

আমি যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি তখন ঠিক দুপুরে আমাদের পরিবারের সবার সামনে একটা ঘটনা ঘটে। রোকসানা নামে আমার এক ফুফু ছিলেন। আমরা একই ক্লাসে পড়তাম। আমরা জানতাম না ওইদিনটি ছিল অমাবশ্যার।
ঠিক দুপুরে আমরা দুইজন আমাদের উঠানে বসে খেলছিলাম। হঠাৎ আমার ফুফু রোকসানা বললো ‘তুই দাঁড়া আমি একটু আসছি। ’ এই বলে আমার ফুফু দৌঁড়ে আমাদের বাড়ি থেকে রাস্তার দিকে চলে গেলেন।
আমাদের বাড়ি থেকে রাস্তা খুব কাছেই, আর ওই রাস্তার ওপারে ছোট একটা বিল (মাঠ) ছিল। বিলটার ঠিক মাঝখানেই তিনটা বড় তালগাছ ছিল। তিনটি তালগাছের গোড়াও ছিল একই স্থানে। আর ওই বিলে গভীর রাতে অনেকেই অনেক ভূতুরে কাণ্ড নাকি দেখেছেন।
যাই হোক, যা বলছিলাম, আমার ফুফু ঠিক ওই বিলের দিকেই দেখলাম দৌঁড়ে চলে গেলেন। এর পরে অনেকক্ষণ ধরে তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবারের সবাই মিলে হন্যে হয়ে খুঁজলাম তাকে। কিন্তু কোথাও পাওয়া গেল না।
এর কিছুক্ষণ পর দেখলাম ফুফু ওই তিন তালগাছের গোড়ায় বসে কাঁদছে। কী অদ্ভুত তার চেহারা। মাথার চুলগুলো সব অগোছালো। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। চোখের উপর-নিচ প্রচণ্ড কালো হয়ে গেছে। এটুকু সময়ে তার এত পরিবর্তন কীভাবে হলো! সবাই অবাক হলাম।
তারপরে সবাই তাকে নিয়ে বাড়ির উঠানে বিছানো মাদুরে বসানো হলো। সবাই তাকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে থাকে, কিন্তু সে কিছুই বলছে না।
এমন সময় হঠাৎ ওই তিন তালগাছের উপর থেকে ফুফুর গলার আওয়াজ আসতে থাকে। সবাই প্রচন্ড ধাক্কা খায়। ওদিকে তালগাছের মাথা থেকে জোরে জোরে ফুফু চিৎকার করে বলছে ‘ওটাকে তোমরা নিয়ে গেছো কেন, ওটাতো পেতনি। আমি এখানে, আমাকে নামাও এখান থেকে। ’
তালগাছের গোড়া থেকে আমরা যে ফুফুকে উঠানে নিয়ে আসছিলাম হঠাৎ দেখি সেই ফুফুটা উধাও হয়ে গেছে। তখন আমরা সবাই বুঝতে পারলাম ওই ‘মানুষটা’ আসলে আমাদের ফুফু না আর সে কোনো মানুষও না। ওটা আসলে একটা পেতনি ছিল। যা আমাদের ফুফুর রূপ ধারণ করেছিল।
এরপর বাঁশ দিয়ে বানানো সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে ফুফুকে ওই তালগাছের মাথা থেকে নামানো হলো। এ ঘটনার পর দুইদিন পর্যন্ত ফুফু অজ্ঞান ছিলেন। তবে পরে ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হন।
[গল্প সূত্রঃ কালের কন্ঠ অনলাইন]








পাঠকের মন্তব্য (0)
Please login To write comment