১০ ধরনের মাথাব্যথার কারণ

সাস্থ্যকথা/হেলথ-টিপস February 23, 2017 1,390
১০ ধরনের মাথাব্যথার কারণ

সময়ে-অসময়ে সব মানুষের মধ্যেই সাধারণ একটি উপসর্গ হিসেবে মাথাব্যথা হতে দেখা যায় এবং প্রত্যেকের কাছেই ব্যাপারটা বিরক্তিকর। কখনো কখনো পুরো মাথা জুড়ে বা মাথার অংশবিশেষ জুড়ে প্রায়ই অনুভূত ব্যথা আমাদের দৈনন্দিন কর্মকান্ডের প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।


তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, মাথাব্যথার রয়েছে বিভিন্ন প্রকারভেদ এবং সেই সঙ্গে রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু কারণ। মাথাব্যথার কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হচ্ছে- মাইগ্রেন, দুশ্চিন্তা এবং ক্লাস্টার হেডেক। এছাড়া অসুস্থতা, আঘাত কিংবা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে।


আজকে আমরা আলোচনা করব মাথাব্যথার ১০টি ভিন্ন ভিন্ন কারণ নিয়ে। কারণগুলো জানা থাকলে অভ্যাস এবং খাবার-দাবারে পরিবর্তন এনে সহজেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।


১. অ্যালার্জি : মাথাব্যথার প্রধানতম কারণ অ্যালার্জি। অ্যালার্জির কারণে স্নায়ুতন্ত্রে ব্লকেজ এর সৃষ্টি হয় ফলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারণে মাথায় ব্যথা অনুভূত হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শানুযায়ী অ্যান্টি-হিস্টামিন সেবন করা যেতে পারে।


২. সাইনোসাইটিস : সাইনোসাইটিস জনিত মাথাব্যথা সাধারণত কপাল জুড়ে, চোখের চারপাশে এবং গালে অনুভূত হয়। অ্যান্টিবায়োটিক এবং স্প্রে জাতীয় ওষুধের মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।


৩. অ্যালার্ম : প্রচন্ড মানসিক চাপের মূহূর্তগুলোতে আমাদের কপালে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। ডাক্তারি পরিভাষায় যার নাম ‘অ্যালার্ম’। উত্তেজনা কিংবা মানসিক কষ্টের কারণেও এমন হতে পারে। এ ধরনের মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রধান শর্ত চাপ সামলে নিতে শেখা। ‘ব্রিদিং (শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া) এক্সারসাইজ’ এর বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে। পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমেও এ ধরনের ব্যথা দূর করা সম্ভব।


৪. ক্লাস্টার পেইন : প্রচন্ড যন্ত্রণাদায়ী এই ব্যথা সাধারণত চোখের চারপাশ জুড়ে অনুভূত হয়। এর কারণে চোখে পানি চলে আসা কিংবা নাকের মধ্যে অস্বস্তি হতে পারে। এই ধরনের মাথাব্যথা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। চিকিৎসকেরা এখনো এর সঠিক কারণ নির্ধারণ করতে না পারলেও বলে থাকেন সাধারণত অ্যালকোহল এবং ধূমপানের প্রভাবে এমনটা হতে পারে। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।


৫. ক্যাফেইন এর প্রভাব : প্রচুর কফিপানের অভ্যাস থাকলে সময় মতো কফি না পান করতে পারলে এক ধরনের মাথাব্যথা অনুভূত হয়। এমন অবস্থা দেখা দিলে ধীরে ধীরে কফি পান ত্যাগ করা উচিত। কারণ কফিতে থাকা ক্যাফেইন আসলে এক ধরনের নেশা উদ্রেককারী বস্তু।


৬. মাইগ্রেন : এটি আসলে এক ধরনের বিশেষ বংশানুক্রমিক রোগ। পরিবারের কোনো সদস্যের মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে এটি পরবর্তী প্রজন্মে ছড়ায়। এক্ষেত্রে মাথার যেকোনো একপাশে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়। মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত ৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এমন হলে আক্রান্ত ব্যক্তির বমি বমি ভাব কিংবা বমি এবং আলো ও শব্দে অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন। সঠিক ওষুধ সেবনের মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।


৭. মানসিক চাপজনিত মাথাব্যথা : মানসিক চাপজনিত কারণে মাথাব্যথা একটি সাধারণ ব্যাধি। সাধারণত পুরো মাথা জুড়ে, কপালের পার্শ্বদেশ এবং ঘাড়ের নিচে এই ব্যথা অনুভূত হয়। মাংসপেশীতে অধিক চাপ, অধিক শারীরিক এবং মানসিক পরিশ্রমের কারণে এই ধরনের মাথাব্যথা অনুভূত হয়। অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকা এবং পরিমিত বিশ্রামের মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।


৮. টিএমজে : টেমপোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট (টিএমজে) একটি মারাত্মক মাথাব্যথার উপসর্গ। কপাল এবং চোয়ালের পেশীতে সংকোচনের কারণে এই ধরনের মাথাব্যথা অনুভূত হয়। পরিমিত বিশ্রামের মাধ্যমে এ ব্যথা দূর করা সম্ভব।


৯. হজমে গন্ডগোলজনিত মাথাব্যথা : হজমে গন্ডগোলের কারণেও মাথায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে। অনেক সময় গ্রহণ করা খাবারের প্রভাবে এমন হয়। আবার বিপরীতভাবে ক্ষুধার কারণেও মাথায় ব্যথা অনুভূত হয়। এছাড়া, ফুড অ্যালার্জির কারণেও এমন মাথাব্যথা হতে পারে। প্রায়ই এমন উপসর্গ দেখা দিলে খাদ্যাভাস পরিবর্তন করা উচিত।


১০. জায়ান্ট সেল আথ্রাইটিস : ধমনীতে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর প্রদাহের কারণে অনুভূত মাথাব্যথাকে ‘জায়ান্ট সেল আথ্রাইটিস’ নামে অভিহিত করা হয়। সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে চোখের দৃষ্টি কমে যেতে পারে। এটি স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ায়। এমন অবস্থায় দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।