলে বেড়ে যাওয়ার আশংকা বেশি থাকে।


* অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার খিদে পাবে। এসময় খিদে পেলে হালকা এবং তরল জাতীয় খাদ্য খাবেন। অর্থাৎ স্যুপ, ওট মিল এই জাতীয় হালকা কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাদ্য এসময়ের জন্য আদর্শ।


* যতক্ষণ পর্যন্ত সুস্থবোধ না করছেন, দুগ্ধজাতীয় খাদ্য একদম খাবেন না। দুগ্ধজাতীয় খাদ্য এ সময় খেলে অ্যাসিডিটি হয়ে ‘ফুড পয়জনিং’ সাংঘাতিক রূপ নিতে পারে।


* এসময়ে কোনো ধরনের পেইনকিলার বা ওই জাতীয় ওষুধ একেবারেই খাবেন না। পেইনকিলার জাতীয় ওষুধে যে ধরনের ড্রাগ থেকে তা খুবই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে আপনার শরীরে।


অনেকেই মনে করে থাকেন বাইরের কেনা খাবার থেকে এ অসুখটি হয় এ ধারণা ভ্রান্ত। বাড়িতে রান্না করা খাবারের মধ্যে থেকে ‘ফুড পয়জনিং’ হওয়ার বিপুল আশংকা থাকে। তাই কিছু নিয়ম জেনে নিন যাতে বাড়ির খাবার থেকে কোনোভাবেই ‘ফুড পয়জনিং’ না হয়।


* মাঝে মধ্যেই নিজের রান্নাঘর, বাসনপত্র ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। বাসনের ময়লা থেকে অনেক সময় এ অসুখটি হওয়ার আশংকা থাকে। খেতে বসার আগে অবশ্যই সাবান বা লিক্যুইড সোপ দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেবেন।


* বাজার থেকে সবজি, ফল কিনে আনার পর সেগুলো ভালোভাবে ধুয়ে ১ থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে সযত্নে প্যাকেটে মুড়ে ফ্রিজের মধ্যে রেখে দেবেন। যত বেশি সময় কাঁচা সবজি বাইরে রাখবেন সবজি খারাপ হয়ে যাওয়ার আশংকা তত বেশি বেড়ে যায়।


* কাঁচা সবজি বা খাবারের থেকে রান্না করা খাবার নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখুন। কারণ কাঁচা খাবার থেকে জীবাণু রান্না করা খাদ্যের সঙ্গে মিশে খাবারটি নষ্ট করে দিতে পারে।


* রান্না করার সময় স্বাভাবিক তাপমাত্রায় খাবার তৈরি করুন। অতিরিক্ত গরম তাপে রান্না করা বা অত্যধিকবার খাদ্য ফোটানো একদিকে যেমন খাদ্যগুণ কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে খাদ্যটি নষ্ট করে দিতে পারে যা থেকে ‘ফুড পয়জনিং’ হওয়ার সব থেকে বেশি আশংকা থাকে।