গণিত ও বাংলাদেশ নিয়ে ভালো করতে হলে!

সাহায্য ও পরামর্শ January 9, 2017 4,532
গণিত ও বাংলাদেশ নিয়ে ভালো করতে হলে!

লিখিত পরীক্ষায় যে জায়গায় সবচেয়ে বেশি নম্বর তোলার সুযোগ আছে, তা হলো গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা।


এতে চেষ্টা করলে নব্বইয়ের বেশিও পাওয়া যায়; আবার ঝুঁকিও আছে। না পারলে অতি দ্রুতই নম্বর কাটা শুরু হবে।


তবে আশার কথা হলো, গণিতের একটা পরিসীমা আছে। ভালো করে চর্চা করলে কমন পড়বে বা কমনসেন্স দিয়ে মিলিয়ে দিয়ে আসা যাবে। আর মানসিক দক্ষতা হলো অনেকটা ৫০ নম্বরের প্রিলির মতো। যেকোনো বিষয় আসতে পারে।


এখানে গাণিতিক যুক্তিতে ৫০ নম্বর বরাদ্দ আছে যাতে বীজগণিত, পাটিগণিত ও জ্যামিতি তিনটি অংশ থেকেই প্রশ্ন হবে। ৫ নম্বর করে ১০টির উত্তর করতে হতে পারে। আবার কিছু জোড়া ও একক প্রশ্নও থাকতে পারে। সেটি নিয়ে চিন্তা না করলেও চলবে। আর মানসিক দক্ষতায় ৫০টি বিভিন্ন বিষয়ে এমসিকিউর উত্তর করতে হবে। প্রতিটি ভুলের জন্য অর্জিত নম্বর থেকে ০.৫০ নম্বর কাটা যাবে। এটিই লিখিত পরীক্ষার একমাত্র নেগেটিভ মার্কিং। প্রস্তুতির জন্য কী করা যায়, তা বলা যাক।


অ) বিগত বছরের গণিত ও মানসিক দক্ষতার অংশগুলো খুব ভালো করে শেষ করবেন। এমনকি জ্যামিতিগুলোও। কারণ গণিত প্রশ্ন রিপিট হতে দেখা গেছে।


আ) ১৯৯৭ সালের পূর্বের নবম-দশম শ্রেণির গণিত বইয়ের একটা গাইড সংগ্রহ করে নেবেন। এটি লিখেছেন দেবব্রত চাকী। মূল বইটা আর পাওয়া যায় না। এর পাটিগণিত অঙ্কগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


ই) বর্তমান নবম-দশম শ্রেণির বীজগণিত ও জ্যামিতি বই উদাহরণসহ শেষ করতে হবে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এখান থেকে প্রশ্ন হবেই।


ঈ) জ্যামিতি অংশের জন্য অধ্যায় দুই ও অধ্যায় পাঁচ ভালো করে পড়বেন। কমপক্ষে ২০টি উপপাদ্য আয়ত্তে রাখবেন।


উ) বাসায় গণিত অনুশীলন করার সময় শর্টকাট করবেন না। পুরো অঙ্ক লিখে করবেন। জ্যামিতির ক্ষেত্রে পুরো জ্যামিতি না দেখে লিখবেন। না হলে পরীক্ষার হলে গিয়ে মিলাতে পারবেন না। তাই সাবধান।


ঊ) কোনো অধ্যায় বা অঙ্ক যদি খুব কঠিন লাগে, তা করতে গিয়ে প্রচুর সময় নষ্ট করবেন না। ছেড়ে দিন।


ঋ) অন্যান্য বিষয়ের জ্ঞান আপনাকে মানসিক দক্ষতায় ভালো করতে সাহায্য করবে। এই অংশটি সতর্কভাবে উত্তর করবেন। প্রশ্ন খুব বেশি কঠিন বা অজানা হলে কম উত্তর করবেন। কারণ নেগেটিভ মার্কিং আছে কিন্তু, যা দাগানোর সময় অনেকেই ভুলে যান।


এ) বাজার থেকে যেকোনো একটি গণিত লিখিত গাইড সংগ্রহ করে নেবেন। ওরাকল হতে পারে।


ও) রিভিশন করার সময় সব অঙ্ক করতে যাবেন না, শুধু কঠিন অংশগুলো দেখবেন।


বাংলাদেশ বিষয়াবলি নিয়ে বলছি। বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ২০০ নম্বর বরাদ্দ আছে এবং সময় ৪ ঘণ্টা। ৪০টি ছোট প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। সময়ের সঙ্গে মিল রেখে উত্তর শেষ করে আসাই মূল চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ বিষয়াবলি পরিধি অনেক বড়। তা ছাড়া এর অর্জিত জ্ঞান অন্যান্য বিষয় যেমন বাংলা ও ইংরেজি রচনায় কাজে লাগে। তাই একে খুব গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে। বিশেষ করে তথ্য মাথায় রাখতে হবে। তথ্য জানা থাকলে বডি দাঁড় করাতে পারবেন।


বাংলাদেশ বিষয়াবলি ভালো করতে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন:


ক) বিগত বিসিএস পরীক্ষার শুধু টীকা ও ছোট প্রশ্ন পড়বেন। এখানে কিছু বিষয় আছে, যা বর্তমানে গুরুত্ব হারিয়েছে বা আর নেই তা বাদ দিন।


খ) সমসাময়িক বিষয় ও সাধারণ জ্ঞান নিয়ে প্রকাশিত মাসিক ম্যাগাজিন থেকে ইংরেজি ও বাংলা প্রবন্ধ অবশ্যই পড়বেন।


গ) নবম-দশম শ্রেণির ইতিহাস বইটি আর একবার রিডিং দিয়ে দেবেন।


ঘ) বাংলাদেশ সংবিধান থেকে এক থেকে ৪৭ নম্বর অনুচ্ছেদ পর্যন্ত খুব ভালো করে পড়বেন। এরপরের অনুচ্ছেদগুলো বাছাই করে পড়বেন। আর সংবিধান লেখার সময় নিজের ভাষায় লিখবেন।


ঙ) অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৬ থেকে বাছাই করে বেশ কিছু তথ্য পড়ে নেবেন। আর ছক মুখস্থ করার প্রয়োজন নেই। শুধু প্রথম ও সর্বশেষ তথ্য, হার বা চিত্র মাথায় রাখলেই হবে।


চ) প্রফেসর মোজাম্মেল হকের লেখা উচ্চমাধ্যমিক পৌরনীতি ও সুশাসন দ্বিতীয় পত্র বইটি পড়বেন। ইতিহাস ও রাজনৈতিক ঘটনাবলি মনে রাখলেই হবে।


ছ) সমসাময়িক জাতীয় ও আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভালো করে পড়বেন। যেমন জেলা পরিষদ নির্বাচন ২০১৬।


জ) ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন পড়ার সময় পয়েন্ট, উক্তি, তথ্য, গ্রন্থের নাম ইত্যাদি বেশি মনে রাখবেন।


ঝ) সম্ভব হলে বিভিন্ন বিষয়ে ছোট ছোট করে নিজের মতো করে নোট করতে পারেন। পরীক্ষার আগে রিভিশনে কাজে লাগবে।


ঞ) সম্পাদকীয় সমাচার নামে একটি পুস্তিকা সংগ্রহ করে নিতে পারেন, যাতে পত্রিকা থেকে সংগৃহীত সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজি ও বাংলা কলাম আছে।


ট) বাজারে প্রচলিত যেকোনো একটি বাংলাদেশ বিষয়াবলি লিখিত গাইড সংগ্রহ করে নেবেন। একটিই যথেষ্ট।


ঠ) যেকোনো মূল্যেই হোক, পরীক্ষায় সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসবেন। প্রয়োজনে কম করে লিখবেন। কম জানা থাকলেও ধারণার ওপর কিছু একটা লিখে দিয়ে আসবেন।


ড) অন্যান্য বিষয়ের মতো বাংলাদেশ বিষয়গুলোতে রেফারেন্স দেওয়ার চেষ্টা করবেন। যত রেফারেন্স ও উদ্ধৃতি থাকবে, লেখা তত ভারী।


ঢ) প্রতিটি প্রশ্নের শুরুতে ছোট্ট একটা ভূমিকার মতো থাকবে এবং শেষে অল্প করে সমাপনী বক্তব্য দিয়ে দেবেন। সেটা দু-তিন বাক্যেও হতে পারে।


তাই সংবাদপত্রের যে টপিকস পড়বেন এবং নোট করবেন, তা নিচে দেওয়া হলো।


* সড়ক দুর্ঘটনা, কারণ, চিত্র ও নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, তেল ও গ্যাস উৎপাদন এবং পরিকল্পনা বিশ্ব ও বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রতিবেদন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ইরান, ফিলিস্তিন, ইসরায়েল, ভারত ইত্যাদি দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, ঢাকার যানজট চিত্র, নগরের অবস্থা, দুর্নীতির চিত্র


* পোশাক, চামড়া ও পর্যটনশিল্প

* আইসিটি অবস্থা (মোবাইল ও ইন্টারনেট),পরিবেশবিষয়ক প্রতিবেদন

* ব্যাংকিং সেবা ও সামগ্রিক হালচাল

* নারীবিষয়ক খবর, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সমুদ্র অর্থনীতি

* জিডিপি পরিস্থিতি

* গুরুত্বপূর্ণ দিবসের প্রতিপাদ্য

* বিদেশে কর্মী পাঠানোর চিত্র ও প্রবাসী-আয়

* মাদক পরিস্থিতি

* রপ্তানি ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের চিত্র

* গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সম্মেলন ও প্রতিপাদ্য

* চিকিৎসাসেবার বর্তমান চিত্র

* বিশেষ ক্রোড়পত্র ( যেমন ৭, ৮, ২৬ মার্চ, ২১ ফেব্রুয়ারি, ৫ জুন)

* বাংলাদেশি খেলোয়ার ও দলের যেকোনো বড় অর্জন।

* সরকারের মেগা প্রকল্পর প্রতিবেদন (যেমন মেট্রোরেল)

* ঢাকায় নিযুক্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশের রাষ্ট্রদূত

* উগ্রপন্থী সংগঠনবিষয়ক প্রতিবেদন

* শিশু-কিশোরদের অবস্থা ও প্রতিবেদন এবং নির্যাতন

* চলমান সংকট (বিশ্ব ও বাংলাদেশ)


এভাবে যদি ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন এবং পরীক্ষার খাতায় ঠান্ডা মাথায় উপস্থাপন করে আসতে পারেন, গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা এবং বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ভালো একটা নম্বর আসবে প্রত্যাশা করি। তাই সময় নষ্ট না করে কাজে লেগে পড়ুন। ধন্যবাদ সবাইকে।


লেখক: প্রশাসন ক্যাডার (দ্বিতীয় স্থান), ৩৪তম বিসিএস।