রবি-এয়ারটেল একীভূত হওয়ার অনুমতির মূল ৫ শর্তে গ্রাহক স্বার্থ উপেক্ষিত

BTRC News October 30, 2016 1,272
রবি-এয়ারটেল একীভূত হওয়ার অনুমতির মূল ৫ শর্তে গ্রাহক স্বার্থ উপেক্ষিত

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৮ শে অক্টোবর গণমাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে, রবি-এয়ারটেল একীভূত (মার্জার) হতে বিটিআরসির বেঁধে দেয়া সর্বশেষ শর্তের মধ্যে ৫টি মূল শর্তে গ্রাহক স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে। শর্তসমূহের বিশ্লেষণ নিম্নরূপ।


এক. আগামী ২ বছরে ৩ কিস্তিতে একীভূত কোম্পানী (মার্জার) হতে ফি হিসেবে রবি-এয়ারটেলকে মোট ৬ শত ৭ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। যা আদালতের নির্দেশ। এর মধ্যে মার্জার ফি হিসেবে ১০০শত কোটি টাকা আর এয়ারটেলের তরঙ্গ একীভূত করার ফি হিসেবে ধরা হয়েছে ৫শত ৭ কোটি টাকা। এই অর্থ বিটিআরসির নোটিশ প্রদানে ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। তবে কিস্তিতে পরিশোধ করতে হলে চিঠি পাওয়ার ১ মাসের মধ্যে ৪৯ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। বাকি ৫১ শতাংশ অর্থ পরবর্তী ২ বৎসরে ২টি কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে ১ম বৎসরে ২৯ শতাংশ আর ২য় বৎসরে ২২ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। অথচ সিটিসেল ৪৭৭ কোটি টাকা বকেয়ার মধ্যে ১৩০ কোটি টাকা পরিশোধ করার পরও এই অপারেটর বন্ধ করে দেওয়া হলো।


দুই. রবি-এয়ারটেল একীভূত (মার্জার) কোম্পানী কোন কর্মীকে চাকুরীচ্যুত করা যাবে না। যদি না কোন কারণ থাকে। তিন. ৯০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড থেকে এয়ারটেলের ৫ মেগাহার্জ তরঙ্গ ফেরৎ দিতে হবে। এই শর্তের পিছনে আমরা মনে করি বড় ২টি অপারেটরকে খুশি করা হয়েছে। রবি-এয়ারটেলের (মার্জার) হওয়ার ক্ষেত্রে মূলত গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল। কারণ ২টি- ১টি হচ্ছে গ্রাহক সংখ্যা। বর্তমানে গ্রামীণ ফোনে গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ৬৩ লাখ, বাংলালিংকে ২ কোটি ৮৯ লাখ, টেলিটকের ৪৪ লাখ ৩৭ হাজার, সিটিসেলের ৬ লাখ ৬৮ হাজার আর রবির ২ কোটি ৩২ লাখ + এয়াটেলের ৭৯ লাখ। ২টি অপারেটরের মোট গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ১১ লাখ। যা বর্তমানে দেশের ২য় বৃহত্তম গ্রাহকের অপারেটর হতে যাচ্ছে। ২য় টি হচ্ছে তরঙ্গ। বর্তমানে গ্রামীণফোনে তরঙ্গ আছে ২এ, ৩এ মিলিয়ে ৩২ মেগাহাটর্জ। রবির বর্তমানে মেগাহাটর্জ হলো ২এ, ৩এ মিলিয়ে ১৯.৮০ মেগাহাটর্জ তরঙ্গ আর এয়ারটেলের আছে ২০মেগাহাটর্জ। ২টি প্রতিষ্ঠানের একত্রে মোট তরঙ্গের পরিমাণ দাড়ায় ৩৯.৮০ মেগাহাটর্জ। তরঙ্গ বরাদ্দ ও গ্রাহক অনুপাতের তুলনামূলক পরিসংখ্যান হিসাব করলে দেখা যায় যে, বাজারে মোট গ্রাহকের ২৮ শতাংশ বা ৩ কোটি ১১ লাখ গ্রাহককে সেবা দেওয়ার জন্য ৩৯.৮০ মেগাহাটর্জ তরঙ্গ যা ২এ, ৩এ ব্যান্ডের মোট তরঙ্গের ৩৪ শতাংশ অন্যদিকে ৪২ শতাংশ বা ৫ কোটি ৬৩ লাখ গ্রাহককে সেবা দেওয়ার জন্য গ্রামীণফোনের তরঙ্গ থাকবে ৩২ মেগাহাটর্জ যা ২এ, ৩এ জি মোট তরঙ্গের ২৭ শতাংশ।


বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, এ জন্য গ্রামীণফোনকে এক প্রকার সন্তুষ্ট করার জন্যই এ ব্যবস্থা বলে আমরা মনে করি। তাই তরঙ্গ একীভূত করণের শর্ত হিসেবে এয়ারটেলের ৯ শত মেগাহাটর্জ ব্যান্ডের ৫ মেগাহাটর্জ তরঙ্গ ফেরৎ দিতে বিটিআরসি এয়ারটেলকে নির্দেশ প্রদান করে।


চার. একীভূত হওয়ার ২ মাসের মধ্যেই VRS/VSS কার্যকর করতে বলা হয়েছে। পাঁচ. বকেয়া পরিশোধে এয়ারটেলের ১ লাখ শেয়ার বৃদ্ধি করতে পারবে। এর মূল কারণ এয়ারটেলের অর্থ সংগ্রহের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। যাতে করে এয়ারটেল বিটিআরসির পাওনা পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। এই ৫টি শর্তের মধ্যে কোথাও গ্রাহক বা ভোক্তার স্বার্থের কথা উল্লেখ করা হয়নি। একীভূত হওয়ার ফলে রবি ও এয়ারটেল অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পর গ্রাহক স্বার্থ সবচাইতে বেশি রক্ষা করার কথা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো বিটিআরসি এ সকল শর্তের মধ্যে কোথাও গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণ হয় এরকম কোন শর্ত আরোপ করে নাই।


উল্লেখ্য গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রবি-এয়ারটেল (মার্জার) এর জন্য বিটিআরসিতে আবেদন করে। পরবর্তীতে এ নিয়ে মহামান্য হাইকোর্টে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মামলা করে। এরপর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিটিআরসি এক গণ শুনানির আয়োজন করে। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিটিআরসির চেয়ারম্যান বরাবর আমাদের মতামত সংক্রান্ত একটি চিঠি উপস্থাপন করি। যাতে গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য কতিপয় শর্ত উল্লেখ করি।