ভালোবাসার মানুষটি আবেগের মুখোশ পরে নেই তো?

লাইফ স্টাইল December 23, 2016 925
ভালোবাসার মানুষটি আবেগের মুখোশ পরে নেই তো?

ভালোবাসার মানুষটির সাথে আবেগঘন সময় কাটাতে কে না ভালোবাসে? আপনার প্রিয় শ্রদ্ধার মানুষটি আপনার চোখে সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে দায়িত্বশীল একজন মানুষ। তিনি আপনার ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করেন না। ব্যক্তিস্বাধীনতার যথাযথ মূল্যায়ণ করেন তিনি।


কিন্তু আপনি কি জানেন, পরম যত্নশীল এই মানুষটিই হতে পারে চরম নিয়ন্ত্রণপ্রবণ মনমানসিকতার? আপনি হয়ত কখনো জানতেই পারবেন না, আবেগের মুখোশ পরে আপনার সমগ্র জীবনকে কীভাবে নিজের মনমর্জিমত চালাচ্ছেন তিনি। এক সময় এসে খেয়াল করবেন নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে যা ভেবেছিলেন, যা ছিল আপনার স্বপ্ন তা স্বেচ্ছায় ছেড়ে এসেছেন, খেয়ালই করেন নি কখন বদলে গেছে সবকিছু। তাই ভালোবাসা ভাল, কিন্তু অন্ধ ভালোবাসা ভাল নয়। তাই তাকেও জানুন।


ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট, বক্তা, লেখক আন্দ্রিয়া ব্রনিয়র পি এইচ ডি সাইকোলজি টুডে তে এই বিষয়ে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি তুলে ধরেন কীভাবে মুখোশের আড়ালে থেকে মানুষ নিয়ন্ত্রণ করে অন্যের জীবন। আসুন জেনে নিই সংক্ষেপে তার বক্তব্য...


মনোযোগ

এধরণের মানুষেরা আপনার জীবনে প্রবেশই করে কৌশলী পথে। তারা জানেন, বিশেষ মনোযোগ প্রদান যে কারোরই ভাল লাগে। তাই এমন একজন মানুষ আপনাকে বিশেষভাবে লক্ষ্য করতে শুরু করেন। গোপনে নয়। আপনি ঠিক টের পাবেন। তিনি আপনার সম্পর্কে জানতে চান, আপনার গল্পগুলো জানতে চান, কখনো সরাসরি আপনার কাছ থেকে কখনো অন্য এমন কারও কাছ থেকে যার কাছে আপনার কথা জানতে চাইলে সে আপনাকে অবশ্যই বিষয়টি জানাবে। এভাবে শুরুতেই সে ভিন্ন রকম একটা জায়গা দখল করে আপনার মনে।


প্রতিশ্রুতি

তিনি খুব দ্রুতই আপনার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করতে চান। তার ব্যবহার, যত্ন সব মিলিয়ে আপনি ততদিনে অভিভূত। প্রতিশ্রুতি চাওয়ার বিষয়টি তাকে আপনার চোখে আরও বিশ্বস্ত করে তোলে। আসলে তিনি চান আপনি তার প্রতি একটা বন্ধনে আবদ্ধ হোন। আপনি যদি সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি একবার দিয়ে ফেলেন তাহলে তিনি নিশ্চিত হয়ে যান যে আপনি তাকে ভালোবেসে ফেলেছেন পুরোপুরি।


আকর্ষণ

তিনি তীব্রভাবে আকর্ষণ প্রকাশ করেন আপনার প্রতি। তার চোখে আপনার চেয়ে সুন্দর কেউ নেই। আপনার মত আর কেউ নেই। বার বার তিনি প্রকাশ করেন কৃতজ্ঞতা তাকে ভালোবাসার জন্য। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকেন, কাছে পাওয়ার জন্য ব্যাকুলতা প্রকাশ করেন। তার আকর্ষণ আপনার চোখে তখন বিশাল প্রাপ্তি। আপনি খেয়াল করেন না তার আরও সম্পর্ক থাকতে পারে বা এমন আকর্ষণ আর কারও প্রতি হয়ত তিনি প্রকাশ করেন।


গভীর প্রণয়

গভীর আবেগ থেকে ঈর্ষা! শুরুতে ভালোই লাগে এসব। আপনার মনে হয়, এগুলো যত্নেরই আরেক নাম। কিন্তু আপনি খেয়াল করেন না, এর কারণে কতটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন আপনি। আপনার এতদিনকার বন্ধুরা হারিয়ে যেতে থাকে ধীরে ধীরে। যে আপনাকে এত ভালোবাসে তাকে পুরোনো সম্পর্কের বিনিময়ে হলেও ধরে রাখতে চান আপনি। আর এখানেই শুরু হয় আপনার আত্মত্যাগ, যা আপনি স্বেচ্ছায় করেন, কিন্তু করেন না বুঝেই।


যত্নের আতিশয্য

আপনার সকল কাজ না বলতেই করে দেবেন তিনি। আপনি অসুস্থ থাকলে আপনার সার্বিক দায়িত্ব নেবেন। আপনার বিল দেওয়া, ঘরের কাজ সবই করবেন তিনি। এভাবে আপনি তার উপর এতই নির্ভরশীল হয়ে যাবেন যে একা আর কোন সিদ্ধান্ত নিতেই পারবেন না। আপনার বাকি জীবনের সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন।


আমাকে ভালোবাসে, আমার জন্য ভাবে এমন মানুষ সারাজীবনই খুঁজি আমরা। তার মানে এই নয় যে আমরা আমাদের নিজস্ব স্বত্ত্বা বিলীন করে দেব। সচেতন না হলে একদিন হয়ত আফসোসের শেষ থাকবে না আমাদের। কিন্তু আফসোস করেও সেদিন আর কোন লাভ হবে না।