দৃড় মানসিকতার ব্যক্তিরা যেসব কাজ করেন না

লাইফ স্টাইল December 13, 2016 724
দৃড় মানসিকতার ব্যক্তিরা যেসব কাজ করেন না

মানসিকভাবে শক্তিশালী মানুষদের কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস থাকে। তারা তাদের আবেগ, চিন্তাভাবনা এবং আচরণকে এমনভাবে পরিচালিত করেন যাতে জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারেন। মানসিক শক্তি প্রায়ই আপনি কী করছেন তার প্রতিফলন ঘটায় না। সাধারণত আপনি যা করছেন না তাকেই দেখায়।


অ্যামি মরিন তার “থার্টিন থিংস মেন্টালি স্ট্রং পিপল ডোন্ট ডু” বইটিতে মানসিকভাবে শক্তিশালী মানুষরা যে কাজগুলো করেননা সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। মানসিক ভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা যে কাজগুলো করেন না সে বিষয়ে জানলে আপনিও নিজের মানসিক অবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারবেন।


# তারা দুঃখবোধ নিয়ে সময় নষ্ট করেন না

মরিন লিখেছেন যে, “নিজের জন্য দুঃখিত অনুভব করা আত্মবিধ্বংসী হতে পারে। পরিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকায় বাধার সৃষ্টি করে আত্মকরুণা”। এর ফলে সময় অপচয় হয়, নেতিবাচক আবেগ তৈরি হয় এবং সম্পর্কেরও ক্ষতি করে। তিনি লিখেছেন, “পৃথিবীর ভালো জিনিসগুলোকে শনাক্ত করতে শিখুন এবং তাহলেই আপনার যা আছে তার মূল্য উপলব্ধি করতে পারবেন”। আত্মকরুণার সাথে কৃতজ্ঞতার অদল-বদল করাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য।


# তারা তাদের শক্তিকে পরিত্যাগ করেন না

মরিন লিখেছেন, “মানুষ যখন শারীরিক বা মানসিক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে যায় তখন সে তার শক্তি হারিয়ে ফেলে”। আপনার প্রয়োজন নিজের পাশে নিজেই দাঁড়ানো এবং প্রয়োজনে সীমা নির্ধারণ করা। যদি অন্য কেউ আপনার কাজ নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে তারাই আপনার সাফল্য ও মূল্য নির্ধারণ করবে। তাই আপনার উচিৎ লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা।


মরিন অপরাহ উইনফ্রে এর উদাহরণ টেনে বলেন, তিনি নিজের ক্ষমতাকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে পেরেছেন। তিনি দারিদ্রতা এবং যৌন নির্যাতনের মোকাবেলা করেই বড় হয়েছেন। “তিনি তার নিজের ক্ষমতাকে বিসর্জন না দিয়ে জীবনে কী হতে চান সে বিষয়টিকেই চিহ্নিত করেছেন”।


# তারা পরিবর্তনকে ভয় পান না

মরিন লিখেছেন যে, পরিবর্তনের পাঁচটি স্তর আছে : প্রাক-চিন্তা, চিন্তা, প্রস্তুতি, কাজ এবং টিকিয়ে রাখা। এই পাঁচটি ধাপকে অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবর্তন ভীতির সৃষ্টি করতে পারে কিন্তু এর থেকে পালিয়ে বেড়ালে বৃদ্ধি প্রতিহত হয়। “যত বেশি সময় আপনি অপেক্ষা করে বসে থাকবেন ততই আপনার পক্ষে পাওয়া কঠিন হবে, এর মাঝে অন্যরা আপনাকে অতিক্রম করে যাবে”।


# যা নিয়ন্ত্রণ করা যম্ভব নয় সে বিষয়ে তারা ফোকাস করেন না

‘সবকিছু নিয়ন্ত্রণে থাকলে নিরাপদ অনুভব হয়, কিন্তু সবসময় সবকিছু আপনার নিয়ন্ত্রণেই থাকবে এমন চিন্তা করাটাও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে” – মরিন এমনটাই লিখেছেন। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা উদ্বেগেরই একটি প্রতিক্রিয়া। তিনি বলেন, “উদ্বেগ কমানোর প্রতি মনোনিবেশ করার চেয়ে আপনার চারপাশের পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন”। আপনার পক্ষে যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলেই আপনার সুখ বৃদ্ধি পাবে, স্ট্রেস কমবে, সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে, নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে এবং অনেক বেশী সফল হতে পারবেন।


# তারা সবাইকে খুশি করার চিন্তা করেন না

আমরা প্রায়ই নিজেকে বিচার করি অন্যরা আমাদের কেমন ভাবে তার উপর, যা মানসিক বলিষ্ঠতার বিপরীত। মরিনের মতে, মানুষকে খুশি করার চেষ্টা সময়ের অপচয় মাত্র, খুব সহজেই মানুষকে খুশি করা যায়, অন্যরা রাগান্বিত বা হতাশবোধ করাটাও স্বাভাবিক এবং আপনি সবাইকে খুশি করতে পারবেন না। অন্যদের খুশি করার মানসিকতা দূর করতে পারলেই আপনি শক্তিশালী এবং অনেক বেশী আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারবেন।


# তারা প্রয়োজনীয় ঝুঁকি নিতে ভয় পান না

মরিন বলেন, মানুষ প্রায়ই ঝুঁকি নিতে ভয় পায়- এটা হতে পারে আর্থিক, শারীরিক, আবেগীয়, সামাজিক অথবা ব্যবসা সংক্রান্ত ঝুঁকি। এটা নির্ভর করে তাদের জ্ঞানের উপর। মরিনের মতে, “ঝুঁকি নিরূপণের জ্ঞানের অভাবের কারণে ভয় বৃদ্ধি পায়”।


কোনো ঝুঁকি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে নিজেকে প্রশ্ন করুন – সম্ভাব্য খরচ কত হবে? সম্ভাব্য লাভ কত? এটি আমার লক্ষ্য অর্জনে কীভাবে সাহায্য করবে? এর বিকল্প কী? পরিকল্পনাটি সফল হলে কতটুকু ভালো হবে? কী ধরণের খারাপ হতে পারে এবং এর ঝুঁকি কীভাবে কমানো যায়? পরিকল্পনাটি সফল না হলে কতটুকু খারাপ হতে পারে? পাঁচ বছরে এই সিদ্ধান্ত কতোটা কার্যকরী হতে পারে?


# তারা অতীতকে নিয়ে বেঁচে থাকেন না

অতীতে যা হয়ে গেছে তাকে পরিবর্তন করার কোনো উপায় নেই। অতীতকে নিয়ে বাস করা আত্মবিধ্বংসী হতে পারে। মরিন লিখেন যে, “এটি বর্তমানকে উপভোগ করা এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করা থেকে বিরত রাখে”। এটি কোন কিছুরই সমাধান দিতে পারেনা এবং বিষণ্ণতা সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, অতীত নিয়ে চিন্তা করাটা উপকারী হতে পারে, অতীতের শিক্ষণীয় বিষয়টির প্রতিফলনের মাধ্যমে, আবেগের চেয়ে প্রকৃত অবস্থার প্রতি নজর দিলে এবং অতীতের পরিস্থিতিকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে।


# তারা একই ভুল বার বার করেন না

অনুধাবনের মাধ্যমে ভুলের পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়। মরিনের মতে, আপনার কী ভুল হয়েছিল, কীভাবে এটি ভালো করে করা যেত এবং পরবর্তীতে এটাকে ভিন্নভাবে করা যায় কীভাবে – এই বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা জরুরী। মানসিকভাবে শক্তিশালী মানুষেরা ভুলের দায়িত্ব স্বীকার করে নেয় এবং ভবিষ্যতে একই ভুল এড়াতে তা লিখে রাখে ও চিন্তাশীল পরিকল্পনা তৈরি করে।


# তারা অন্যের সাফল্যে ক্ষুব্ধ হন না

ক্ষোভ রাগের মতোই লুকিয়ে থাকে মনের গভীরে। মরিন বলেন, অন্যের সাফল্যের দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ করে রাখলে আপনার নিজের পথ সুগম হবে না। বরং আপনার নিজের পথ থেকেই আপনাকে সরিয়ে দেবে। এমনকি আপনি যদি সফল হয়েও যান, তাহলেও অন্যের প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করে রাখলে নিজে সন্তুষ্ট হতে পারবেন না কখনোই। এছাড়াও এর ফলে আপনি হয়তো আপনার নিজের প্রতিভাকেই উপেক্ষা করে যাচ্ছেন এবং আপনার নিজের মান ও সম্পর্ক ও ত্যাগ করতে হতে পারে আপনাকে।


# প্রথম পরাজয়েই তারা হার মেনে নেন না

সাফল্য খুব তাড়াতাড়ি আসেনা এবং ব্যর্থতা এমন একটি বাধা যা আপনাকে অতিক্রম করে যেতে হবে। মরিন বলেন, “থিওডর গেইসেল যিনি ড. সিউস নামে পরিচিত তার প্রথম বইটি ২০ জনের মত প্রকাশকের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলো”। ড. সিউস এখন একটি সুপরিচিত নাম। ব্যর্থতাকে স্বীকার করে নিতে না পারলে বা আপনি যদি মনে করেন যে আপনি যথেষ্ট ভালো নন তাহলে তা আপনার মানসিক শক্তির প্রতিফলন ঘটায় না। মরিন বলেন, “ব্যর্থতার পরেও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেলেই তা আপনাকে শক্তিশালী করবে”।


# তারা একাকীত্বকে ভয় পান না

মরিন লিখেছেন যে, “একা থেকে চিন্তা করা আপনার জন্য শক্তিশালী অভিজ্ঞতা, যা আপনাকে আপনার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে”। মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার জন্য “দৈনন্দিন ব্যাস্ততা থেকে কিছুটা সময় বের করে নিয়ে আপনার ক্রম বিকাশের প্রতি ফোকাস করা প্রয়োজন”।


মরিন তার বইয়ে নির্জনতার উপকারিতার একটি তালিকা করেন : অফিসে নির্জনতা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে, একাকী সময় কাঁটালে আপনার সহানুভূতি বৃদ্ধি পায়, একা সময় কাটানোর ফলে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়, নির্জন দক্ষতা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, নির্জনতা পুনঃউপলব্ধি করতে সাহায্য করে।


# তারা মনে করেন না যে বিশ্বও তাদের প্রতি ঋণী

আপনার ব্যর্থতার জন্য বিশ্বের প্রতি রাগান্বিত হওয়া সহজ। কিন্তু সত্যি হচ্ছে কেউ এর দায় নেয় না। মরিন বলেন,“জীবনে সব কিছুই ন্যায্য ভাবে হবে এমনটা ঠিক নয়”। মরিন লিখেন, “আপনার প্রচেষ্টার প্রতি ফোকাস করুন, সমালোচনা গ্রহণ করুন, আপনার ত্রুটিগুলো সম্পর্কে জানুন এবং গণনা করবেন না”। অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করবেন না, এতে শুধু আপনার হতাশাই বৃদ্ধি পাবে।


# তারা খুব দ্রুত ফল আশা করেন না

বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা পূরণ বা সাফল্য কোনোটাই রাতারাতি আসে না। মানসিকভাবে দুর্বল মানুষেরা প্রায়ই অধৈর্য হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, “তারা তাদের সামর্থ্যের অতিরিক্ত অনুমান করে এবং পরিবর্তনে যে সময় প্রয়োজন তাকে অবমূল্যায়ন করে, তাই তারা দ্রুত ফল আশা করে”। পুরষ্কারের প্রতি লক্ষ্য রাখা এবং আপনার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অর্জনের জন্য অক্লান্তভাবে কাজ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। চলার পথে ব্যর্থতা আসতেই পারে, কিন্তু আপনি যদি আপনার উন্নতিটুকুই পরিমাপ করেন এবং বড় লক্ষ্যের দিকে তাকান তাহলে সাফল্য ধরা দেবেই।