মেছতার কারণ ও প্রাকৃতি উপায়ে প্রতিকার!

রূপচর্চা/বিউটি-টিপস March 13, 2017 1,022
মেছতার কারণ ও প্রাকৃতি উপায়ে প্রতিকার!

সমস্যাগুলো নিয়ে সবচাইতে বেশি বিব্রতকর সমস্যার সৃষ্টি হয়, সেগুলোর মাঝে অন্যতম মেছতা। মেছতা যে কারোরই হতে পারে। তবে সাধারণত নারীরাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ত্বকে মেছতা হলে কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়ে যা দেখতে একেবারে বেমানান লাগে।


মেছতা কী ও কেন হয়?

সূর্যরশ্মির প্রভাবে ত্বকে অতিরিক্ত মেলানিন উৎপন্ন হয়। এতে ত্বকের কিছু কিছু জায়গায় গাঢ় কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয় যা মেছতা বা মেলাজমা (melasma) নামে পরিচিত। গ্রীক শব্দ মেলাজ (melas) থেকে মেলাজমা শব্দের উৎপত্তি যার অর্থ কালো।


ত্বকের যে সমস্ত জায়গায় সূর্যরশ্মি বেশি পড়ে সে সমস্ত জায়গা যেমন- উপরের গাল, নাক, ঠোঁট এবং কপালে মেছতা দেখা যায়। (সাধারণত ৩০-৪০ বছর বয়সের মধ্যে হয়)। তবে মাঝে মধ্যে ঘাড়ের পাশে, কাঁধ ও উপরের বাহুতে দেখা যায়। গায়ের রঙ ফর্সা যাদের তাদেরই মেছতায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।


সাধারণ মেছতা মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যকে নষ্ট করে বটে, তবে শরীরের অভ্যন্তরে কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু কিছু মেছতা আছে যেগুলোকে স্কিন ক্যান্সার হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। যেমন লেনটিগো ম্যালিগনা, মেলানোসা ও ব্যাসাল সেল কারসিনোমা। তবে আর্লি স্টেজে এগুলো ধরা পড়লে নিরাময় করা সম্ভব। রোদে বের হলেই সবার মেছতা হবে এমন কোনো কথা নেই। এখানে বংশগত প্রবণতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।


গবেষণায় দেখা গেছে জেনেটিক টেন্ডেন্সি ও সূর্যরশ্মির কম্বিনেশনে মেছতা তৈরি হয়। কিছু কিছু মানুষের দেহে সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি পড়ার সাথে সাথে উল্লেখযোগ্য হারে পিগমেন্ট সেল বা মেলানিন বেড়ে যায়, শুধু তাই নয় ত্বকের বাইরের স্তর হয়ে যায় আগের চেয়ে পুরু। যাদের গায়ের রঙ কালো তাদের সেভাবে মেছতা দেখা যায় না। কারণ কালো বর্ণের ত্বকে সূর্যরশ্মি বা আলট্রা ভায়োলেট রে সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারে না।


সহজ ও ন্যাচারাল পদ্ধতিতে মেছতা থেকে মুক্তির উপায় জেনে নিন-


অ্যালোভেরা জেল

তাজা অ্যালোভেরা পাতা কেটে এর ভেতর থেকে জেলটুকু বের করে নিন। এবার এই জেলটুকু মুখে লাগিয়ে হালকা হাতে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন দুবার করে টানা এক মাস করতে হবে।


ওটমিল

ওটমিল ত্বকের বাদামি দাগ ও মরা চামড়া দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করে। দুই চা চামচ ওটমিল, দুই চা চামচ দুধ এবং এক চা চামচ মধু মিশিয়ে ত্বকের যে স্থান মেছতায় আক্রান্ত, সে জায়গায় লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। এরপর পানি দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার করুন এক মাস।


লেবুর রস

লেবুর রস ত্বক ব্লিচ করে। এ ছাড়া ত্বকের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। লেবু কেটে রস বের করে মুখের মেছতায় আক্রান্ত স্থানে সরাসরি মাখুন। এরপর ২০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই দিন করে তিন সপ্তাহ লাগিয়ে দেখুন, মেছতা ঠিক হবে।


হলুদ

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ন্যাচারাল স্কিন টোনার হিসেবে হলুদ পরিচিত। হলুদের মধ্যে থাকা নানা গুণাগুণ ত্বকের মেলানিন কমিয়ে মেছতা হালকা করতে সাহায্য করে। ১ চা চামচ হলুদের মধ্যে ৫ চা চামচ দুধ দিন। তরল দুধ ব্যবহার করা ভালো। এর মধ্যে দিন দুই চামচ বেসন। এবার এই পেস্টটি মেছতায় আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। প্রতিদিন একবার করে ব্যবহার করুন।


কাঠবাদাম

কাঠবাদামে থাকা হাইপ্রোটিন ও ভিটামিন ‘সি’ ত্বক মসৃণ করে। এ ছাড়া ত্বকে পুষ্টি জুগিয়ে ত্বক উজ্জ্বল করে। ২ চামচ বাদাম বাটা অথবা গুঁড়ার সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে মুখে মেছতার ওপর লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে মুছুন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন করুন, যতক্ষণ না কোনো উপকার পাচ্ছেন। অথবা ৬ থেকে ৭টি বাদাম সারা দিন কয়েক চা চামচ দুধের ভেতর ভিজিয়ে রাখুন। এরপর বেটে পেস্ট বানিয়ে মেছতা আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন সারা রাত। প্রতিদিন একবার করে টানা দুই সপ্তাহ ব্যবহার করতে হবে।


পেঁপে

পেঁপেতে থাকা পেপেইন এনজাইম প্রাকৃতিক স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে সারিয়ে তোলে ও মৃত কোষ দূর করে। আধা কাপ পাকা পেঁপে থেঁতলে নিন। এবার দুই টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে ২০ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন একবার করে কয়েক মাস ব্যবহার করতে হবে।


চন্দন গুঁড়া

ত্বকের দাগ হালকা করা উপাদানের মধ্যে খুব ভালো হলো চন্দন। এটি ত্বকের যেকোনো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। সমপরিমাণ চন্দন গুঁড়া, দুধ, লেবুর রস আর হলুদ মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মেছতায় আক্রান্ত স্থানে মাখুন। এবার শুকাতে দিন। শুকিয়ে গেলে পানির ঝাপটা দিয়ে মাস্কটা নরম করে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন করে করুন। যত দিন না কোনো উপকার পাচ্ছেন।