এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ

সাহায্য ও পরামর্শ November 11, 2016 6,426
এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ হলো পরীক্ষার হলে উত্তরপত্র হাতে পেলে রোল, রেজিস্ট্রেশন ও বিষয় কোড লেখার আগে উত্তরপত্রের প্রতিটি পাতা উল্টিয়ে দেখতে হবে ভেতরের পাতাগুলো ঠিক আছে কি-না! যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তবে কভার পৃষ্ঠার বা ও এমআর সিটের নির্দিষ্ট স্থানে রোল রেজিস্ট্রেশন প্রভৃতি লিখে তা ভরাট করা উচিত। আর যদি ভেতরের কোনো পাতা ছেঁড়া বা নষ্ট থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে দায়িত্বরত কক্ষ পরিদর্শকের কাছে উত্তরপত্রটি বদল করে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষা বোর্ডে ও কেন্দ্রে উত্তরপত্রসমূহ বার বার যাচাই বাছাই করে দেখার পরেও নষ্ট উত্তরপত্র পরীক্ষার্থীর হাতে পড়তে পারে। যদি উত্তরপত্রের পাতাগুলো উল্টিয়ে না দেখে রোল, রেজিস্ট্রেশন প্রভৃতি লিখে বৃত্ত ভরাট করা হয় এবং উত্তরপত্রে মার্জিন দিতে গিয়ে ত্র“টির বিষয়টি তোমার নজরে আসে ‘তখন উত্তরপত্র পাল্টাতে সমস্যা দেখা না দিলেও মূল্যবান কিছু সময় যে নষ্ট হয়ে গেল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাছাড়া পরীক্ষার শুরুতে এমন ঘটনায় মনে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়তে পারে। তাই উত্তরপত্র হাতে এলে সবার আগেই উত্তরপত্রটি একবার নিরীক্ষা করে দেখতে হবে।


উত্তরপত্রের কভার পৃষ্ঠা বা ওএমআর সিটের তিনটি অংশ থাকে। কেবল প্রথম অংশটি পরীক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য এবং দ্বিতীয় অংশ পরীক্ষক/প্রধান পরীক্ষকের জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে। তৃতীয় অংশটি উত্তরপত্রের সাথে সংযুক্ত থাকে। পরীক্ষার্থীকে ওএমআর সিটের তার নির্দিষ্ট অংশের নির্দিষ্ট স্থানে রোল, রেজিস্ট্রেশন ও বিষয় কোড লিখে তৎসংলগ্ন নিচের সংখ্যাগুলো ভরাট করে দিতে হয়। ওএমআর সিটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় অংশটি কোনোভাবেই পূরণ করা যাবে না এবং বৃত্ত ভরাটের ক্ষেত্রে অবশ্যই কালো রঙের কালির বল পয়েন্ট কলম ব্যবহার করতে হবে।


এবার কভার পৃষ্ঠার বৃত্ত ভরাটের কাজটি অতি সতর্কতার সাথে তোমাকে করতে হবে। যদি তারপরেও কোনো সংখ্যার বৃত্ত ভুল ভরাট হয়ে যায়, তবে সেক্ষেত্রে ভুল ভরাট হয়ে যাওয়া বৃত্তটি কোনোরূপ ঘষাঘষি না করে বা না কেটে পুনরায় সঠিক সংখ্যার বৃত্তটি ভরাট করে দিতে হবে। বৃত্ত ভরাটের পর কভার পৃষ্ঠার পরের পাতায় যেখানে পরীক্ষার সাল, বিষয়, বিষয় কোড ও তারিখ লেখার জায়গা রয়েছে সেগুলো লিখে ফেলা উচিত। এবার সম্পূর্ণ উত্তরপত্রটি স্কেল ও পেন্সিল/কলম দ্বারা মার্জিন দিয়ে নিতে হবে। মার্জিন যাতে আঁকা-বাঁকা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। তোমার উত্তরপত্রের মার্জিন এক ইঞ্চির বেশি না হওয়া ভালো। আবার খুব ছোট বা অর্ধইঞ্চি মার্জিন দেওয়া ঠিক নয়। মার্জিনের জন্য লাল রং কালির কলম/ পেন্সিল ব্যতীত অন্য যে কোনো রং ব্যবহার করা যাবে। মনে রাখতে হবে, প্রশ্নপত্র তোমার হাতে আসার পূর্বেই এ কাজগুলো তোমাকে সম্পূর্ণরূপে শেষ করতে হবে। নতুবা উত্তর লেখার প্রকৃত সময় থেকে তোমার কিছুটা সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে।


পরীক্ষার হলে হাতে যখন প্রশ্নপত্র এসে পৌঁছাবে তখন প্রশ্নপত্রে বর্ণিত নির্দেশনা ভালোভাবে লক্ষ্য করতে হবে। কোন বিভাগ থেকে কতটি প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয়েছে, আবার কোন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আবশ্যিক রয়েছে কি-না, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবার সৃজনশীল বিষয়ের ক্ষেত্রে এমন একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে লেখা শুরু করতে হবে যে প্রশ্নটির জ্ঞান স্তরের অর্থাৎ ‘ক’ নাম্বারের প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে জানা আছে। প্রথম প্রশ্নটি বা জ্ঞান স্তরের প্রশ্নটির উত্তর পরীক্ষকের নজরে ভুল প্রতীয়মান হলে মূল প্রশ্নের অন্যান্য প্রশ্ন অর্থাৎ খ.গ.ঘ নাম্বারের প্রশ্নের উত্তর মূল্যায়নের বেলায় সম্পর্কে পরীক্ষকের খারাপ ধারণা জন্মাবে। আবার জ্ঞান স্তরের প্রশ্নের উত্তর এককথায় লেখার চেষ্টা করা ভাল। কেননা পরীক্ষক কেবল সঠিক উত্তরটি আশা করেন, তাতে সময় বাঁচবে। বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য একটা উদাহরণ লক্ষ্য করা যাক। প্রশ্ন-ক. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত সালে নোবেল পুরস্কার পান? উত্তর: ১৯১৩ সালে। অনেকে হয়তো লিখবে ‘বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।’ জ্ঞান স্তরের প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য এমন বাহুল্য বর্জন করা উচিত। সব প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় প্রশ্নের ক্রমিক নাম্বার দিয়ে উত্তর লিখতে হবে। আবার ‘ক’ নাম্বারের প্রশ্নের উত্তর লিখে একটু জায়গা ছেড়ে দিয়ে ‘খ’ নাম্বারের উত্তর লিখতে হবে। আবার অনুরূপভাবে ‘গ’ নাম্বার ও ‘ঘ’ নাম্বারের প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। উত্তর লেখার কাজ এভাবে চলতে থাকবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, যতবারই ‘ক’ ‘খ’ ‘গ’ ‘ঘ’ প্রশ্ন নাম্বারগুলো লিখবে ঠিক ততবারই তোমাকে মূল প্রশ্ন নাম্বার উল্লেখ করতে হবে।


.

অর্থাৎ ১‘ক’, ১‘খ’, ১‘গ’, ১‘ঘ’, এভাবে লিখতে হবে। তবে প্রশ্নপত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা আবশ্যিক নয়। ইচ্ছে করলে ৫‘ক’-এর উত্তর লিখে ৭‘গ’-এর উত্তর লিখা যায়। তবে এক্ষেত্রে পরীক্ষক বিরক্ত হতে পারেন। তাই এভাবে উত্তর না লেখাই শ্রেয়। প্রশ্ন নাম্বার লেখার জন্য নীল কালি ব্যবহার করা যায় এবং মার্জিনের জন্যও নীল বা সবুজ কালি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে তোমার উত্তরপত্রের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। মাঝে মধ্যে ঘণ্টা বা সময়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে সময়ের সাথে সংগতি রেখে উত্তর লেখার কাজটি চলতে পারে। মনে রাখতে হবে, ৬০ পূর্ণমানের বিষয়গুলোর প্রতিটি উদ্দীপকের উত্তর ২০/২১ মিনিটের মধ্যেই লেখা শেষ করতে হবে। নইলে পুরো ৬০ নম্বরের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়।


পরীক্ষার সময় এক ঘণ্টা অতিবাহিত না হলে কিন্তু কক্ষ থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না। তাই এক ঘণ্টার মধ্যে যাতে বাথরুম ডেকে না বসে সে জন্য পূর্ব থেকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। উত্তর লেখার সময় নজর রাখতে হবে যাতে লেখার লাইন বাঁকা না হয়। এ জন্য অবশ্য পূর্ব থেকেই অনুশীলনের প্রয়োজন। তা ছাড়া পরীক্ষার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে এখন থেকে প্রত্যেহ কমপক্ষে তিন ঘণ্টা লিখতে হবে। তাহলে পরীক্ষার হলে লিখতে গিয়ে ক্লান্তি আসবে না। উত্তর লিখতে গিয়ে যাতে কাটাকাটি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। একান্ত কাটাকাটি যদি করতেই হয়, তবে লেখার লাইনের ওপর দিয়ে লম্বালম্বিভাবে কেটে দেওয়া ভালো।


আড়াআড়িভাবে বা ক্রসচিহ্ন দিয়ে কাটতে গেলে তা সহজে পরীক্ষকের চোখে পড়বে এবং উত্তরপত্রের সৌন্দর্য কিছুটা হলেও নষ্ট হবে। পরীক্ষার হলে যখন অতিরিক্ত উত্তরপত্রের প্রয়োজন পড়বে, তখন কমপক্ষে মূল উত্তরপত্রের একটা পৃষ্ঠা ফাঁকা থাকার পূর্বেই তুমি কক্ষ পরিদর্শককে অতিরিক্ত উত্তরপত্রের প্রয়োজনের কথাটা জানাতে হবে। এমন হতে পারে, ওই কক্ষে অতিরিক্ত উত্তরপত্র শেষ হয়ে গেছে এবং তা আবার কক্ষে পৌঁছতে দুই মিনিট সময় লেগে যেতে পারে। অথবা পরীক্ষার্থীর হাজিরা স্বাক্ষর গ্রহণে বা অন্য কোনো কাজ করে শেষ প্রান্তে কক্ষ পরিদর্শক নিমগ্ন আছেন। যদি মূল উত্তরপত্রের সম্পূর্ণ অংশ লিখে অতিরিক্ত উত্তরপত্র লাগে তাহলে ১/২ মিনিট সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, কক্ষ পরিদর্শক পরীক্ষার হলে যারা আছেন ‘তারা কোনো না কোনো স্কুলের শিক্ষক। সুতরাং তাদের প্রতি অবশ্যই শিক্ষক সুলভ আচরণ করতে হবে। এবার অতিরিক্ত উত্তরপত্র হাতে পৌঁছালে পূর্বের নিয়মে মার্জিন দিয়ে এবং ওপরের বাম কর্নার ঘেঁষে ১ লিখে রাখা, এভাবে দ্বিতীয়বার প্রয়োজন হলে ২ ও তার পরেরটিতে ৩ এবং যতবার অতিরিক্ত উত্তরপত্র গ্রহণ হবে ওপরের কর্নারে নম্বর দিয়ে রাখা ভাল। যখন সময়ের শেষ প্রান্তে তোমার উত্তরপত্র সেলাই করার আবশ্যকতা দেখা দেবে; তখন অতিরিক্ত উত্তরপত্রের ক্রমিক সংখ্যাগুলো দ্রুত মিলিয়ে নিয়ে তোমার উত্তরপত্র সেলাই করতে হবে। এতে সময় নষ্ট হবে না এবং অতিরিক্ত উত্তরপত্রগুলো ওলট-পালট হওয়ার সুযোগ থাকবে না।


উত্তর লেখার কাজ শেষ হওয়ার পর পরীক্ষার জন্য বরাদ্দকৃত সময় হাতে থাকলে উত্তরপত্র জমা না দিয়ে বরং চূড়ান্ত ঘণ্টা পড়া অবধি আগাগোড়া উত্তরপত্রটি বার বার ভালোভাবে পড়া উচিত এবং কোনো ভুল নজরে আসলে তা সংশোধন করতে হবে।