১০ বিষয় সত্যিকার আত্মবিশ্বাসী লোকরা ভিন্নভাবে করেন

লাইফ স্টাইল November 28, 2016 1,058
১০ বিষয় সত্যিকার আত্মবিশ্বাসী লোকরা ভিন্নভাবে করেন

লোকে নিজেদের নিরাপত্তাহীনতা ঢাকার জন্য যে ভুয়া আত্মবিশ্বাসের মুখোশ পরেন তা থেকে সত্যিকার আত্মবিশ্বাস একদমই আলাদা।


একটি জিনিসি নিশ্চিত: সত্যিকার আত্মবিশ্বাসী লোকেরা সবসময়ই সন্দিহান এবং ভীতু লোকদের ওপর কর্তৃত্ব করেন। কারণ তারা অন্যদের অনুপ্রাণিত করেন এবং ঘটনা ঘটান।


কেউ যদি ভাবেন তিনি পারবেন না তাহলে তিনি পারবেন না। আর কেউ যদি ভাবেন তিনি পারবেন তাহলে তিনি পারবেন।


এর মানে হলো সাফল্য অর্জনে আপনার সক্ষমতার ওপর আপনার মানসিকতার শক্তিশালি প্রভাব রয়েছে। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একটি গবেষণার ফলাফলে তেমনটিই দেখা গেছে। এতে দেখা গেছে, আত্মবিশ্বাসী লোকেরা উচ্চ মজুরি উপার্জন করেন এবং অন্য আর যে কারো চেয়ে অনেক দ্রুত পদোন্নতি পান।


এমনকি প্রকৃতপক্ষে যার সঙ্গেই তাদের সাক্ষাৎ হয় তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেন আত্মবিশ্বাসী লোকেরা। তবে এটা তারা অর্জন করতে সক্ষম হন কারণ তারা নিজেদের ভেতরেও নিজেদের ওপর বেশ প্রভাশালী হন।


আমরা শুধু তাদের বাহিরটা দেখি। আমরা তাদেরকে উদ্ভাবন করতে দেখি, নিজেদের মনের সঙ্গে কথা বলতে দেখি এবং নিজেদেরকে আরো বড় এবং উন্নততর জিনিসের দিকে পরিচালিত করতে দেখি।


আর তথাপি আমরা তাদের সেরা অংশটি দেখেতে পাই না।


আত্মবিশ্বাসী হওয়ার জন্য তারা যেসব অভ্যাস গড়ে তোলেন আমরা সেসব দেখি না। প্রতিটি দিন দৃশ্যের আড়ালে তারা ভালোবাসার কাজের পেছনে দৌঁড়ান।


আর লোকে যখন পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেরাও পরিবর্তিত হয়ে যায় তখন সত্যিকার আত্মবিশ্বাসী লোকদের অভ্যাসগুলো অপরিবর্তিতই রয়ে যায়।


১. তারা নিশ্চয়তার সঙ্গে কথা বলেন

সত্যিকার অর্থেই আত্মবিশ্বাসী লোকদেরকে কখনোই বলতে শোনা যায় না “উম,” “আমি নিশ্চিত নই” এবং “আমার ধারণা”। আত্মবিশ্বাসী লোকেরা দৃঢ়তার সঙ্গে কথা বলেন। কারণ তারা জানেন আপনি যদি দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে আপনার ধারণাগুলো উপস্থাপন না করেন তাহলে লোকে আপনার কথা শুনবে না।


২. তারা ছোট ছোট বিজয় সন্ধান করেন

আত্মবিশ্বাসী লোকেরা নিজেদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে এবং প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হতে পছন্দ করেন। এমনকি যখন তাদের প্রচেষ্টাগুলো তাদেরকে ছোট ছোট বিজয় এনে দেয়। এর ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস ক্রমাগত বাড়তে থাকে।


৩. তারা ব্যায়াম করেন

ইস্টার্ন অন্টারিও রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা টানা ১০ সপ্তাহ ধরে সপ্তাহে অন্তত দুবার ব্যায়াম করেন তারা নিজেদেরকে সামাজিকভাবে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং ক্রীড়াগতভাবে অনেক বেশি যোগ্য অনুভব করেন।


তারা নিজেদের দৈহিক অবয়ব এবং আত্ম-সম্মানেরও উচ্চ রেটিং করেন।


৪. তারা মনোযোগ চাননা

যারা অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন লোকে তাদেরকে খুব একটা পছন্দ করেন না। আত্মবিশ্বাসী লোকেরা জানেন নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রমাণের জন্য উঠেপড়ে না লেগে বরং কেউ আদতে যেমন আছে তেমন থাকলেই বেশি কার্যকর ফল পাওয়া সম্ভব।


লোকে দ্রুতই আপনার মনোভঙ্গি ধরে ফেলতে সক্ষম। আর আপনি কী জানেন বা কত লোককে জানেন তার চেয়ে বরং লোকে আপনার সঠিক মনোভঙ্গির প্রতি বেশি আকৃষ্ট হবেন। আত্মবিশ্বাসী লোকেরা সবসময়ই সঠিক মনোভঙ্গি লালন করেন এবং সঠিক অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করেন।


আত্মবিশ্বাসী লোকেরা মনোযোগ বিলিয়ে দিতে পারদর্শী হন। যখন কোনো বিশেষ অর্জনের স্বীকৃতি স্বরুপ তারা লোকের মনোযোগ আকৃষ্ট করেন তখন তারা সে সকল লোকের ওপর আলোকপাত করেন যারা তাদেরকে এই অর্জনের পেছনে সহায়তা করেছেন। তারা কারো অনুমোদন বা প্রশংসার জন্য আকুতি জানান না। কারণ তারা নিজের ভেতর থেকেই নিজের মূল্য নির্ধারণ করেন।


৫. তারা অন্যদের নিয়ে মূল্যায়ন করেন না

আত্মবিশ্বাসী লোকেরা অন্যদের নিয়ে মূল্যায়ন করেন না। কারণ তারা জানেন প্রতিটি মানুষের মাঝেই কিছু না কিছু দেওয়ার মতো সম্ভাবনা আছে। আর অন্যকে ছোট করে নিজের ব্যাপারে ভালো লাগার অনুভূতি লাভের চেষ্টা করেন না তারা। নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করার মাধ্যমে মূলত নিজেকের ছোট করা হয়। আর এটা জানেন বলেই আত্মবিশ্বাসীরা যাদের সঙ্গে সাক্ষাত তাদের সকলের সঙ্গেই নিজের পরিমাপ করেন না তারা।


৬. তারা নিজের ভেতর থেকেই তাদের সুখ লাভ করেন

আত্মবিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সুখ। কারণ আপনি যা করছেন সে ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার জন্য আপনি যা আছেন তা নিয়েই আপনাকে সুখি হতে হবে।


যাদের মন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর তারা আনন্দ এবং সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজেদের অর্জনগুলোর ওপরই নির্ভর করেন। লোকে তাদের অর্জনগুলো নিয়ে কী ভাবলো বা না ভাবলো তা নিয়ে তারা মাথা ঘামান না।


৭. তারা বলেন কম শোনেন বেশি

আত্মবিশ্বাসী লোকেরা নিজেরা কথা কম বলে অন্যের কথা শোনেন বেশি। তারা এমনটা অনুভব করেন না যে তাদেরকে নিজেদের ব্যাপারে কিছু একটা প্রমাণ করতে হবে।


আত্মবিশ্বাসী লোকেরা জানেন অন্যদের কথা মনোযোগ দিয়ে ও সক্রিয়ভাবে শোনার মাধ্যমে তারা নতুন নতুন জিনিস শিখতে পারবেন এবং দ্রুত বেড়ে উঠবেন। পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ামূলক তৎপরতাকে নিজেদেরকে প্রমাণের উপায় মনে না করে বরং তারা খোদ ওই তৎপরতার ওপর মনোযোগ দেন। কারণ তারা জানেন লোকের প্রতি এটিই বরং অনেক বেশি উপভোগ্য এবং উৎপাদনশীল ভঙ্গি।


৮. তারা ঝুঁকি গ্রহণ করেন

যখন আত্মবিশ্বাসী লোকেরা কোনো সুযোগ দেখেন তারা তা গ্রহণ করেন। কী সমস্যা হতে পারে সে ব্যাপারে উদ্বিগ্ন না হয়ে বরং তারা নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করেন, “কীসে আমাকে থামিয়ে রেখেছে”। “আমি কেন তা করতে পারছি না?” তারা ভয়ে কোনো কিছু থেকে পিছিয়ে আসেন না। কারণ তারা জানেন তারা যদি চেষ্টা না করেন তাহলে তারা কখনোই সফল হবেন না।


৯. তারা ভুল করার ব্যাপারে ভীত নন

আত্মবিশ্বাসী লোকেরা কোনো ব্যাপারে ভুল প্রমাণিত হওয়ার ব্যাপারে ভীত নন। তারা নিজেদের মতামত তুলে ধরতে পছন্দ করেন। আর তা ভুল হলে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। আর তারা যখন সঠিক হন তখন লোকে তাদের কাছ থেকে শেখেন।


১০. তারা অন্যদের সাফল্য উৎযাপন করেন

নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা লোকেরা নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে অনবরত সন্দেহ প্রকাশ করেন। আর এ কারণে তারা সবসময় মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে চান এবং অন্যদের সমালোচনা করে নিজেদের মূল্য প্রমাণের চেষ্টা করেন।


অন্যদিকে, আত্মবিশ্বাসী লোকেরা নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হন না। কারণ তারা নিজেদের মূল্য তাদের ভেতর থেকেই আহরণ করেন। এরা অনিরাপদভাবে নিজেদের ভেতরে মনোযোগ নিবদ্ধ করার বদলে বরং বাইরে মনোযোগ দেন। ফলে অন্যরা যেসব বিস্ময়কর অবদান রাখছে তা দেখতে পান। এর একটি স্বাভাবিক ফলাফল হলো লোককে তাদের অবদানের জন্য প্রশংসা করা।