ঘুরে আসুন রিসাং ঝর্ণা থেকে

দেখা হয় নাই October 30, 2016 2,022
ঘুরে আসুন রিসাং ঝর্ণা থেকে

সবুজ প্রকৃতির মাঝে ঝর্ণা, সে এক অপরূপ সৌন্দর্য। বর্ষায় এর রূপ যেন হয়ে ওঠে আরো দৃষ্টিনন্দন। কারণ, বর্ষা যেন এর রূপের পূর্ণতা দান করে, আর সবুজ যেন এর চারপাশের প্রকৃতিকে আরো মায়াময় করে তোলে। ঝর্ণার শব্দ অনেকের কাছে ছন্দময়। ঝর্ণার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তার ঝর্ণা কবিতায় লিখেছেন, ‘ঝর্ণা! ঝর্ণা! সুন্দরী ঝর্ণা!/ তরলিত চন্দ্রিকা! চন্দন-বর্ণা!’


চোখজুড়ানো মায়াময় অনেক ঝর্ণাই রয়েছে আমাদের পার্বত্য জেলাগুলোতে। এসব ঝর্ণার মধ্যে অন্যতম সুন্দর ঝর্ণা হলো রিসাং ঝর্ণা। ঝর্ণাটি দেখতে অপূর্ব সুন্দর। যাঁরা আগেও ঝর্ণা দেখেছেন, তাঁরা এই ঝর্ণাটিতে কিছুটা হলেও নতুনত্ব পাবেন। ঝর্ণাটির আসল সৌন্দর্য দেখতে আপনাকে যেতে হবে বর্ষাকালে। তবে সারা বছরই পর্যটকরা এই ঝর্ণা দেখতে আসেন, বিশেষ করে সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। ঝর্ণাটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এই ঝর্ণার পানি প্রথমে উঁচু স্থানে পড়ে, আবার সেখান থেকে ঢালু জায়গা দিয়ে দ্রুতবেগে গড়িয়ে পড়ছে। ঝর্ণাটি দেখতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে ছুটে আসেন।



কীভাবে যাবেন

রিসাং ঝর্ণার অবস্থান খাগড়াছড়ি জেলায়। ঝর্ণাটির মায়াময় সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে প্রথমেই যেতে হবে খাগড়াছড়ি সদরে। ঢাকা থেকে হানিফ, সৌদিয়া, রিফাত, শ্যামলীসহ অনেক বাস প্রতিদিন খাগড়াছড়ি যাতায়াত করে। ভাড়া ৫২০ টাকা (নন-এসি)। খাগড়াছড়ির শাপলা মোড় পৌঁছে আপনি রিসাং ঝর্ণা যাওয়ার অনেক গাড়ি পাবেন। এখানে অটোজাতীয় এক ধরনের গাড়ি যাতায়াত করে। ভাড়া এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০। তবে অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করে গেলে ভাড়া আরো কম পড়বে। যাঁরা খাগড়াছড়ি যান, তাঁরা প্রায় অধিকাংশই শাপলা মোড়ের আশপাশেই থাকেন। এখান থেকে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যাওয়ার জন্য চান্দের গাড়িসহ অনেক গাড়ি আপনি পাবেন। তা ছাড়া আপনারা সংখ্যায় যদি কম থাকেন, ভাগ্য ভালো থাকলে এখান থেকে হয়তো বা অন্য কারো সঙ্গে শেয়ার করে যাওয়ার ব্যবস্থাও হয়ে যেতে পারে। তবে চান্দের গাড়িতে ভাড়া একটু বেশি পড়বে। আপনি যদি চান্দের গাড়িতে বা অটোজাতীয় গাড়িতে করে যান, তাহলে গাড়ি আপনাকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নামিয়ে দেবে, সেখানে আপনি সরাসরি অনেক মোটরসাইকেল বা বাইক দেখতে পাবেন। এগুলোতে চড়ে আপনাকে যেতে হবে আরো বেশ কিছু পথ। স্থানীয়দের মতে, পাকা রাস্তা থেকে রিসাং ঝর্ণা যেতে আরো তিন কিলোমিটার যেতে হবে। তবে আপনি চান্দের গাড়ি কিংবা অটোজাতীয় গাড়ি আপনাকে বাইকস্ট্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। সেখান থেকে বাইকে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। যেতে সময় লাগতে পারে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তায় বাইক ভ্রমণ সে এক অন্য রকম অনুভূতি যোগ হতে পারে আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে। তবে আপনি চাইলে হেঁটে যেতে পারেন। এতে সময় লাগতে পারে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট। বাইকে চড়ে কিংবা হেঁটে যে স্থানটিতে পৌঁছাবেন, সেখানে বেশ কয়েকটি দোকান পাবেন। চাইলে এখান থেকে চা, লেবুর শরবত, ডাব খেয়ে নিতে পারেন। দোকানগুলোর সামনেই কতগুলো পাকা সিঁড়ি দেখতে পাবেন, যেগুলো নেমে গেছে পাহাড়ের নিচের দিকে। ঝর্ণাটি দেখতে হলে আপনাকে ২৩৫টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে হবে। সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতেই ঝর্ণার শ্রুতিমধুর শব্দ কানে আসবে আপনার। নিচে নেমে ঝর্ণা ও এর আশপাশের প্রকৃতি আপনাকে আনন্দে ভরিয়ে তুলতে পারে।



কিছু বিষয় মনে রাখবেন

১. অনেকেই ঝর্ণার ঢালু ও পিচ্ছিল জায়গাটি বেয়ে নিচে নামা বা ওপরে উঠতে চেষ্টা করেন। এতে নানা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।


২. সঙ্গে খাবার পানি রাখুন। ক্লান্ত হয়ে গেলে পানি পান করুন।


৩. সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে নষ্ট করবেন না।