জেনে নিন, গোসল করার সঠিক নিয়ম

লাইফ স্টাইল February 13, 2017 1,143
জেনে নিন, গোসল করার সঠিক নিয়ম

সকাল-বিকাল গোসল করি আমরা অনেকেই। এতে অনেকটা স্বস্তি পাওয়া যায়। মনে করি, কত পরিষ্কার হলাম। আবার আমাদের মধ্যেই অনেকে আছেন, দিনে তিনবার গোসল করেন, কিন্তু দায়সারাভাবে। কোনো মতে গায়ে ঝুপঝুপ করে পানি ঢেলে চলে আসেন। আবার অনেকে আছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে গোসল করেও পরিস্কার হন না। তাঁদের দেখে মনে হয় না, কস্মিনকালেও তাঁরা গোসল করেন না। আর যাঁরা কুঁড়ের বাদশা, তাঁরা এসবের ঊর্ধ্বে! সে যাই হোক, গোসলেরও একটা নিয়ম আছে। সঠিকভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হতে চাইলে হাতে ১৫ মিনিট সময় চাই। দায়সারাভাব ত্যাগ করতে হবে, আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করাও বন্ধ করতে হবে।


শরীর পরিস্কার

রুল ১ : প্রথমে একবালতি ইষদুষ্ণ গরম পানি নিন। ঠান্ডা পানিতে গোসল করে আরাম আছে, কিন্তু ঠান্ডা পানি ত্বকের ক্ষতি করে। ত্বক রুক্ষ করে তোলে। ফলে হালকা গরম পানিই ভালো। এতে ত্বকেরও ক্ষতি হবে না আবার ক্লান্তিও দূর হবে। যাঁদের ঘুমের সমস্যা, তাঁদের সকলেরই হালকা গরম পানিতে গোসল করা জরুরি। কিন্তু মাথা ধোয়ার সময় কিন্তু গরম পানি ব্যবহার করবেন না। ঠান্ডা পানিই ব্যবহার করুন। গরম পানি চুল রুক্ষ করে তোলে।


রুল ২ : গোসলের সময় কাচা তোয়ালে বা গামছা নিয়ে বাথরুম যান। প্রথমে ভালো করে শরীরে পানি দিন। তারপর সাবান মাখুন। ত্বক অনুযায়ী সাবান ব্যবহার করুন। রুক্ষ ত্বকের জন্য গ্লিসারিন ব্যসড্ সাবান আর তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মিল্ক সোপ। যাঁদের সাধারণ বা নর্মাল ত্বক, তাঁরা যে কোনো সাবানই বেছে নিতে পারেন।


রুল ৩ : শরীর থেকে ময়লা দূর করতে স্ক্রাবিং খুব জরুরি। বিশেষ করে তৈলাক্ত ত্বক যাঁদের, সাবান মাখার সময় স্ক্রাবিং করে নিন লুফার সাহায্যে। এতে ময়লা দূর হয়। রোমকূপ থেকে অতিরিক্তি তেল বেরিয়ে আসে। তৈলাক্ত ত্বক পরিস্কার করতে স্ক্রাবার কাম বডি ওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।


রুল ৪ : স্ক্রাবিং করে সাবান মাখা হয়ে গেলে ভালো করে গা ধুয়ে নিন। এখানেই শেষ নয়। ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখতে তেল মাথা অত্যন্ত জরুরি। ৭০ শতাংশ মানুষ তেল মাখেন না। কিন্তু এটা খুব জরুরি। বিশেষ করে যাঁদের ত্বক রুক্ষ, তেল মাথা খুব জরুরি। বাজারে অনেক ধরনের বডি অয়েল কিনতে পাওয়া যায়। চন্দন দেয়া বডি অয়েল বেছে নিন। মাখতে পারে অলিভ অয়েল। তা না হলে বাড়িতে রাখা সরষের তেলও মাখতে পারেন।


তেল মাখার পর ছেড়ে দেবে না। মনে করবেন না গোসল সমাপ্ত। এরপর পরিস্কার তোয়ালে বা গামছা দিয়ে গা মুছে নিন।


চুল পরিস্কার :

রুল ৫ : গোসলের সময় মুখ ও পায়ের পাতায় বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। মুখে কখনোই গায়ে মাখার সাবান মাখবেন না। মুখের ত্বক অনুযায়ী উপযুক্ত ফেসওয়াশ বেছে নিন। স্নান করার পর দু’ফোটা ফেসওয়াশ আস্তে আস্তে মুখে মেখে ধুয়ে ফেলুন। পায়ের পাতা ও তলার জন্য স্ক্রাবিংয়ের ব্যবস্থা করুন। বাজারে পিউমিক স্টোন কিনতে পাওয়া যায়। তার সঙ্গে ব্রাশও পাওয়া যায় গোসলের শেষে হাতে সামান্য শ্যাম্পু নিয়ে পায়ের গোড়ালি ও তলায় ভালো করে মাখিয়ে নিন। তারপর প্রথমে পিউমিক স্টোন ও ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিস্কার করুন। দেখবেন পা ফাঁটার সমস্যা দূর হয়েছে নিমেষে।


রুল ৬ : শ্যাম্পু করার প্ল্যান থাকলে আগে শ্যাম্পু করা সেরে নিতে হবে। SLSযুক্ত শ্যাম্পু এড়িয়ে চলুন। Sodium lauryl sulphate। এটি শ্যাম্পুতে ফেনা তৈরি করে। এর সাহায্যে ক্ষণিকের জন্য চুল চকচকে হলেও চুলের ডগা ফাটিয়ে দেয়, স্বাভাবিক রংও নষ্ট করে। তাই এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করুন যাতে SLS উপাদানটি নেই। চুলের ধরন বুঝে বেছে নিন হার্বাল শ্যাম্পু।


রুল ৭ : অনেকে মনে করেন শ্যাম্পু করা মানেই চেটোয় অনেকটা শ্যাম্পু নিয়ে ফেনা তৈরি করে চুলে লাগানো, আর তারপর ধুয়ে ফেলা। এটা কিন্তু সঠিক পদ্ধতি নয়। আগের দিন রাতে তেল মেখে পরদিন শ্যাম্পু করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা-


রুল ৮ : প্রথমে ঠান্ডা পানিকে চুলে ধুয়ে মাথার তেল বের করে নিতে হবে। তারপর হাতে সামান্য শ্যাম্পু নিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করতে হবে। ফেনা হতে শুরু করলে জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। চুলকে জটমুক্ত রাখতে কন্ডিশনাক মাস্ট। সামান্য কন্ডিশনার চুলে মাখিয়ে মিনিট দুই অপেক্ষা করুন। দেখবেন, চুলের গোড়ায় যাতে কন্ডিশনার না লেগে যায়। তারপর পানি দিয়ে পুরো চুল ধুয়ে তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখুন।


* শরীর পরিস্কারের তোয়ালে আর মাথা মোছার তোলায়ে আলাদা করাই ভালো।


রোজ এভাবেই গোসল করুন। এতে বেশি সময় ব্যয় হয় না। কিন্তু আপনি পুরোপুরি পরিস্কার হয়ে যাতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার পরিচ্ছন্নতা আপনার দায়িত্ব। ভেতর থেকে পরিস্কার না হলে, চারপাশটাকেও পরিস্কার মনে হয় না।