ডট বাংলা ডোমেইন উদ্বোধন

ইন্টারনেট দুনিয়া January 1, 2017 3,150
ডট বাংলা ডোমেইন উদ্বোধন

চালু হল ডটবাংলা।


শনিবার দুপুরে গণভবন হতে ডটবাংলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী ও বিটিসিএল এমডি মাহফুজ উদ্দিন আহমদ।


আর এর মধ্যে দিয়েই শুরু হল ইন্টারনেট দুনিয়ায় বাংলার ভাষার পথ চলা। ইন্টারনেটে রাষ্ট্রীয় ভাষার এই ব্যবহার এখন হতে বিশ্বজুড়ে জাতীয় পরিচয়েরও স্বীকৃতি ।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা ডোমেইন চালু হলে আইসিটি খাতে ব‌্যবসার আরও প্রসার ঘটবে। যারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণার সমালোচনা করেছিলেন, তারাও ডট বাংলা ডোমেইন ব‌্যবহার করতে পারবেন।’


ডটবাংলায় ডোমেইন পাওয়া যাবে এক হাজার টাকায়। এই টাকা বছর প্রতি ৫০০ টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি হিসেবে এককালীন পরিশোধ ধরা হবে। মানে ডোমেইন নিতে হলে প্রথমেই দুই বছরের ফি দিতে হবে।

এতে বিশেষ শব্দের ডোমেইনের ক্ষেত্রে ফি ধরা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এই ডোমেইনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, কোম্পানি ও সংস্থাকে।


মেয়াদ শেষে ডোমেইনের নবায়ন ফি দিতে হবে বছর প্রতি ৫০০ টাকা। মেয়াদ শেষে নবায়নের ক্ষেত্রে এক মাস ও তিন মাস সময়ের বিলম্বে ৫০০ ও এক হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। আর ৩ মাসের মধ্যে নবায়ন না করলে ডোমেইন হারাতে হবে।


কেউ ডোমেইন বিক্রি করলে তাতে মালিকান পরিবর্তনের ফি রাখা হয়েছে ১৫০০ টাকা। ডোমেইন কেনার সময় যদি কেউ একসঙ্গে ৫ বছর ও ১০ বছরের ফি পরিশোধ করেন সেক্ষেত্রে যথাক্রমে ২০ ও ৩০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যাবে।


ডটবাংলা পেতে গ্রাহককে যেতে হবে বিটিসিএলের ওয়েবসাইটে () বা এর কার্যালয়ে। ওয়েবসাইটে গিয়ে সহজেই অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণ করে ডটবাংলা পাওয়া যাবে। এতে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম ও শর্ত দেয়া রয়েছে। বিটিসিএলের কার্যালয়ে সরাসরি গিয়েও এই সেবা পাওয়া যাবে। এছাড়া কল সেন্টার নম্বার ১৬৪০২ –এ কল করে সাহায্য নেয়া যাবে।




ইন্টারনেটে এই বাংলার জন্য করতে হয়েছে লড়াই। ওয়েব ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে লেখা ইউআরএল বা ইউনিফর্ম রিসোর্স লোকেটর বাংলায় লেখার অধিকার পেতে অর্ধযুগেরও বেশি সময়ের অপেক্ষা করতে হয়।


দীর্ঘ সময় সংগ্রামের পর চলতি বছরে অপেক্ষাটা ছিল আন্তর্জাতিক ডোমেইন ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইন্ড নেইমস অ্যান্ড নাম্বারস (আইক্যান)আইক্যান হতে অনুমোদন। কান্ট্রি কোড টপ-লেভেল এই ডোমেইন হিসেবে বাংলাদেশের জন্যডটবাংলার বরাদ্দ থাকলেও ডোমেইন ম্যানেজার হিসেবে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডকে (বিটিসিএল) অনুমোদন দেয়া হচ্ছিল না।


বছরের শুরুতেই ৬ জানুয়ারি সচিবালয়ে সরকারের দুই বছরে টেলিযোগাযোগ বিভাগের অর্জন ও ভবিষৎত পরিকল্পনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানান, মাতৃভাষার প্রতি মর্যাদা জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ডোমেইন ডটবাংলার উদ্বোধন হচ্ছে।


কিন্তু ফ্রেরুয়ারি যায় ডটবাংলা চালু হয় না। কারণ ঝুলে আছে অনুমোদন। চলছিল নানা চেষ্টা তদবির।


৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রের কমার্স সেক্রেটারিকে চিঠি লেখেন তারানা হালিম। চিঠিতে আইক্যানে ডটবাংলার অনুমোদনে প্রয়োজনীয় আবেদনে করা হয়েছে কথা উল্লেখ তিনি লিখেছেন, ‘আন্তজার্তিক মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও আবেগের স্থান হতে ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ডটবাংলা চালুর ঘোষণা দিয়েছিলাম।’


এতে ডটবাংলার জন্য রুট-জোন ডেলিগেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করার জন্য কমার্স সেক্রেটারিকে অনুরোধ জানান প্রতিমন্ত্রী।


অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ, ২০১৬ সাল। শ্রীলংকার কলম্বোয় চলছিল এপনিকের সম্মেলন। সেখানে অংশ নিতে ছিলেন ইন্টারনেট যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বিডিনগ বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির।


ডটবাংলার চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে জট ছোটানোর নায়কদের মধ্যে তিনি একজন। এই ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞ এপিনিকের সম্মেলনে আইক্যানের যে টেকনিক্যাল বডির প্রতিনিধিরা এসেছিলেন তাদের সঙ্গে বিডিনগ ও এপনিকের সংঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশীদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে টেকনিক্যাল কিছু বিষয় উঠে আসে যার জন্য বিষয়টি আটকে ছিল।


আইক্যান তখন স্বাধীন। যুক্তরাষ্ট্রের কমার্স হতে এটি মুক্তি পেয়েছে তার ক’দিন আগেই। ফলে এটি ইউএস কমার্সের অধীনে ছিল না আর। তা নিয়ন্ত্রণ করছিল ইন্টারনেট কমিউনিটি।


আইক্যানের সঙ্গে বৈঠকে তারা সমস্যা চিহ্নিত করে বিটিসিএলের সঙ্গে কথা বলেন। সমস্যাগুলো ঠিক করতে পরামর্শ দেন। বিটিসিএল তা ঠিক করার পর আসে সেই কাঙ্খিত ক্ষণ, মেলে অনুমোদন।


৫ অক্টোরব সন্ধ্যায় টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ফেইসবুক স্ট্যাটাসে জানান, ‘অবশেষে ‘ডট বাংলা ডোমেইন’ বাংলাদেশের অনুকূলে অনুমোদিত! প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আরেকটি কাজ সম্পন্ন হলো। অনেক চেষ্টার পর ‘ডট বাংলা ডোমেইন’ বাংলাদেশের অনুকূলে আইক্যান কর্তৃক বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।’