চাপ কমাতে বই পড়ুন!

লাইফ স্টাইল February 15, 2017 902
চাপ কমাতে বই পড়ুন!

হাজারো চাপে কোনো কোনো দিনে আমরা অস্থির সময় কাটাই। অফিসের কাজ, বাড়ির কাজ, সংসারের চিন্তা, ক্যারিয়ারসহ দৈনন্দিন বিষয়ের হ্যাপায় আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ি। চাপ কমানোর জন্য কত-কী-ই করার চেষ্টা থাকে আমাদের। নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া আর ইতিবাচক মনন বিকাশের চেষ্টায় চাপ কমানোর চেষ্টা করি আমরা। দিন শেষে কিছুটা চাপ হয়তো কমে, পুরোপুরি কমে না।


নানা মাত্রার চাপে কিংবা ব্যস্ততার কারণে কেউ কেউ একটা অভ্যাস হারিয়েই ফেলছি। তা হলো বই পড়া। গল্প-সাহিত্য-রম্য কিংবা ইতিবাচক জীবন বা ক্যারিয়ারবিষয়ক বই তেমনই ধরার সুযোগ হয়ে ওঠে না আমাদের। ব্যস্ততাই যে আসল, বই কখন পড়া যায় বলুন তো?


চাপ কমাতে বই কেন পড়বেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক খায়ের জাহান জানান, ‘বই পড়ার অভ্যাস ব্যস্ত জীবনের অনেক চাপ কাটাতে দারুণ কার্যকর। শুধু শিক্ষার্থীই নয়, পেশাজীবনে বই পড়ার অভ্যাস নিত্যদিনকার চাপ কমায়।


’ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এই শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবীদের পাঠ্যক্রমের বাইরে অন্য বিষয়ে বই পড়ার নিয়মিত অভ্যাসের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘ক্লাস কিংবা ক্যারিয়ারের জন্য কাজের বইয়ের পাশাপাশি আত্মজীবনী কিংবা নিজের আগ্রহের বিষয়গুলোর ওপর বই পড়লে মানসিক চাপ কমে যায়।’


বই পড়ে চাপ কাটানোর কার্যকরী সম্পর্কে মনোবিদ এ্যানি বাড়ৈ জানান, ‘দৈনন্দিন মানসিক চাপ কাটিয়ে তোলার জন্য মনের ভালো বন্ধু হিসেবে বইকে প্রতিষ্ঠা করা যায়। বই পড়লে মানসিক প্রশান্তি ও সঙ্গে সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক অস্থিরতাও বেশ দ্রুত কার্যকর উপায়ে কাটিয়ে তোলা যায়।’


ছয় মিনিট বই পড়ুন, চাপই থাকবে না!

সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা নিবন্ধ থেকে জানা যায়, কোনো কারণে মানসিক চাপ অনুভূত হলে বই পড়লে চাপ কমে যায়। গান শোনা কিংবা ব্যায়াম করে চাপ কমানোর চেয়ে বই পড়ে নাকি বেশি চাপ দ্রুত কমানো সম্ভব। বই পড়ার অভ্যাসে বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা বলছে, ৬৮ ভাগ পর্যন্ত মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে কমিয়ে আনা সম্ভব। চা খেলে মাত্র ৫৪ ভাগ মানসিক চাপ কমে যায়, আর ব্যায়াম বা হাঁটা-চলা করলে ৪২ ভাগ। ভিডিও গেমস খেললে মাত্র ২১ শতাংশ চাপ কমানো যায় বলে পরীক্ষায় তথ্য পাওয়া গেছে।


প্রায় ১৯ দেশের চার হাজার মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে এই গবেষণা প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, মানসিক চাপের সময় ছয় মিনিট বই পড়লে হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক হয়ে আসে, কোনো পেশিতে টান অনুভূত হলেও এ সময় তা হালকা হয়ে যায়।


বই পড়ে চাপ কমাতে যা করবেন

* বাড়িতে বিভিন্ন ঘরে বিভিন্ন বিষয়ে বই আর সাময়িকী রাখুন। যখনই মানসিক অস্থিরতা অনুভব করবেন, তখনই যেকোনো বই নিয়ে পড়তে শুরু করুন।


* কর্মস্থলের অফিস ড্রয়ারেও বই রাখার অভ্যাস করুন। অফিসের কাজে ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে খেয়াল রেখে বই/ম্যাগাজিন পড়ার অভ্যাস করুন।


* কর্মস্থলে বেশি মানসিক চাপ অনুভব করলে সহকর্মী ও অফিসের বসের কাছ থেকে সময় নিয়ে বই পড়ার অভ্যাস করতে পারেন। খেয়াল করলে দেখবেন, যে সহকর্মী বই পড়েন তাঁকে কিন্তু অন্যরা তেমন বিরক্ত করেন না। অফিসে বই পড়ার নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তুলুন।


* বই কিংবা ম্যাগাজিন পড়ার সময় বুকমার্ক ব্যবহার করে কতটুকু পড়েছেন তা খেয়ালে রাখুন।


* অফিসে আসা-যাওয়ার পথেও ব্যাগে পেপারব্যাক বইগুলো রাখুন। সময় পেলেই বইয়ের দুনিয়ায় হারিয়ে যান।


* ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করলে গাড়িতে বই রাখুন। যানজটে মুঠোফোন সামাজিক যোগাযোগ সাইটে সময় না দিয়ে বই পড়তে পারেন।


* স্মার্টফোনে বই পড়ার অভ্যাস করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে হুট করেই একটু ফেসবুকে ঢুঁ দেওয়ার অভ্যাস পরিহার করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।