স্ট্রোক প্রতিরোধ করুন ৭টি উপায়ে

সাস্থ্যকথা/হেলথ-টিপস February 22, 2017 856
স্ট্রোক প্রতিরোধ করুন ৭টি উপায়ে

‘স্ট্রোক’ ছোট একটি শব্দ কিন্তু এর ব্যাপ্তি ব্যাপক। স্ট্রোক মানে নিশ্চিত মৃত্যু না হলেও মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া। মস্তিষ্কে রক্তচলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয় তখন মস্তিষ্কের কোষগুলির মৃত হতে শুরু করে যা অনেকসময় প্রাণ হারানোর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একজন মানুষের বয়স যত বাড়তে থাকে তার স্ট্রোকের ঝুঁকি ততই বৃদ্ধি পায়। সাধারণত ধারণা করা হয় অতীত স্ট্রোকের ইতিহাস স্ট্রোকের জন্য দায়ী। শুধু ইতিহাস স্ট্রোকের কারণ নয়, আরো কিছু কারণ রয়েছে স্ট্রোক হওয়ার। ড.নাটালিয়া রোস্ট, প্রফেসর অফ হাভার্ড মেডিক্যাল স্কুল এন্ড সহকারী পরিচালক অফ অ্যাকিউট স্ট্রোক সার্ভিস অ্যাট ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল বলেন,"আপনার যদি স্ট্রোকের কারণগুলো জানা থাকে এবং এটি প্রতিরোধে জন্য যা করণীয় তা যদি মেনে চলতে পারেন, তবে আপনি স্টোকের ঝুঁকি অনেকখানি হ্রাস করতে পারবেন"। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম এমন কিছু উপায় নিয়ে আজকের এই ফিচার।


১। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

স্ট্রোকের অন্যতম একটি কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ। অতিরিক্ত চিন্তার ফলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় রক্তচাপ ওঠা নামা করছে, রক্তচাপের প্রকৃতির এই ধরনের তারতম্য হলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। রক্তচাপ সাধারণত ১২০/৮০ বা ১৪০/৯০ এর নিচে রাখার চেষ্টা করুন। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে লবণ কম খান (দিনে ১৫০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ খাবেন না)। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ কাপ ফল এবং সবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন।


২। ওজন কমান

শরীরে অতিরিক্ত মেদ স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বহু গুণ। অতিরিক্ত মেদের কারণে শরীরের কোলেস্টরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক কাজে বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে।


৩। ব্যায়াম করুন

সপ্তাহে ৫ দিন ২০ থেকে ২৫ মিনিট ব্যায়াম করুন। তা জগিং হোক বা স্কিপিং বা জোরে হাঁটা হোক কিংবা যোগাসন, যেটা করতে আপনি পছন্দ করেন সেটি করুন। সকালে এবং দুপুরে খাবার আগে ১৫ মিনিট হাটুন। এটি আপনার স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দেবে।


৪। ধূমপান ত্যাগ করুন

ধূমপান স্ট্রোকের প্রধান কারণ। এটি আমাদের ফুসফুসকে নষ্ট করে দেয়। ধূমপানের কারণে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়়িয়ে দেয়। ড. রোস্ট বলেন “নিয়মিত ব্যায়াম ওজন কমানোর পাশাপাশি ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে, স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য”।


৫। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখুন

উচ্চ ব্লাড সুগার রক্তনালী ক্ষতি করে এর অভ্যন্তরে বাঁধা সৃষ্টি করে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখুন। ডায়েট মেনে চলুন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন।


৬। হৃদযন্ত্রের দিকে নজর রাখুন

অনিয়মিত হার্ট বিট ধমনীতে বাঁধা তৈরি করে। যা কারণে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। শ্বাস কষ্ট বা হার্টের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরান্নপন্ন হওয়া উচিত।


৭। ফাস্ট (FAST) কে জানুন

অধিকাংশ মানুষেরা স্ট্রোকের প্রাথমিক কারণ বুঝতে পারে না। যার কারণে সময়মতো চিকিৎসার অভাবে হারাতে হয় প্রাণ। একটু লক্ষ্য করলে স্ট্রোক হয়েছে কিনা বোঝা সম্ভব। এইক্ষেত্রে ফাস্টকে মনে রাখুন। F=Face (মুখ) আক্রান্ত ব্যক্তির মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে হাসতে বলুন। যদি দেখেন তার হাসতে সমস্যা হচ্ছে অথবা হাসার সময় মুখের একাংশ বাঁকা হয়ে আসছে এবং অপর অংশ শক্ত হয়ে আছে, তবে স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশ প্রবল। A=Aram (বাহু) দুই হাত মাথার উপর উঁচু করে তুলতে বলুন। এতে যদি তার কষ্ট হয় এবং দুই হাত বা যে কোনোও এক হাতে ব্যাথা লাগে তবে স্ট্রোকের সম্ভাবনা রয়েছে। S=Speech (কথা বলা) আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাধারণ একটি বাক্য বলতে বলুন, যদি দেখেন কথাটি বলতে তার সমস্যা হচ্ছে, বা কথা জড়িয়ে যাচ্ছে তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। T=Time (সময়) এই লক্ষণগুলো যেকোনো একটি দেখা দিলে তাকে অব্যশই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।


স্ট্রোকের আরেকটি অন্যতম কারণ হল স্ট্রেস। দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত কাজের চাপ আপনাকে স্ট্রোকের দিকে নিয়ে যায়। দুশ্চিন্তাকে জীবন থেকে দূরে রাখুন, স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে অনেকখানি।