গরমে হয়ে থাকে যে স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো

সাস্থ্যকথা/হেলথ-টিপস April 19, 2017 616
গরমে হয়ে থাকে যে স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো

গরমের তাপ শুধু ক্রমাগত বৃদ্ধিই পাচ্ছে। তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে গেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়া শুরু করে। বিভিন্ন ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। গরমে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে যে রোগগুলো তাদের মধ্যে প্রধান ৫ টি রোগের বিষয়ে জানবো আজ।


১। চিকেন পক্স

আপনি কী কখনো চিন্তা করে দেখেছেন এই রোগটির নামের বিষয়ে? এই রোগে যে ফুসকুড়িগুলো হয় তা অনেকটা মুরগীর চঞ্চুর মত দেখতে তাই একে চিকেন পক্স নাম করণ করা হয়েছে। Varicella zoster নামক ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে এই রোগ। গরমের সময়ে চিকেন পক্সের প্রাদুর্ভাব হলে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে লাল ফোসকা বা দাগের মত হতে দেখা যায় সাড়া শরীরে। বায়ু বাহিত কণার মাধ্যমে, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে, আক্রান্ত ব্যক্তির ফোসকায় স্পর্শ করলে অথবা ফোসকা থেকে নির্গত তরলে স্পর্শ লাগলে এই রোগটি ছড়িয়ে পরে।


লক্ষণ – এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হচ্ছে জ্বর, মাথাব্যথা এবং গলা ব্যথা হওয়া। ১ বা ২ দিন পরেই র‍্যাশগুলো ফোসকায় পরিণত হয় সবং শরীরের কিছু জায়গায় দেখা যায়, যা পরবর্তীতে সাড়া শরীরে ছড়িয়ে পরে। ২ দিন পরেই এই ফুসকুড়িগুলো ফেটে যায়। তারপর রুগী তার স্বাভাবিক কাজ শুরু করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির বিশ্রাম নিতে হয় এবং অন্যদের চেয়ে আলাদা থাকতে হয়। এই অসুস্থতা থেকে সেরে উঠতে ১০ দিনের মত সময় লাগে। এর ভালো দিকটি হচ্ছে একবার চিকেন পক্স হলে আর হয়না।


এর থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য টিকা নিতে পারেন। ভিড়ের স্থান থেকে আসলে ভালো করে হাত ধোয়া উচিৎ। আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখা উচিৎ যাতে তার থেকে এই রোগ না ছড়ায়।


২। হাম

এটিও গরমের সময়ের একটি সাধারণ অসুখ। Paramyxo ভাইরাস যখন গলার ভেতরের পেছনের দিকের প্রাচীরকে আক্রমণ করে তখন সংক্রমণ তৈরি হয়। এটি ও চিকেন পক্সের মতোই ছড়ায়।


লক্ষণ – এর প্রারম্ভিক লক্ষণ হচ্ছে উচ্চমাত্রার জ্বর, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যথা এবং চোখ লাল হয়ে যাওয়া। লক্ষণের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে ছোট লাল দাগের মত র‍্যাশ হয় এবং জ্বর, কাশির সাথে মুখের মধ্যে ছোট ছোট সাদা দাগ হয়। হামের র‍্যাশ প্রারম্ভিক লক্ষণ দেখা যাওয়ার ৩-৫ দিন পরে হয় এবং চুলের প্রান্ত থেকে শুরু করে মুখে ছড়িয়ে যায়। এমএমআর টিকা সকল শিশুর জন্যই কার্যকরী।


৩। জন্ডিস

একে হেপাটাইটিস এ ভাইরাস ও বলা হয়। এটি পানিবাহিত রোগ। এই ভাইরাস যকৃতকে আক্রমণ করার ফলে অতিরিক্ত পিত্ত রস নিঃসৃত হয়। জন্ডিসের প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া, মলের বর্ণ হালকা হয়ে যাওয়া, গাঁড় বর্ণের প্রস্রাব হওয়া এবং ত্বকে চুলকানি হওয়া। জন্ডিসের টিকা আছে তবে আপনার উচিৎ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুত করা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা এবং ফুটানো বা ফিল্টার করা পানি পান করা।


৪। টাইফয়েড

সাধারণত টাইফয়েড জ্বর নামে পরিচিত টাইফয়েড। এটি পানি বাহিত একটি রোগ। Salmonella typhi নামক ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা হয় এই রোগটি। অস্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পানীয়ের মাধ্যমে ছড়ায় এটি।


লক্ষণ – টাইফয়েড হলে উচ্চমাত্রার জ্বর, ক্লান্তি, দুর্বলতা, পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, ক্ষুধা কমে যাওয়া এবং কখনো কখনো র‍্যাশ দেখা দিতে পারে। একবার ভালো হয়ে যাওয়ার পরেও এই ব্যাকটেরিয়া শরীরে থেকে যেতে পারে। এদেরকে বাহক বলে এবং এদের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে যায়।


প্রতিকার – টাইফয়েডের বিরুদ্ধে সুরক্ষা পেতে দুই ধরনের টিকা আছে। এক ধরনের টিকা ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এবং এটি আক্রান্ত ব্যক্তিকে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেয়া হয়। দ্বিতীয় টিকাটি হচ্ছে ব্যাকটেরিয়াকে দুর্বল করার জন্য ঔষধ গ্রহণ করা হয়।


৫। মামস

এটি চূড়ান্ত রকমের সংক্রামক একটি রোগ যা ভাইরাস দ্বারা হয়। এটি গরমের সময় শিশুদের হয়ে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পরে।


লক্ষণ – আক্রান্ত ব্যক্তির লালাগ্রন্থি ফুলে যায়। এটি সাধারণত শুরু হয় কয়েকদিনের জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, ক্ষুধা কমে যাওয়া এবং লালাগ্রন্থি ফুলে যাওয়ার মাধ্যমে। এমএমআর টিকা এই রোগের সংক্রমণ হতে সুরক্ষা দিতে পারে।