এ কী করলেন দুই ব্যাংক-ডাকাত!

মজার সবকিছু October 28, 2016 1,653
এ কী করলেন দুই ব্যাংক-ডাকাত!

এই কৌতুকটা কুড়িয়ে পাওয়া। ফেসবুকে পেয়েছিলাম। তারপর হারিয়ে ফেলি। গুগলে সার্চ করে আবার উদ্ধার করলাম একটা কৌতুকের সাইট থেকে। আপনাদের জন্য পরিবেশন করছি নিজের ভাষায়। (এবং কিছুটা সংযোজন-বিয়োজনসমেত)


দুজন ব্যাংক-ডাকাত অস্ত্র হাতে ঢুকে পড়েছে একটা ব্যাংকে।


তারা চিৎকার করে উঠল, ‘সবাই মাথা নিচু করে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। জীবন আপনার নিজের, টাকা হলো সরকারের।’


(এটাকে বলে, মাইন্ড চেঞ্জিং কনসেপ্ট। মানসিকতা পাল্টে দেওয়া ধারণা। প্রথাগত ধারণাকে পাল্টে দেওয়া।)


একজন মহিলা ভয়ে তার হাতের চুড়ি, গলার হার খুলতে লাগলেন।


ডাকাতেরা বলল, আমরা ব্যাংক-ডাকাত। রাস্তার ছিনতাইকারী নই। গয়না নিজের কাছে রাখুন।


(এটাকে বলে, পেশাদারি। আপনি যে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত, শুধু সেটাই করবেন। সাহিত্যিকের উচিত নয় রোগীর জন্য প্রেসক্রিপশন লেখা।)


তারা ব্যাংকের টাকা লুট করে নিয়ে চলে গেল তাদের নিরাপদ ডেরায়।


জুনিয়র ডাকাতটা ছিল এমবিএ পাস। সিনিয়র ডাকাতটা ছিল ম্যাট্রিক ফেল। জুনিয়র বলল, ‘বস, কত টাকা আনলাম, গুনে দেখি।’


সিনিয়র ডাকাত বলল, ‘এত টাকা গুনে শেষ করা যাবে নাকি। বরং টেলিভিশনের খবর দেখ। একটু পরে টেলিভিশনে লাইভ দেখাবে। তখনই জানা যাবে আমরা কত টাকা আনতে পেরেছি।)


(এটাকে বলা হয় অভিজ্ঞতা। আজকাল অভিজ্ঞতার দাম নেই। সবাই শুধু এমবিএ খোঁজে)


ডাকাতেরা চলে গেছে। ম্যানেজার তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারকে বললেন, ‘পুলিশে খবর দাও।’


অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার বললেন, ‘স্যার। ৫ কোটি টাকা আগে সরিয়ে রাখি। বলব, এই ৫ কোটি টাকাও ডাকাতে নিয়ে গেছে।’


(এটাকে বলা হয়, জোয়ারের পানিতে সাঁতার কাটা। কোনো একটা বিপদকে সম্পদে পরিণত করা)


অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার বললেন, প্রতি মাসে একবার করে ব্যাংকে ডাকাতি হলে বেশ হতো।


(এটাকে বলা হয়, মূল্যবোধের অবক্ষয়। নৈতিকতা একবার ভেঙে গেলে তা বারবার ভেঙে ফেলা সহজ হয়ে যায়।)


একটু পরে টেলিভিশনে স্ক্রল দেখানো শুরু হলো, অমুক ব্যাংকের অমুক শাখা থেকে ২০ কোটি টাকা ডাকাতি হয়ে গেছে।


ডাকাত দুজন তখন টাকা গুনতে শুরু করল। গুনে দেখল, তাদের বস্তায় আছে মাত্র ৫ কোটি টাকা।


তখন বড় ডাকাত ছোট ডাকাতকে বলল, ‘হারামজাদা ব্যাংক-ম্যানেজাররা তো আমাদের চেয়েও বড় ডাকাত। আমরা কত কষ্ট করে ডাকাতি করা শিখেছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডাকাতি করতে হয়। কত কষ্ট করে ডাকাতি করে আমরা পেলাম ৫ কোটি। আর কিনা ওরা এক মুহূর্তে ১৫ কোটি টাকা ইনকাম করল!’


ছোটটা বলল, এত কষ্ট করে চুরি-ডাকাতি না করে আপনি ব্যাংক-ম্যানেজার হলেই পারতেন।


(এটাকে বলা হয়, পেন ইজ মাইটার দেন সোর্ড। তরবারির চেয়ে কলমের শক্তি বেশি।)


ম্যানেজার তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারকে বললেন, ডাকাতে নিল ৫ কোটি। আমরা সরালাম ৫ কোটি। কিন্তু টেলিভিশনগুলো ২০ কোটি বলছে কেন? এই ১০ কোটি কে মারল?


(এটাকে বলা হয়, সরকারকে মাল দরিয়া মে ঢাল)


কিছুদিনের মধ্যেই তদন্ত শুরু হলো। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অবিলম্বে ডাকাত দুজনকে ধরে ফেলা হলো।


(অপরাধী কোনো না কোনো ক্লু রেখেই যায়।)


তাদের রিমান্ডে নেওয়া হলো। সব ধরনের কৌশল প্রয়োগ করে এই পর্যন্ত জানা গেল যে তারা ৫ কোটি টাকা নিয়েছে।


তাহলে বাকি টাকা কে নিল!


এইবার ধরা হলো ম্যানেজার আর অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারকে।


তাঁরা ৫ কোটি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করলেন। কিন্তু হিসাব তো মিলছে না। ডিম সেদ্ধ করা হলো।


(এটাকে বলা হয়, যা তুমি হজম করতে পারবে না, তা তুমি গিলতে যেয়ো না।)


সাংবাদিকেরা ধরলেন অর্থমন্ত্রীকে।


লুট হয়েছে ২০ কোটি টাকা।


পুলিশ উদ্ধার করেছে মাত্র ১ কোটি টাকা।


বাকি ১৯ কোটি টাকা কই?


অর্থমন্ত্রী বললেন, আমরা ২০০ কোটি টাকা শুধু আতশবাজিতে খরচ করি। ১৯ কোটি টাকা কই, এটা হিসাব করার টাইম কি আমাদের আছে? আমাদের সময়ের কি কোনো দাম নেই? ২ হাজার কোটি টাকাই আমাদের জন্য কোনো টাকা না। আপনি এসেছেন ১৯ কোটি টাকার হিসাব চাইতে। রাবিশ!


ছোট ডাকাত বলল বড় ডাকাতকে, আমাদের কাছ থেকে পুলিশ উদ্ধার করল ৫ কোটি। কিন্তু খবরের কাগজে কেন লিখেছে, উদ্ধার করা হয়েছে ১ কোটি?


বাকি ৪ কোটি কে মারল?


(এ বিষয়ে শেক্‌সপিয়ার বলেছেন, দেয়ার আর মোর থিংস ইন দ্য হেভেন অ্যান্ড আর্থ।)


ডাকাতেরা বলল, সংবাদপত্র মিথ্যা লেখে।


ম্যানেজার দুজন বললেন, সংবাদমাধ্যম মিথ্যা বলে।


তথ্যমন্ত্রী বললেন, সংবাদমাধ্যমকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। স্বাধীনতা মানে দায়িত্ব। আমরা সংবাদমাধ্যমকে স্বাধীনতা দিয়েছি। স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়। সংবাদমাধ্যমকে অবশ্যই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। তারা অবশ্যই সমালোচনা করবে। কিন্তু সমালোচনা হতে হবে গঠনমূলক।


কিছুদিনের মধ্যেই গণমাধ্যম সেই ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ভুলে গেল।


(এ কী করলেন দুই ব্যাংক-ডাকাত। এই শিরোনামের নিচে লেখা উচিত ছিল—ভিডিওসহ!:)


আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

-প্রথম আলো