সুস্বাস্থ্যের জন্য যেভাবে দুধ পান করবেন

সাস্থ্যকথা/হেলথ-টিপস April 3, 2017 719
সুস্বাস্থ্যের জন্য যেভাবে দুধ পান করবেন

সুস্থ জীবনযাপনের জন্য দুধের গুরুত্ব অপরিসীম। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত দুধ পান করে তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। দুধের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করে। রয়েছে ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন বি ১২, ভিটামিন এ, জিংক, রিবোফ্লাভিন, ফোলেট, ভিটামিন সি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ডি।


যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি গবেষণা বিভাগ জানিয়েছে, নিয়মিত দুধ পান করলে নীরব ঘাতক হাড়ক্ষয় প্রতিরোধ হয় দুধে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম থাকায়। অন্য গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণে হাড় ভালো থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এমনকি টাইপ-২ ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।


কিছু বিষয় বিবেচনা করে দুধ পান করলে আপনি সর্বোচ্চ উপকার পাবেন।


অর্গানিক দুধ

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ দুধের তুলনায় অর্গানিক অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। কারণ হরমোন প্রয়োগ করা হয় না এমন গাভী থেকে এই দুধ সংগ্রহ করা হয়। তাছাড়া কোনো ধরনের কীটনাশক গরুর লালনপালনে ব্যবহার করা হয় না।


* অর্গানিক দুধ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে উৎপাদিত হয় না। বেশি মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অথচ বর্তমানে কৃষিতে অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার হচ্ছে।


* অর্গানিক দুধে বেশি পরিমানে কনজুগেটেট লিনোলেনিক অ্যাসিড (সিএলএ) থাকে, যা হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমায়।


* আরেকটি বড় সুবিধা হল, এটি অন্য দুধের তুলনায় স্থায়ী হয়, সহজেই টক বা নষ্ট হয় না। এটাকে ২৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে উত্তপ্ত করা হয়, ফলে এটা ২ মাস পর্যন্ত নোনতা হয় না। অন্যদিকে সাধারণ দুধকে ১৪৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটে উত্তপ্ত করা হয়, যার ফলে একই পরিমাণ স্থায়ী হয় না।


* ফ্যাক্টরির গরুর তুলনায় অর্গানিকভাবে দুধ উৎপাদনের গরু ফাঁকা মাঠে মুক্ত বাতাসে থাকে। যেসব ফার্ম অর্গানিগ দুধ উৎপাদন করে থাকে সেসব ফার্মের গরু অবাধে মাঠে বেড়িয়ে খাবার খায়। এ ধরনের লালনপালন পশুর জন্য সহানুভূতিশীল। প্রাকৃতিক বাতাস, মাটি ও পানির পরিবেশ পাওয়ায় এসব গাভীর দুধ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।


চায়ের সঙ্গে দুধ নয়

আপনার যদি দুধ, চা এর সঙ্গে খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে তা বাদ দিন। কারণ এতে চায়ের সম্পূর্ণ গুণ নষ্ট হয়ে যায়। চায়ে দুধের পরিবর্তে মধু যোগ করতে পারেন। তবে কফির মধ্যে দুধ যোগ করতে পারেন, এতে চা এর মতো কফির গুণ নষ্ট হয় না।


যেসব ভিটামিন ও মিনারেলস দুধে থাকে, সে সম্পর্কে সচেতন থাকুন

* ক্যালসিয়াম: দাঁত ও হাড় সুস্থ্য রাখে। দেহকে হাড়ের ভারের সমতা রাখতে সাহায্য করে।


* প্রোটিন: শক্তির ভালো একটি উৎস। ব্যায়ামের পরে পেশী তৈরি ও মেরামত করে।


* পটাশিয়াম : রক্তচাপ পরিমিত রাখে।


* ফসফরাস: হাড়কে মুজবুত রেখে শরীর শক্তিশালী করে।


* ভিটামিন ডি: হাড়ের গঠন ঠিক রাখে।


* ভিটামিন বি ১২: লোহিত রক্ত কণিকা এবং স্নায়ুকোষ সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।


* ভিটামিন এ: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি ও ত্বকের সুস্থতা ধরে রাখে।


* নিয়াসিন: পরিপাকশক্তি বৃদ্ধি করে।


পাস্তুরিত দুধ

কাঁচা দুধ খাওয়া বিপজ্জনক। পাস্তুরাইজেশন প্রক্রিয়ায় কাঁচা দুধের ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণু মারা যায়। তাই দোকান থেকে দুধের প্যাকেট কেনার সময় লেভেল পড়ে নিশ্চিত হয়ে নিন, ‘পাস্তুরাইজেড’ লেখা রয়েছি কিনা। না লেখা থাকলে তা কাঁচা দুধ।


দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য সর্বদা দোকানের ফ্রিজ থেকে নেবেন। যদি আপনি পাস্তুরাইজড বিষয়ে নিশ্চিত না হতে পারেন, তাহলে খামার থেকে দুধ কিনবেন না।


অ্যাসিডিটি দূর করতে দুধ খান

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বুকজ্বালা করে অ্যাসিডিটির জন্য। দুধ গ্যাসট্রিক অ্যাসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি দেয়।


পরিষ্কার ত্বকের জন্য দুধ খান

হাজার বছর থেকে দুধকে ত্বক পরিষ্কারক হিসেবে চিনেছে সবাই। দুধের ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বক রাখে পরিষ্কার এবং প্রাণবন্ত।


মজবুত দাঁতের জন্য দুধ খান

দাঁত শক্ত রাখতে হলে দুধ পান করুন। ক্যাভিটিস থেকেও দাঁত রক্ষা করে দুধ। দুধ মানেই ক্যালসিয়ামের খনি। দুধ যেমন দাঁত ভালো রাখে, তেমনি হাড়ের জন্যও উপকারী।


ওজন কমাতেও দুধ খান

ওজন বাড়বে ভেবে অনেকেই দুধ এবং দুগ্ধজাত খাদ্য থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু ইসরায়েলের বেন-গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, নিয়মিত বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম খেলে ওজন কমে।