লাশগুলো তো বৃষ্টিতে ভিজছে, লোকজন কোথায়?

ভূতের গল্প February 28, 2017 5,302
লাশগুলো তো বৃষ্টিতে ভিজছে, লোকজন কোথায়?

ঘটনাটি গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ের। পেশাগত কারণে একটু রাত করেই বাসায় ফিরতে হয়। সেদিনও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে বাসায় ফেরার রোজকার পরিবেশে শুধু ব্যতিক্রম একটা জায়গায় হল- সেটা হলো, সেদিন রাতে বেশ বৃষ্টি হচ্ছিল।


সঙ্গত কারণে এলাকার নাম উল্লেখ করতে পারছি না। মেইন রোড থেকে আমার বাসা ৬/৭ মিনিটের হাঁটা পথ। অফিসের গাড়ি করে মেইন রোডে নেমে যাই এবং সেখান থেকে রিক্সা নিয়ে বাসা। এটাই প্রতিদিনের রুটিন।


সেদিনও মেইন রোডে গাড়ি থেকে নামি এবং রিক্সার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। যেহেতু আগেই বলেছি যে সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল তাই কোনো রিক্সার দেখা পাচ্ছিলাম না। মেইন রোডের যে জায়গায় নেমেছি সেখানে একটা পুলিশ বক্স আছে। সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম রিক্সার অপেক্ষায়।


সময় তখন ১২:৪৫ হবে। ইতোমধ্যে ১৫ মিনিটের মতো সময় পেড়িয়ে গেছে। জনমানবশূন্য রাস্তা। মাঝে মাঝে ২/১ টা ট্রাক যাচ্ছে। রাস্তার অপর পাশে ১ টা চায়ের দোকান। একবার ভাবলাম ওপাশে গিয়ে এক কাপ চা খেয়ে আসি। আবার ভাবলাম, যেহেতু রাত বেড়েই যাচ্ছে তাই রিক্সার জন্য আর অপেক্ষা না করে এবার হেঁটেই এগোনো যাক।


বলে রাখা ভালো, বাসায় যাওয়ার সময় ৩টা গলি পেরোতে হয়। এছাড়া একটা শর্টকার্ট গলিও আছে শুধু হেঁটে পাড় হওয়ার জন্য। তবে শর্টকার্ট গলিটি সাধারণত দিনের বেলায় ব্যবহৃত হয়। কারণ, রাতে ওই রাস্তায় ছিনতায়ের ভয় থাকে এবংএলাকার কুকুর দলের আস্তানাও বটে।


তবে যেহেতু বৃষ্টিটা জোরেশোরেই শুরু হল, তাই একটু কম ভেজার জন্য শর্টকার্ট রোডটাই নিলাম বাসায় যাওয়ার জন্য। মানুষতো দূরে থাক, সেদিন একটা কুকুরও ছিলোনা সেই রাস্তায়। বৃষ্টিতে মানুষ যে ভাবে হাঁটে আমিও তেমনই দেয়াল ঘেঁষে যাচ্ছি হাঁটা এবং দৌড়ের মাঝামাঝি একটা গতিতে।


গলিটার প্রবেশমুখ থেকে মিনিট দেড়েক হাঁটলেই একটা মসজিদ। মসজিদের ১ মিটার আগে আসার সাথে সাথেই আমার পা আটকে গেলো। ভয় এবং বিস্ময় গ্রাস করলো আমাকে। এ দৃশ্য দেখার জন্য আমি কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না।


দেখি মসজিদের সামনে ৩টা খাটিয়া লম্বা করে রাখা এবং ৩টা খাটিয়াতে কাফন মোড়ানো ৩টি লাশ। লাশগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে। পুরো ঘটনাটা ৪/৫ সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে গেলো। প্রথমে মাথায় যেটা এলো সেটা হলো, লাশগুলো তো ভিজছে, লোকজন কোথায়?


পরক্ষণেই মাথায় এলো- এতরাতে এখানে লাশ থাকার তো কোনো কারণ নেই। আমার বৃষ্টিভেজা শীতল গা বেয়ে শীতলতর একটা তরঙ্গ বয়ে গেলো- সারা শরীর-মন চেপে ধরছে আতঙ্ক আর অসহায়ত্ব। চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলাম। এক সময়ে বুঝলাম নিজের অজান্তেই আমি দৌড়াতে শুরু করেছি। শরীরে যত শক্তি আছে এক করে আমি ছুটতে লাগলাম বাসার দিকে।


জীবনে এর আগে এত জোড়ে কখনও দৌড়াইনি। ৩ মিনিটের পথ পেরোলাম মাত্র ১ মিনিটেরও কম সময়ে এবং তারপরই এলাকার কমিউনিটি গেইট। সেখানে এক দাড়োয়ানকে দেখে যেন নিজেকে ফিরে পেলাম। এর আগে আর কোনো মানুষকে দেখে এত স্বস্তি যেন আর পাইনি।


ওদিকে, দাড়োয়ান আমাকে দেখেই বিড়ি ফুকতে ফুকতে এগিয়ে এলো এবং জিজ্ঞেস করল, ‘কী হইছে মামা! এত জোড়ে দৌড়ান ক্যান?’


আতঙ্ক আর দৌড়ানোর চাপে আমার বুক ধরে গেছে, মনে হচ্ছে অনবরত ড্রাম পিটাচ্ছে কেউ বুকের ভেতর। কথা বলতে পারছিলাম না। হাঁটুতে ভর দিয়ে নিচু হয়ে শ্বাস নিচ্ছি।


দাড়োয়ান দরজা খুলে দিল এবং আমি কোনো কথা না বলে সোজা বাসায় গেলাম। কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত্রি হয়। বাসায় ঢোকার সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে গেলো। বাসায়ও আমি ছাড়া আর কেউ নেই। ভয়ে হাত পা কাঁপছে। সাথে সাথে ফোন দিলাম গাড়িতে থাকা আমার বাকি কলিগদের একজনকে এবং সমস্ত বিষয় জানালাম।


যাই হোক, সারারাত ঘুমোতে পারলাম না। সকালে এলাকার এক বন্ধুর কাছে জিজ্ঞেস করলাম রাতে কেউ মারা গেছে কিনা? সে বললো- না তো।


তাকেও বিষয়টা বললাম এবং সেও আমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিল। সেটা হলো, একটা মসজিদে সাধারণত কখনো তিনটা খাটিয়া থাকে না। আমার মাথায় আবার যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।


হয়তো বলবেন, পুরো বিষয়টাই ছিলো আমার কল্পনা। কিন্তু সেই ভয়াবহ ঘটনা কোনো না কোনোভাবে আমি দেখেছি- এটা আমি নিশ্চিত। ৪/৫ সেকেন্ডের ঘটে যাওয়া সেই ঘটনা সারাজীবনের একটা ভয়ের স্মৃতি হয়ে রইল।


[গল্পটি ইন্টারনেট হতে সংগ্রহিত]