বেতন আলোচনায় যে কথাগুলো বলা উচিত নয় (শেষ পর্ব)

লাইফ স্টাইল December 30, 2016 648
বেতন আলোচনায় যে কথাগুলো বলা উচিত নয় (শেষ পর্ব)

বর্তমানে চাকরি যেন একটি সোনার হরিণ। চাকরির বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে, বেতন নির্ধারণ।


বর্তমানে বেশিরভাগ চাকরির বেতন নির্ধারিত থাকে না। মূলত ইন্টারভিউ টেবিলেই বেশিরভাগ চাকরির বেতন নির্ধারিত হয়ে থাকে। ইন্টারভিউ টেবিলে চাকরিদাতা এবং চাকরি প্রার্থী ছোট্ট একটি আলোচনার মাধ্যমে বেতন নির্ধারণ করে থাকেন।


এক্ষেত্রে চাকরি প্রার্থীর চেষ্টা থাকে আলোচনার মাধ্যমে তার বেতনটা কতটা বেশি উচ্চতায় উঠানো যায়। আবার চাকরিদাতার অভিপ্রায় থাকে কত কম বেতনে কাঙ্ক্ষিত প্রার্থীকে তারা বেছে নিতে পারেন।


তাই ইন্টারভিউ টেবিলে হওয়া বেতন নিয়ে আলোচনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত এটি একটি শিল্প। এ শিল্পে যে যত বেশি পারদর্শী দিনশেষে তারাই জয়ী হয়।


তবে বেতন নিয়ে আলোচনারও কিছু নিয়ম-নীতি আছে, যা একজন চাকরি প্রার্থীর জন্য মেনে চলাটা অত্যাবশ্যকীয়। বেতন নিয়ে আলোচনায় যে ২২টি কথা চাকরি প্রার্থীদের কখনোই বলা উচিত হয়, তা নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে ১০টি পরামর্শ প্রকাশ করা হয়েছিল। আজ শেষ পর্বে থাকছে আরো ১২টি পরামর্শ।


‘আমি মনে করি...’

‘আমি মনে করি...’, ‘হয়তো’, ‘হতে পারে’ কখনই বেতন নিয়ে আলোচনায় এ ধরনের অনিশ্চিত শব্দ ব্যবহার করবেন না। ব্লগিং৪জবস ডটকম এর সম্পাদক এবং এক্সসেপশনাল এইচআর এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেসিকা মিলার বলেন, সর্বদা অসংশয়ে কথা বলুন।


‘আমি নূন্যতম বেতন গ্রহণ করতে ইচ্ছুক’

এটি একটি মারাত্বক ভুল। আপনি তাদের সর্বনিম্ন প্রস্তাব গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, এটা বলার মানে হতে পারে যে, আপনি সেই নূন্যতম বেতনেই পাবেন।


‘দুঃখিত’

নিজের ওপর আস্থা রাখুন। রায়ান কান নামের একজন ক্যারিয়ার কোচ বলেন, আপনি যদি আপনার মূল্যটা অনুধাবন করতে পারেন এবং আপনি কোম্পানিকে কি দিতে পারবেন তা জানা থাকে, তাহলে সেখানে আরো বেশি বেতনের দাবী করে আপনার ক্ষমাপ্রার্থী হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।


‘সস্তা/ মন্দ/ ভয়ানক’

বেতনের পরিমান শুনে এই কথাগুলো বলা উচিত নয়, কেননা তা নিয়োগকর্তার কাছে অসম্মানজনক মনে হতে পারে। এতে নিয়োগকর্তা তাদেরকে সম্মান দেখানোর অভাবের কারণে আপনাকে সেখানে কাজ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।


‘কিন্তু আমি বেশি মূল্য পাওয়ার যোগ্য’

ইন্টারভিউ টেবিলে বেতন নিয়ে আলোচনায় আপনি অবশ্যই আপনার মূল্যটা নিয়োগকর্তাকে অনুধাবন করাতে চাইবেন। কিন্তু এটি এমনভাবে উল্লেখ করার চেষ্টা করুন যেন তারা আপনাকে অহংকারী মনে না করে। সফল মানুষেরা অহংকারী না হয়েও এই সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সক্ষম।


‘আপনার আমাকে মূল্যবান নাও মনে হতে পারে, কিন্তু...’

এটা বলা মোটেও ঠিক নয়। মিলার বলেন, বেতন নিয়ে আলোচনায় আপনি হয়তো সরাসরি দেখাতে চান যে আপনি যোগ্য ও দলের জন্য একজন মূল্যবান সদস্য হতে পারেন, কিন্তু তা আপনাকে করতে হবে সংক্ষেপে ভদ্রতার সঙ্গে।


‘ন্যায্য শোনাচ্ছে’

এটা ন্যায্য হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। সফল মানুষেরা তাদের ক্ষেত্র, পেশা এবং কর্মক্ষেত্রের প্রতিযোগিতামূলক বেতনের একটি শক্তিশালী জ্ঞান নিয়ে আলোচনায় ঢোকেন। ‘ন্যায্য শোনাচ্ছে’ এ ধরনের কিছু শব্দ মাঝে মাঝে অবশেষে অন্যায্য হয়ে উঠে যদি আপনি আপনার যুক্তি তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারেন।


‘চলুন শুরু করা যাক’

আপনি নিশ্চিতভাবেই শুরুতেই একটি খারাপ ধারণা তৈরি করতে চাইবেন না। তাই আলোচনা শুরু করতে তাড়া দিবেন না। একটি ইতিবাচক এবং মনোরম মনোভাব নিয়ে আলোচনার টেবিলে আসতে চেষ্টা করুন।


‘এই পরিমান বেতন না পেলে, আমার জীবন বিপন্ন হয়ে যাবে’

আপনি হয়ত সত্যিই একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ইন্টারভিউ টেবিলকে এর থেকে উত্তরণের জায়গা হিসেবে বেছে নিবেন না। এতে কিন্তু নিয়োগকর্তার মনে হতেই পারে আপনি তাদের আবেগের তাড়িত করে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছেন।


‘আমি শুধু একটি উচ্চতর বেতন চাই’

সবাই চায় তার বেতনটা অনেক বেশি হোক। তবে কখনও কখনও এই কৌশলটি কাজে নাও লাগতে পারে। তার মানে এই নয় আপনি আপনার আলোচনা থামিয়ে দিবেন। আপনি আপনার বেতনের বাইরেও বর্ধিত ছুটি, শিক্ষাগত সুযোগ বা অতিরিক্ত সুবিধা পেতে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারেন।


‘বেতন বৃদ্ধি না করলে আমি প্রস্থান করব’

যদি আপনি মনে করে করেন যে, পর্যাপ্ত পরিমান আপনাকে বেতন অফার করা হচ্ছে না, তবে অন্যান্য সুযোগের জন্য চারপাশে খোঁজাটা সম্পূর্ণই যৌক্তিক। কিন্তু বেতন বৃদ্ধি না করলে আমি এখনই প্রস্থান করব, এ ধরনের হুমকিমূলক বিবৃতি দেয়া কখনই উচিত নয়।


‘আমি জানি না’

ইন্টারভিউ টেবিলে বেতন নিয়ে আলোচনায় এ ধরনের কথা উচ্চারণ করলে বিপরীত পাশে বসা লোকজন ছোঁ মেরে এর সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করবে। আলোচনার টেবিলে আলাপ করার সময় শান্ত এবং আত্মবিশ্বাসী হতে ভুলবেন না।