মৌমাছির কামড় খেতে পাহাড় বেয়ে ওঠেন এরা!

ভয়ানক অন্যরকম খবর January 28, 2017 1,584
মৌমাছির কামড় খেতে পাহাড় বেয়ে ওঠেন এরা!

বহু তাবড় তাবড় পর্বতারোহীকে পাল্লা দিতে পারেন এরা। রক ক্লাইম্বিং, দুর্গম পথে ট্রেকিং বা পাহাড়ের চূড়ায় নিজের পায়ের ছাপ ফেলতে যারা ভালোবাসেন তাঁদের মতই তরতর করে পাহাড় বেয়ে উঠে পড়েন এরা। কিন্তু পাহাড়ের চূড়ায় উঠে রেকর্ড গড়া, ট্রেকিং করা কোনটাই এদের লক্ষ নয়। এরা পাহাড় বেয়ে ওঠেন শুধুমাত্র মৌমাছির কামড় খেতে। নেপালের গুরুং প্রজাতির মানুষরা জীবিকার জন্যও এই কাজ করেন না।


কষ্ট করে পাহাড়ে উঠে একটা বাঁশের উপর ভর করে নিজেদের জীবন বিপন্ন করেন শুধুমাত্র অ্যাড্রিনালিনের দায়। এই মধু থেকেই তৈরি হয় সাইকেডেলিক ড্রাগ। দুই ফোটা পেটে পড়লেই অন্য দুনিয়ায় গিয়ে ঘুরে আসার জন্য যথেষ্ট। আর সঙ্গে তো আছেই মধুর মিষ্টি স্বাদ। সেই টানেই বার বার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর মৌমাছির কামড়ে রক্তাক্ত হয়ে উঠে পড়েন পাহাড় বেয়ে।


শুধু এই মাদকদ্রব্য না। এই মধু ওষুধ তৈরি করতেও কাজে লাগে। কিন্তু এ গুরুংরা এত কষ্ট করেন শুধুই এই মৌমাছির চাক থেকে বের করা মাদকযুক্ত নির্যাসের স্বাদ পেতে। এটাই তাঁদের কাছে পুরষ্কারের সমান। হাতে তৈরি হালকা বাঁশের লাঠির উপর ভর করে এরা এই মধু জোগাড় করেন। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু নেশার কাছে জীবন তাঁদের কাছে নিমিত্ত মাত্র।


এই মাদক মধু বা ‘ম্যাড হানি’-র ইতিহাসটা ঘাঁটলে দেখা যাবে, খৃষ্টপূর্ব ৫ম শতকে এক গ্রীক ঐতিহাসিক জেনোফন এই মধুর প্রতিক্রিয়া নিয়ে লিখেছিলেন। তাঁর সেনাবাহিনীর অনেকেই এই মধুর স্বাদে মুগ্ধ হয়ে বিপাকে পড়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, “যে সমস্ত সেনা এই মধু খেয়েছিলেন, তারাই জ্ঞান হারিয়েছিলেন, কেউ বমি করছিলেন, সোজা হয়ে দাঁড়াতে সক্ষম ছিলেন না কেউ। যারা খুব অল্প পরিমাণে খেয়েছিলেন তারা মাতালের মত হুঁশহীন হয়েছিলেন। আর যারা অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়েছিলেন তারা প্রায় মরণাপন্ন হয়ে গেছিলেন।


প্রত্যকে মাটিতে শুয়ে ছিলেন। পরদিন দেখা যায় কেউ মারা যাননি, হুঁশও ফিরে এসছিল। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ দিন তাঁদের শক্তি দেখে মনে হচ্ছিল তাঁরা যেন খুব পুষ্টিকর কিছু খেয়েছেন”।


অর্থাৎ এই মধু খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংজ্ঞা হারালেও কিছু পরে বোঝা যায় এর আসল প্রতিক্রিয়া। তাই এই মধুর দামও বেশ ভালোই। তবে এত বেশি দাম হলেও গুরুংরা সেই হাতে গড়া মইতে করেই মৌচাক ভাঙ্গতে ওঠেন। এ প্রচলন নেপালে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। পাহাড়ের মানুষদের শক্তি সমতলের মানুষদের থেকে কয়েক গুণ বেশি হয়। সে রকমই এই গুরুংদের শিড়দাঁড়া আর আর পেশীতে যেমন জোর আছে, তেমনই তাঁদের মনেও রয়েছে জোর। তাই তাঁরা এই প্রচলন চালিয়ে নিয়ে যেতে আজও সক্ষম।


সূত্র: কলকাতা ২৪