কর্মস্থলে এখনো কেন হিংসা বিরাজমান এবং মোকাবিলার উপায়!

লাইফ স্টাইল February 8, 2017 626
কর্মস্থলে এখনো কেন হিংসা বিরাজমান এবং মোকাবিলার উপায়!

আমাদের বেশিরভাগেরই জীবনের নানা ক্ষেত্রে ঈর্ষা বা হিংসার অনুভূতি কাজ করে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রের মতো আর কোথাও এর মোকাবিলা করাটা এতটা কঠিন নয়। আপনি হয়তো আপনার সহকর্মীর প্রমোশনে তাকে অভিবাদন জানিয়েছেন। অথচ আপনি নিজেই ওই প্রমোশনটা পাওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। আর আপনি এও বিশ্বাস করেন যে, তিনি একজন কুঁড়ে লোক।


এছাড়া আপনি হয়তো আপনার সহকর্মী নাদিয়ার সঙ্গে আরো বন্ধুভাবাপন্ন হতে চান। কিন্তু তিনি এতোটাই সুসংগঠিত যে তা দেখে আপনার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। বিশেষকরে যখন আপনাদের বস এর জন্য তাকে সবসময় একটি পুরস্কার দেন।

কেউই এটা স্বীকার করতে পছন্দ করেন না যে তিনি তার কোনো সহকর্মীর প্রতি ঈর্ষা অনুভব করেন।


কিন্তু মোটের ওপর আমাদের এই হীন অনুভূতিগুলো কি পেছনে খেলার মাঠেই ফেলে আসা উচিৎ ছিল না? বা অন্তত পাশের বাড়ির বালকটিকে দিয়ে আসা উচিৎ ছিল না যে কিনা যা ইচ্ছা হয় তাই খেতে পারে?


সমস্যাটি হলো কঠিন অর্থনীতি আমাদের মানসিক চাপ এবং নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতিকে আরো বেশি তীব্র করেছে। যা আবার প্রায়ই আমরা কর্মস্থলে যে ঈর্ষা অনুভব করি তাকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। এতে আমরা আরো বেশি সংবেদনশীল উঠি এবং নিজেকে কিউবিকলে বসে নিজের ভেতরকার দানবের সঙ্গে লড়াইরত অবস্থায় আবিষ্কার করি।


আপনার হয়তো হঠাৎকরেই মনে হতে পারে যে, আপনার কোনো সহকর্মীর আপনার ডেস্কটা অগোছালো হওয়ার কারণে আপনি কী ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে আছেন সে সম্পর্কিত মন্তব্যটি ঠিক বন্ধুভাবাপন্ন নয়। এবং একটি স্পষ্ট অপমানজনক মন্তব্য। সহকর্মীদের যে কোনো মন্তব্য এবং এমনকি কৌতুকমূলক মন্তব্যও ব্যক্তিগতভাবে এবং নেতিবাচকভাবে নেওয়া হয়।


মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, আমরা প্রায়ই ঈর্ষা অনুভব করি যখন আমরা টের পাই যে কেউ আমাদের কাছ থেকে কোনো কিছু নিয়ে যাচ্ছে। যেটির প্রতি আমরা আবগেগতভাবে সংশ্লিষ্ট। ঈর্ষা সত্যিকার অর্থে তখনই আঘাত হানে যখন কোনো কিছু অনায্য বা পক্ষপাতদুষ্ট মনে হয়।


সুতরাং, কর্মক্ষেত্রে আপনি তখনই ঈর্ষা অনুভব করেন যখন কোনো সহকর্মী এমন কোনো প্রকল্পের দায়িত্ব পান যা হয়তো আপনারই পাওয়ার কথা ছিল। কারণ আপনি সিনিয়র হওয়ায় তার চেয়ে একটু বেশিই যোগ্য ছিলেন।


হিংসার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন অনুভূতি ঈর্ষা। ঈর্ষা হলো এমন কিছু পেতে চাওয়া যা আমাদের নেই। আর এ কারণেই আমরা যা চাই তা যখন অন্যদের পেতে দেখি আমরা তাদেরকে হেয় করার পথ খুঁজি। যেমন কেউ যখন প্রমোশন পায় তখন আমরা বলি তিনি অলস এবং তার নতুন দায়িত্ব পালনে তিনি ব্যর্থ হবেন।


যারা হিংসা বা ঈর্ষা অনুভব করেন তারা হয়তো অনেক সময় এই অনারামদায়ক এবং মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী চিন্তাগুলো দূরে সরিয়ে রাখতে চান। কিন্তু জানেন না ঠিক কীভাবে তা করতে হবে। আপনিও যদি নিজেকে এমন কোনো অবস্থানে দেখতে পান তাহলে চেষ্টা করুন:


১. অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে। আপনার নেতিবাচক অনুভূতিগুলো দূরে সরিয়ে রাখুন। বরং এর পরিবর্তে ভাবুন যে তিনি কাজটি পাওয়ার জন্য কী করেছেন। এমনটা কি হতে পারে যে তিনি তার কঠোর পরিশ্রমের বিষয়টি তুলে ধরার জন্য আপনার চেয়ে আরো বেশি চেষ্টা করেছেন এবং সঠিক লোকটির সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করেছেন। তিনি হয়তো আপনার চেয়ে অনেক বেশি স্মার্ট উপায়ে কাজটি করেছেন।


আপনার এই ব্যর্থতা আপনাকে নতুন কিছু শেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। সুতরাং এতে আপনার ভালো হয়েছে বলেই মেনে নিন।


২. ট্রিগার থেকে দূরে থাকুন। আপনি যদি নাদিয়ার সঙ্গে কথা

বলার ঈর্ষার অনুভূতির কারণে অসুস্থ বোধ করেন তাহলে তাকে এড়িয়ে চলুন। যতক্ষণ না আপনি পরিস্থিতিটা আরো ইতিবাচকভাবে দেখতে পারছেন।


৩. নিজের সঙ্গে সৎ হওয়াটাও জরুরি। আপনি আসলে ঈর্ষাপরায়ণ বা হিংসুক নন নিজেকে এটা বলার চেষ্টা করলেই আপনি এ থেকে রেহাই পাবেন না। তারচেয়ে বরং আপনার এমন অনুভূতির উৎসস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার কি এমন অনুভূতি হচ্ছে যে আপনি নিজেকে যে সম্মান বা স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য মনে করছেন তা আপনি পাচ্ছেন না? আপনার কি এমন মনে হচ্ছে যে আপনার ক্যারিয়ারটা ভুল পথে আছে এবং এতে কি আপনি অসহায় এবং আতঙ্কিত বোধ করেন?


৪. অন্য কোনো ক্ষেত্রে সাফল্য খুঁজুন। আপনার মন এবং আবেগগুলোকে ভিন্ন কোনো দিকে পরিচালিত করুন এবং অন্য কোনো লক্ষ্য অর্জনে নিয়োজিত করুন। নিজের সময়কে আরো উন্নত করার জন্য কাজ করুন। গুরুত্বপূর্ণ কোনো সম্মেলন সংগঠিত করার চেষ্টা করুন। অথবা নিজের একটি ব্লগ চালু করুন। এখনই সময় সেসব জিনিসের ওপর মনোযোগ নিবদ্ধ যেসব আপনাকে অনন্য করে তুলবে। যাতে যখন আপনি ঈর্ষা বা হিংসার অনুভূতিতে আক্রান্ত তখন এমন কিছু নিয়ে পরিষ্কারভাবে আপনার স্মৃতিতে উদয় হয় যা আপনি ভালোভাবে সম্পন্ন করেছেন।


আক্রান্ত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। তবে এমন অনুভূতি আপনার জীবনটাকে বিষিয়ে তুলছে না তা নিশ্চিত করার জন্য ওই অনুভূতির উদ্রেককারী পরিস্থিতিটাকে শিক্ষামূলক এবং অভিজ্ঞতামূলক হিসেবে বিবেচনা করুন। আপনি যা অনুভব করছেন তা আপনি কীভাবে গ্রহণ করতে পারেন সে ব্যাপারে ভাবুন এবং আরো ভালো একজন মানুষ এবং ভালো কর্মী হয়ে উঠুন।