বিশ্বের স্বৈরশাসকদের রাজপ্রাসাদ কাহিনী!

জানা অজানা November 21, 2016 1,366
বিশ্বের স্বৈরশাসকদের রাজপ্রাসাদ কাহিনী!

ক্ষমতায় থাকাকালে তারা প্রতাপের সঙ্গে দেশ শাসন করেছেন। গড়ে তুলেছেন দারুণ সুন্দর এবং জাঁকজমকপূর্ণ সব প্রাসাদ। ক্ষমতা থেকে তাদের পতনের পরই কেবল সাধারণ মানুষের সুযোগ হয়েছে এসব প্রাসাদের ভেতরের দৃশ্য দেখার এবং জানার।


১. চওসেস্কুর ‘বসন্ত প্রাসাদ’, বুখারেষ্ট, রোমানিয়া : ২৭ বছর আগে জনরোষের মুখে পতন ঘটেছিল রোমানিয়ার কমিউনিষ্ট একনায়ক নিকোলাই চওসেস্কুর। যে প্রাসাদোপম বাসভবনে তিনি থাকতেন, সেটি আগামীকাল খুলে দেয়া হচ্ছে সাধারণের জন্য। নিকোলাই চওসেস্কু এবং তাঁর স্ত্রী এলেনা ১৯৬০ সাল থেকে এই ‘স্প্রিং প্যালেসেই’ থাকতেন। বুখারেষ্টের সবচেয়ে অভিজাত এলাকায় এই প্রাসাদ। যদিও প্রাসাদ বলা হচ্ছে, এটি আসলে ভিলা টাইপের একটা বাড়ী।


তবে একনায়কদের রুচি যেমনটা হয়, সোনালি কারুকার্য খচিত এবং দামী আসবাবপত্রে সজ্জিত। মোট ৮০টি কক্ষ রয়েছে পুরো বাড়িতে। আছে সিনেমা, সুইমিং পুল এবং দারুণ এক ড্রেসিং রুম। ১৯৮৯ সাল গণ অভ্যুত্থানের মুখে পতনের পর এটি সরকার অধিগ্রহণ করে। এটি বিক্রির চেষ্টা করেছিল সরকার। কোন ক্রেতা পাওয়া যায়নি। এখন এটি খুওেল দেয়া হচ্ছে সাধারণের পরিদর্শনের জন্য।


২. গাদ্দাফির বাব আল আজিজিয়া কমপাউন্ড, ত্রিপলি, লিবিয়া : বাব আল আজিজিয়া কমপাউন্ড ছিল লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার আল গাদ্দাফির প্রধান ঘাঁটি। ২০১১ সালে লিবিয়ায় বিদ্রোহীদের হাতে ধরা পড়ে নিহত হওয়ার আগে পর্যন্ত এখানেই থাকতেন। গাদাফির শাসনামলে বাব আল আজিজিয়া নিয়ে ছিল অনেক রহস্য। বিরোধীদের কাছে এটি ছিল আতংক।


বিদ্রোহীরা ২০১১ সালের অক্টোবরে এটি দখল করে নেয়। তারা গাদ্দাফির মূর্তির মাথা ভেঙ্গে ফেলে এরকম দৃশ্যও দেখা গেছে। ভেতরে তারা খুঁজে পেয়েছেন সুড়ঙ্গের এক বিরাট নেটওয়ার্ক। এ কমপাউন্ডের ভেতরে হাসপাতাল, অপারেশন থিয়েটারও নাকি ছিল। বিদ্রোহীরা বুলডোজার দিয়ে কম্পাউন্ডের বাইরের দেয়ালগুলো ভেঙ্গে ফেলে। এখন এই কম্পাউন্ডে একটি পার্ক তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।


৩. ফার্দিন্যান্ড মার্কোস এবং ইমেলদা মার্কোসের সান্টো নিনো প্রাসাদ, টাকলোবান, ফিলিপাইন : এই প্রাসাদ তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯৭০ এর দশকের শেষে এবং কাজ শেষ হয় ১৯৮১ সালে। যেখানে এই প্রাসাদ নির্মাণ করা হয় সেই টাকলোবান ইমেলদা মার্কোসের নিজের শহর। পুরো প্রাসাদ সাজানো হয় দামী দামী পেইন্টিং, অ্যান্টিক সিরামিক, চীনের মিং শাসনামলের ফুলদানি এবং দামী আসবাবপত্র দিয়ে।


২১ হাজার ৫শ বর্গফুটের এই প্রাসাদে দ্বিতীয় তলায় আছে বিশাল এক নাচঘর। আছে অলিম্পিক সাইজের সুইমিং পুল, স্টেট ডাইনিং রুম, এবং ১৩টি গেষ্ট রুম। ফার্দিন্যান্ড মার্কোস নাকি দেশজুড়ে এরকম আরও ২৯টি প্রেসিডেনশিয়াল রেস্ট হাউজ তৈরি করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে এক বিরাট গণঅভ্যুত্থানের মুখে মার্কোসের পতন ঘটে।


৪. ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের মেঝিহিরিয়া প্রাসাদ, কিয়েভ, ইউক্রেন : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের প্রাসাদ মানুষ প্রথম দেখার সুযোগ পান ২০১৪ সালে পার্লামেন্ট তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর। এরপর এই প্রাসাদটি অধিগ্রহণ করে রাষ্ট্র। ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন। কিয়েভের উপকন্ঠে এই প্রাসাদ।


অসম্ভব সুন্দর এক বাড়ী। চারপাশ ঘিরে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম লেক। আছে চিড়িয়াখানা, গলফ কোর্স, টেনিস কোর্ট। উদ্যানগুলো সুন্দর সব ভাস্কর্য আর ফোয়ারা দিয়ে সাজানো। ইউক্রেনের মানুষের কাছে এটি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যাপক দুর্নীতির প্রতীক।


৫. সাদ্দাম হোসেনের রিপাব্লিকান প্রাসাদ, বাগদাদ, ইরাক : ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা জোট ইরাকে অভিযান চালায়। ক্ষমতাচ্যুত হন সাদ্দাম হোসেন। সেবছরই সাদ্দাম হোসেন ধরা পড়েন, বিচার করে তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। বাগদাদ সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তার বেশ কিছু প্রাসাদ ছিল। একটি প্রাসাদের নীচে নাকি আন্ডারগ্রাউন্ড কমান্ড সেন্টার এবং নিউক্লিয়ার শেল্টারও ছিল। ছিল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বাতাস ও পানি পরিশোধনাগার।


তবে বাগদাদের রিপাব্লিকান প্যালেসই ছিল তার প্রধান প্রাসাদ। বসরায় সাদ্দাম হোসেন আরেকটি প্রাসাদ তৈরি করেন। সেই প্রাসাদ কমপাউন্ডের কেবল একটি ভবনের সামনের অংশেই ছিল ৫৬টি জানালা। ছিল ১৮টি বিশাল কক্ষ, ১২টি বেলকনি। পুরো কমপাউন্ডে এরকম ভবন ছিল ১৫টি।-বিবিসি