পুরুষ দেখলেই পোশাক খুলে ফেলতেন এই রোগিণী!

সাধারন অন্যরকম খবর April 12, 2017 2,377
পুরুষ দেখলেই পোশাক খুলে ফেলতেন এই রোগিণী!

পুরুষ দেখলেই পোশাক খুলে ফেলতেন তিনি! ডাক্তাররা ভয়ে তাঁর চোখের নাগালে আসতে চাইতেন না। সাফাইকর্মীরাও ভয়ে ভয়ে থাকতেন। এই বুঝি রোগিণী এসে জাপটে ধরবেন।


হাসপাতালের সুপার-সহ তিন আধিকারিক সাসপেন্ড হয়েছেন তাঁর এই অদ্ভুত আচরণের ঠ্যালায়। পরে জানা যায়, বিজারে ডিলিউশন ডিজঅর্ডার নামে এক বিরল রোগের প্রকোপেই তরুণী এই কাণ্ড ঘটাতেন। পাভলভ হাসপাতাল ওঁকে সামলাতে পারেনি। তাঁকেই সুস্থ করে পুনর্বাসিত করল পিজি হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি।


রাজ্যের নারী উন্নয়ন দপ্তরের সহযোগিতায় কৃষ্ণনগরের একটি সরকারি হোমে কাজও মিলল আঁখির। ডাক্তারদের দেওয়া নামটিই তাঁর একমাত্র পরিচয়। আসল নাম কেউ জানে না আঁখির। বাড়ি ওড়িশায়। কিন্তু ঠিক কোথায় তা আজও মনে করতে পারেননি ওই যুবতী। প্রায় পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি লম্বা।


পাঞ্জাবি মহিলাদের মতো শরীরের গড়ন। ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর বন্দর এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ পাভলভে নিয়ে এসেছিল। দীর্ঘদিন সেখানে চিকিৎসা চলেছে। রোগের জ্বালায় মাঝমধ্যে খবরের শিরোনামে এসেছেন।


ডাক্তার-নার্স-সাফাইকর্মী অনেকেই শো-কজ-এর চিঠি পেয়েছেন তাঁর পোশাক-খোলা উপসর্গের ঠ্যালায়। ফিমেল ওয়ার্ডে কোনও পুরুষ এলেই জামাকাপড় খুলে ফেলতেন আঁখি। অপ্রস্তুত হয়ে পড়তেন চিকিৎসকরা। বাধা দিতে গেলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যেত।


আঁখির জন্য সাসপেন্ড হতে হয় পাভলভের তৎকালীন সুপার সুবোধরঞ্জন বিশ্বাস-সহ তিন আধিকারিককে। কেউ ভাবেনি এই মেয়েই একদিন সুস্থ হয়ে রোজগেরে হবে। তৈরি করবে নজির। আইওপি-র অধিকর্তা ডা. প্রদীপ সাহা থেকে সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্ক বিভাগের প্রধান ইলোরা পারিখ, পরিতৃপ্তির হাসি সবার মুখে।


প্রদীপবাবুর কথায়, পাভলভ থেকে যখন আঁখিকে আইওপি-তে নিয়ে আসা হয়েছিল তখন ভাবিনি যে ওকে সুস্থ করিয়ে কাজ করার উপযুক্ত করে তুলতে পারব। সবার চেষ্টায় এই অসাধ্য সাধন হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত ২০১৫-তে। আইওপি পরিদর্শনে এসেছিল সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত উচ্চপর্যায়ের কমিটি।


যার চেয়ারপার্সন ছিলেন ধরিত্রী পন্ডা। পরিদর্শনের সময় আঁখিকে চোখে পড়ে ধরিত্রীদেবীর। তখনই আঁখির পুনর্বাসনের জন্য তৎকালীন স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে ও স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. বিশ্বরঞ্জন শতপথীকে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানান। সেই অনুরোধ মেনেই আঁখির জন্য কাজ খুঁজতে শুরু করি আমরা,বলেন প্রদীপবাবু।


কৃষ্ণনগরে ‘পঙ্কজ আচার্য মহিলা নিবাস সমিতি নামে একটি হোমের সন্ধান মেলে। সম্প্রতি আঁখিকে হোমে পাঠানো হয়। তিনি এখন মন দিয়ে কাজ করছেন ওই হোমে।