সাপ সম্পর্কিত প্রচলিত কিছু কল্পকথার সত্য জবাব!

জানা অজানা December 9, 2016 2,564
সাপ সম্পর্কিত প্রচলিত কিছু কল্পকথার সত্য জবাব!

সাপ সরীসৃপ প্রাণী। শুধুমাত্র এন্টার্কটিকা মহাদেশে এখনো সাপ পাওয়া যায়নি। জানামতে, এখন পর্যন্ত সাপের ১৫টি পরিবার, ৪৫৬টি গণ এবং ২৯০০টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। এদের কেউ বিষাক্ত আবার কেউ বিষহীন। আবার বিষধর সাপেরা তাদের বিষকে আত্মরক্ষার চেয়ে শিকারকে ঘায়েল করতেই বেশি ব্যবহার করে থাকে।


এই সাপ নিয়ে প্রচলিত রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কল্পকথা বা বিশ্বাস। যুগযুগ ধরে চলে আসা কল্পকথাগুলো এখনও আমাদের সমাজে বিরাজমান। এসকল কল্পকথা নিয়ে গড়ে উঠেছে অনেক নাটক-সিনেমা। এসব কল্পকথাকে আবার সত্য বলেও মনে করেন অনেকে। আজ সাপ নিয়ে এমনই কিছু কল্পকথার সত্যতা উন্মোচন করার চেষ্টা করব।


প্রচলিত কথা: কাল নাগিনী সাপের বিষে লক্ষ্মীনদরের মৃত্যু!


সত্যতা: কাল সাপ বা কাল নাগিনীর কথা শুনলে সকলেই ভয়ে আতকে উঠতে পারেন। এই সাপের বিষে লক্ষ্মীনদরের মৃত্যু হয়েছে! সত্য কথা হল এই সাপের কোন বিষ নেই।


প্রচলিত কথা: সাপ দুধ পান করে! আবার দুধ পানের জন্য গোয়াল ঘরের গাভীকে পেচিয়ে ধরে ওলান থেকে দুধ পান করে!


সত্যতা: সাপ পানি পান করে। দুধ পান করেনা। তারা দুধ ভালভাবে হজম করতে পারেনা। সরীসৃপের জীবন দুধের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এদের কোন দুগ্ধক্ষরা গ্রন্থিও নেই। তাই দুধ খাওয়ার প্রশ্নই আসেনা। তবে তীব্র পানি পিপাসায় সামনে প্রাপ্ত যেকোন ধরনের তরল খাবার; যেমন দুধ পান করতে পারে। সাপুড়েরা সাপকে দীর্ঘক্ষণ পানি ছাড়া রেখে দুধ পানে বাধ্য করে থাকে। আবার গরুর ওলান ফাটলে অনেকে বলে থাকেন সাপ কামড়ে ফাটিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হল ওলান ফাঁটে মাসটাইটিস নামক রোগ হলে।


প্রচলিত কথা: সাপ যখন অনেক বৃদ্ধ হয় তখন দাঁড়ি গজায়!


সত্যতা: গ্রামাঞ্চলে এই কথাটি অনেক প্রচলিত আছে। পুরাতন বসতভিটায় নাকি দাঁড়িওয়ালা সাপ ঘুরে বেড়ায়! কিন্তু বাস্তবতা হল সাপ সরীসৃপ প্রাণী। এদের সমস্ত শরীরে চুলেরই অস্তিত্ব নেই। আর দাঁড়ি থাকার তো প্রশ্নই আসেনা।


প্রচলিত কথা: সাপের মাথায় মণি!


সত্যতা: সাপের মাথায় মণি থাকে। যেটি পেলে যে কেউ প্রচুর ধনসম্পদের মালিক হতে পারবে। তবে এটি অসম্ভব। ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীই মূলত এই শ্রুত কথাটির জন্ম দিয়েছে।


প্রচলিত কথা: সাপকে আঘাত করলে সে আপনাকে মনে রাখবে ও প্রতিশোধ নিবে!


সত্যতা: মনে রাখবেন সাপ প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রাণী নয়। তাছাড়া তার ছোট্ট মস্তিষ্ক দিয়ে আপনার কথা মনেও রাখতে পারবে না। বাংলাদেশ ও ভারতীয় ক’জন পরিচালক এই ভ্রান্ত ধারণার উপর অনেক চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন।


প্রচলিত কথা: দুই মাথাওয়ালা সাপ! অর্থাৎ লেজের দিকে আরেকটি মাথা আছে!


সত্যতা: এই কথাটি প্রচারের জন্য প্রধানত সাপুড়েদেরকে দায়ী করা যায়। একবার এক সাপুড়েকে দেখেছিলাম এমনটি বলতে। সে এ ধরণের একটা সাপও নিয়ে এসেছিল, যার লেজের দিকে আরেকটি মাথা আছে। কিন্তু ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছিলাম তার লেজটা স্ফীত হলেও সেটায় মাথার কোন চিহ্নই নেই। মূলত তারা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্যই এমন কথা বলে থাকে।


তবে দু’মাথাযুক্ত মানবশিশুর মত পাশাপাশি একাধিক মাথাযুক্ত সাপ পাওয়া যেতে পারে। এগুলোকে পলিসেফালি বলে। যেখানে সাপের ক্ষেত্রে, মনোজাইগোটিক জমজ ভ্রুণ থেকে যুক্ত মাথা জমজ হতে পারে।