জাপানী নারীরা যে উপায়ে থাকেন স্লিম

লাইফ স্টাইল February 25, 2017 778
জাপানী নারীরা যে উপায়ে থাকেন স্লিম

চপস্টিক বা কাঠি দিয়ে খেলে আস্তে আস্তে খাওয়া হয়।


ফ্রান্সের নারীরা মোটা হয় না বলে সাবাই জানে। সম্প্রতি নাওমি মরিয়ামা এর ডায়েট বুক ‘জাপানিজ ওমেন ডোন্ট গেট ওল্ড অর ফ্যাট’ নতুন ধারণা নিয়ে এসেছে। এতে তিনি জাপানী মানুষদের অনেক বেশি স্লিম থাকার এবং দীর্ঘজীবী হওয়ার গোপন রহস্য আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন তার মায়ের রান্না ঘরের বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে। লেখক শার্লট হিল্টন অ্যান্ডারসন জাপানীদের বিষয়ে ৩ জন আমেরিকান এর সাথে কথা বলেন, যারা জাপানে বসবাস করতো। সেই আমেরিকানদের কাছ থেকে জাপানীদের ডায়েট টিপস এবং তাদের স্লিম থাকার রহস্য সম্পর্কে জেনে নিই চলুন।


১। হাঁটতে হাঁটতে খাওয়া নয়

স্কুল শিক্ষক জেনি বারগ্লান্ড মিনেসোটা থেকে জাপানের ইজুমি শহরে ১২ দিন থাকেন এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আওতায়। তিনি বলেন, ‘জাপানের রাস্তায় দাঁড়িয়ে বা হাঁটতে হাঁটতে খাওয়া, পান করা বা ধূমপান করা অভদ্রতার শামিল’। আমেরিকার উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. থমাস হিল্টন জাপানের গ্রাম কিউশুতে দুই বছর বাস করেন। তিনিও বলেন, ‘আপনি কখনোই দেখবেন না যে কেউ হাঁটতে হাঁটতে খাচ্ছে বা গাড়ীর ভেতরে খাচ্ছে’। এ ধরনের কাজ জাপানে অনুচিত বলেই বিবেচিত হয়।


২। সহজ খাবার

নাওমির বইটি থেকে যে প্রধান টিপসটি পাওয়া যায় সেটি নিয়ে শার্লট ইন্টারভিউ করেন। মাছ, ভাত, সবজি, ফল, চা এবং সয়া জাপানীদের প্রধান খাবার। পাবলিক হেলথ এর উপর মাস্টার্স করা গ্র্যান্ট সোনাডা জাপানে ৩ বছর বসবাস করেছিলেন এবং অনেকবার ঘুরে এসেছেন জাপান দেশটি, তিনি বলেন, আপনি বলতে পারেন যে, ‘জাপানী ডায়েটে লবণ ও জটিল শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে যেমন- ভাত ও সয়াসস! এটা কীভাবে কোমর সরু রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে? আমি নিশ্চিত নই। কিন্তু তাদের খাদ্যতালিকায় মাছ ও সবজি থাকাও খুবই সাধারণ একটি বিষয় – এই অভ্যাসটিই হয়তো সাহায্য করতে পারে’।


বারগ্লান্ড বলেন, আমেরিকান ফাস্টফুড সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে, জাপানী শিক্ষার্থীরাও এটি গ্রহণ করে তবে খুব বেশি পরিমাণে নয়। তিনি জাপানীদের সকালের নাস্তার বর্ণনা দেন, ‘যেখানে থাকে লেটুস পাতা, টুকরো করা টমেটো, চা, সামান্য দই – জেল এর একটি কিউব আকৃতির সমান, ১ টি ডিম, আস্ত গমের টোস্ট ইত্যাদি’। দুপুরে তারা প্রায়ই স্যুপ গ্রহণ করে, সব সময় সাদা ভাত খায় এর সাথে ছোট প্যাকেটের শুঁটকি মাছ (ড্রায়েড ফিশ)এবং দুধ পান করে।


৩। হাঁটা

বড় শহর বা প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাসকারী জাপানীরা দিনের একটা ভালো সময় হেঁটে পার করে। সোনাডা বলেন, জাপানীরা খুব কম গাড়ী চালান। তাই গড়ে তারা আমেরিকানদের চেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। তারা বেশীরভাগ সময় হাঁটে, সাইকেল বা স্কুটার চালায় অথবা পরিবহণে চড়ে। দরিদ্র জাপানীরা প্রাকৃতিকভাবেই কষ্টসহিষ্ণু। তারা বাঁশ ও কাদা দিয়ে ঘর তৈরি করে। দরজা ও জানালায় কাগজ ব্যবহার করে এবং হোয়াইট ওয়াশ করে। তাদের ঘর গরম করার জন্য কোন হিটার বা এসি থাকেনা। শীতের সময়ে তারা ঘরের ভেতরে একটি ছোট টেবিল স্থাপন করে যাকে কোটাটসু বলে, এর নীচে একটি সিলিন্ডারের ভেতরে কাঠকয়লা দেয়া থাকে। এই টেবিলের উপর কম্বল রেখে গরম করে নেয় তারা। এজন্যই বলা হয় তারা অনেক কষ্টসহিষ্ণু।


৪। খাদ্যই জ্বালানী

জাপানীরা খাদ্যকে শক্তির উৎস হিসেবেই দেখে। স্বাস্থ্যকরভাবে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য অপরিহার্য এটা তারা মেনে চলে এবং খাওয়ার সময় টিভি বন্ধ করে রাখে। বারগ্লেন্ড বলেন, এটাই খাদ্যের প্রতি ভালোবাসার ক্ষেত্রে জাপানী ও আমেরিকানদের মধ্যকার পার্থক্য। হিল্টন আরো বলেন, খাদ্যের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সুন্দরভাবে উপস্থাপন করাটাও জাপানীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস এবং তা একজন গরীব নাগরিকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।


সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, যেসব জাপানী মানুষরা পশ্চিমা খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেন তাদের স্থূল হওয়ার এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় যারা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেন তাদের তুলনায়।


বইটিতে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে আসলেই কী জাপানী নারীরা স্লিম হয়? হ্যাঁ উল্লেখিত ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতায় তারাও একমত প্রকাশ করেন। বারগ্লেন্ড বলেন, এটা সম্ভব চপস্টিক এর কারণে।তিনি বলেন, ‘চপস্টিক বা কাঠি দিয়ে খাওয়া একটি চমৎকার পরিকল্পনা, এর ফলে আপনি আস্তে আস্তে খেতে বাধ্য হবেন’।