রুদ্র বৈশাখে ত্বকের সুরক্ষা

রূপচর্চা/বিউটি-টিপস April 22, 2017 736
রুদ্র বৈশাখে ত্বকের সুরক্ষা

বয়স বেড়ে গেলেই কি শরীরের ত্বকে ভাঁজ পড়ে এবং তিনি বুড়িয়ে যান? আমাদের ত্বককে বেশি বুড়িয়ে দিচ্ছে সূর্যালোক। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি যে কারও ত্বকের দারুণ ক্ষতি করে। এর ফলে ত্বকে শুধু ভাঁজই পড়ে না, ত্বককে বিবর্ণ করে তোলে এবং ত্বকের ক্যান্সার সৃষ্টি করে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি।


ত্বকের কোষগুলো মরে গিয়ে ত্বক হারিয়ে ফেলে তার স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য। ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে বিজ্ঞানীরা আজ উঠেপড়ে লেগেছেন। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিকে প্রতিহত করতে আবিষ্কার করেছেন সানস্ক্রিন ক্রিম।


সানস্ক্রিন সম্পর্কে পুরনো ধারণা বাতিল করুন

বেশিরভাগ লোক মনে করেন সানস্ক্রিন ক্রিম শুধু গ্রীষ্মের প্রখর রোদে বের হওয়ার আগে মেখে বের হতে হয়। এ ধারণাটি এখন ভ্রান্তে পরিণত হয়েছে। সব ঋতুতেই আপনাকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে যদি আপনি ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে চান।


উৎকৃষ্ট সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন

এ কথা অনেকবার আপনি শুনে থাকবেন যে, যখন সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন সেই সানস্ক্রিনে সানপ্রোটেকশন ফ্যাক্টর যেন কমপক্ষে ১৫ থাকে। অর্থাৎ ১৫-এর নিচে সানপ্রোটেকশন ফ্যাক্টর থাকলে তা ত্বকের কোনো কাজে আসে না। বাজারে অনেক ধরনের সানস্ক্রিন রয়েছে। এর কোনোটিতে সানপ্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা এসপিএফ ৩০, কোনোটিতে ৪৫, এমনকি ৬০ও রয়েছে। কিন্তু আপনার জন্য প্রযোজ্য কোনটি?


কীভাবে বুঝবেন কোন সানস্ক্রিনটি আপনাকে ব্যবহার করতে হবে

সানস্ক্রিন ব্যবহার করার আগে আপনাকে জানতে হবে এসপিএফ অর্থ কী? এটার অর্থ হল রোদে থাকার ফলে আপনার ত্বক পুড়ে যাওয়ার আগে এ পদার্থটি কতক্ষণ আপনার ত্বকে স্থায়ী থাকে? এটা হল এমনি এক পদার্থ যা মূলত সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিকে প্রতিহত করে।


একটি এসপিএফ লোশন বা ক্রিমের গুণগত অর্থ হল অরক্ষিত অবস্থায় আপনার ত্বক যেটুকু রক্ষা পেতে পারে এসপিএফ ১৫ লোশন বা ক্রিম আপনার ত্বককে তার চেয়ে ১৫ গুণ বেশি রক্ষা করে। তেমনি এসপিএফ ৮ সানস্ক্রিনটি ৮ গুণ বেশি সময় রক্ষা করে।


আপনার ত্বকের রঙ এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি আপনি দেখতে ফর্সা হন এবং রোদে ১০ মিনিট কাটালেই ত্বক পুড়ে যায় তাহলে আপনি যদি এসপিএফ ১৫ সানস্ক্রিনটি মাখেন সে ক্ষেত্রে আপনি সহজেই ১৫০ মিনিট রোদে থাকতে পারবেন। সানস্ক্রিন ১৫০ মিনিট ধরে আপনার ত্বককে রক্ষা করবে। আর যদি রোদে ২০ মিনিট কাটালে আপনার ত্বক লাল হয়ে ওঠে তাহলে এ সানস্ক্রিনটি আপনাকে ৩০০ মিনিট অর্থাৎ পাঁচ ঘণ্টা ধরে রক্ষা করবে। এসপিএফ কেবল সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ‘বি’-এর বেলায় প্রযোজ্য।


নাজুক ত্বকের লোকজনের জন্য এসপিএফ ১৫ হল উৎকৃষ্ট সানস্ক্রিন। এটা প্রায় ৯৫ শতাংশ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ‘বি’-কে প্রতিহত করে। কালো ত্বকের লোকদের জন্য এসপিএফ ৮ থেকে ১২ যথেষ্ট।


কারণ কালো ত্বকের লোকদের শরীরে মেলানিন নামক যে রঞ্জক পদার্থ থাকে সেটাই প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে। আর এ কারণেই এশিয়ার অধিবাসীদের ত্বকের ক্যান্সার কম হয়। কিন্তু কালো ত্বক ফেটে যায় ও ত্বকে দাগ হয়। তাই ত্বকের কুঞ্চন রোধ করতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এখানে ঋতু কোনো বিষয় নয়। সব ঋতুতেই সানস্ক্রিন সমান প্রযোজ্য।


বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ এসপিএফ ৩০-এর ওপরে যাওয়ার কোনো বিশেষ কারণ খুঁজে পান না। এসপিএফ ৩০ সানস্ক্রিন ৯৭ শতাংশ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ‘বি’-কে প্রতিহত করে। উচ্চমাত্রার এসপিএফ ত্বককে সুরক্ষা করে বটে কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর রাসায়নিক উপাদানগুলো ত্বকে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে।


গাঢ় করে সানস্ক্রিন মাখুন

আপনি শুধু সানস্ক্রিন মাখার কথাই শুনছেন, কিন্তু কী পরিমাণ সানস্ক্রিন আপনি ত্বকে মাখবেন? আপনি মুখমণ্ডলের জন্য প্রায় এক চা চামচ এবং সব শরীরের জন্য দু’চা চামচ সানস্ক্রিন মাখুন। যদি আপনি এর অর্ধেক মাখেন তাহলে আপনার প্রতিরক্ষার মাত্রা অর্ধেক কমে যাবে।


লোশন কিনুন দেখেশুনে

আপনি যদি অন্য সানস্ক্রিন লোশন কিনতে চান আপনি অবশ্যই চেক করে নেবেন তাতে জিঙ্ক অক্সাইড এবং টাইটানিয়াম ডাই-অক্সাইড আছে কি না! এরা এভোবেনজোন কিংবা অন্যান্য রাসায়নিক সানস্ক্রিন উপাদানের মতো ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে সূর্যরশ্মিকে শুষে নেয় না, বরং এরা শরীরের প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ এরা ত্বকের ওপরিভাগে অবস্থান করে এবং সূর্যরশ্মিকে প্রতিফলিত করে।


জিঙ্ক অক্সাইড কিংবা টাইটানিয়াম ডাই-অক্সাইড সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ‘এ’-কেও প্রতিহত করে। যেহেতু এ উপাদান দুটো ত্বকে শোষিত হয় না তাই সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এরাই উৎকৃষ্ট।


সব জায়গায় সানস্ক্রিন

আপনি শুধু স্থলেই নয়, পানিতে ডুব দেয়ার আগেও ওয়াটারপ্র“ফ সানস্ক্রিন মেখে নিতে পারেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, সানস্ক্রিন ত্বকে মাখার সঙ্গে সঙ্গেই সেটা কাজ করা শুরু করে দেয়। আপনি যখন ভেজা অবস্থায় রয়েছেন তখন সানস্ক্রিন ৮০ মিনিট আপনাকে রক্ষা করে। তাই প্রতি এক ঘণ্টা বা দু’ঘণ্টা অন্তর সানস্ক্রিন মাখতে হবে।


কসমেটিকস বা প্রসাধন হিসেবে গণ্য করবেন না

এসপিএফ ময়েশ্চারাইজার, ফাউন্ডেশন এবং অন্যান্য ত্বকের প্রসাধন নিয়ে আপনি যে ধারণা করেন সেগুলো আপনার ধারণার চেয়ে ত্বককে কম রক্ষা করে। সর্বদা পূর্ণমাত্রায় এসপিএফ ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ প্রায় এক চা চামচ সানস্ক্রিন আপনার মুখে মাখতে হবে।


অথচ প্রসাধনী হিসেবে মাখতে গেলে আপনি সেটা পারবেন না। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যখন কসমেটিকস কিনবেন তাতে যদি জিঙ্ক অক্সাইড কিংবা টাইটানিয়াম ডাই-অক্সাইড থাকে। কমমেটিকস কেনার আগে তাই লেবেলটি দেখে নিন।


খাদ্য যখন ক্ষতিকারক

অনেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য যেমন- আম, লেবু, গাজর প্রভৃতির রস ত্বকে মেখে থাকে। কিন্তু এ রসে থাকে ‘সোরালেন’ নামক উপাদান। যদি আপনার ত্বক সংবেদনশীল হয় এবং আপনি এসব রস ত্বকে মাখেন তাহলে সোরালিনের প্রভাব আপনার ত্বক রোদে সহজেই পুড়ে যাবে। এমনকি আপনি যদি এসব ফল খেয়েও থাকেন তাহলে রোদে বেরোবার আগে দয়া করে ত্বক ধুয়ে নেবেন যেন রস ত্বকে লেগে না থাকে।


ওষুধ যখন ত্বকের শত্রু

কিছু কিছু ওষুধ সেবনের ফলে আপনার ত্বক সহজেই রোদে পুড়ে যেতে পারে। এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে আইবুপ্রোফেন, অ্যান্টিবায়োটিক টেট্রাসাইক্লিন ও ডক্সিসাইক্লিন এবং গর্ভনিরোধক বড়ি। এসব ওষুধ সেবনের ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি আপনার শরীরের ত্বকে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। যদি আপনি কোনো ওষুধ সেবন করে থাকেন তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের মতামত নেবেন, এতে আপনার আলোর প্রতিক্রিয়া হবে কি না এবং এর জন্য অতিরিক্ত সতর্কতা নিতে হবে কি না।