একাধারে ১৩ বছর তিনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি ছিলেন বিল গেটস,পড়ুন তার জীবনের গল্প!

সফলতার গল্প October 28, 2016 8,857
একাধারে ১৩ বছর তিনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি ছিলেন বিল গেটস,পড়ুন তার জীবনের গল্প!

“যদি আপনি গরীব হয়ে জন্মগ্রহন করেন তবে সেটি আপনার দোষ নয়, কিন্তু আপনি যদি গরীব হয়ে মৃত্যবরণ করেন তবে সেটিই আপনার দোষ” কথাটি বলেছেন উইলিয়াম হেনরি গেটস। যা বলেছেন বাস্তব জীবনে তা করে দেখিয়েছেন। অনেকের মনেই হয়তো খটকা লাগছে। কেননা উপরিউক্ত বক্তব্যটি তো বিল গেটস এর। তাহলে এই হেনরি উইলিয়াম গেটস কে? হ্যা বিল গেটস এর পুরো নামই হলো উইলিয়াম হেনরি গেটস।


তৎকালীন বিখ্যাত আইনজীবী উইলিয়াম হেনরি গেটস ও ম্যাক্সওয়েলে গেটস এর দ্বিতীয় সন্তান হলেন বিল গেটস। তাদের আরও দুজন কন্যা সন্তান রয়েছে। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হওয়া বিল গেটস পরবর্তীতে অধিষ্ঠিত হন বিশ্বের সেরা ধনী হিসেবে। একাধারে ১৩ বছর তিনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি ছিলেন। বিল এর জন্ম হয় ১৯৫৫ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১৯ শে অক্টোবর ১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে।


ছাত্রজীবনে বিল বেশ মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। তার পিতামাতার ইচ্ছা ছিলো তাকে আইনজীবী বানানোর। ১৬ বছর বয়সে লেকসাইড স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার সময় ১৬০০ নম্বরের মধ্যে ১৫৯০ নম্বর পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। পরবর্তীতে ভর্তি হন হার্ভার্ড কলেজে।


বিল গেটস তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পুরোপুরি গ্রহণ না করেই ব্যাবসায় নেমে গিয়েছিলেন। তাই বর্তমানে অনেকেই বিল গেটস এর উদাহরণ দিয়ে পড়াশুনা না করার কথা বলে থাকেন। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন “ছেলে চমৎকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে ব্যাবসা শুরু করতে যাচ্ছে এ কথা শুনে উত্তেজিত হননি আমার বাবা মা। তা আবার এমন ব্যাবসা, যার নাম অনেকে জানেই না।


‘মাইক্রো কম্পিউটার’ সম্পর্কে তখন খুব কম লোকই জানতো। তবে বাবা মার দিক থেকে কখনো বাধা পাইনি। তারা সবসময় আমাকে সমর্থন করেছেন। বিভিন্ন দিক থেকে সেই দিনগুলো আমার কাছে খুব প্রিয় ছিলো। কলেজ ছেড়ে আসায় আমি খুব অনুতপ্ত। শুধু একটা চিন্তা মাথায় রেখে কলেজ ছেড়েছিলাম। স্বপ্ন ছিলো মাইক্রো কম্পিউটার সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করবো।” পড়াশুনা শেষ করতে না পারলেও পরবর্তীতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় সহ সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি পেয়েছেন উইলিয়াম হেনরি গেটস।


বন্ধু অ্যালেন এর সঙ্গে প্রোগ্রাম এর কাজ শুরু করেন বিল। পরবর্তীতে মাইক্রোসফট এর প্রতিষ্ঠা করেন। পৃথিবীর অন্যতম অপারেটিং সিস্টেম হলো উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম। ১৯৮৫ সালের ২০ নভেম্বর মাইক্রোসফট সর্বপ্রথম উইন্ডোজ ১.০ সংস্করণ প্রকাশ করে।


বিল গেটস সম্পর্কে অনেকে বলেন উনি নাকি যেখান সেখানে ১০০০ ডলারের নোট ফেলে রেখে যান যাতে অন্যের কাজে লাগে। ব্যাপারটা আসলে সম্পুর্ণ গুজব। তবে যা রটে কিছু না কিছু ঘটে। একবার বিল এর পকেট থেকে ১০০০ ডলারের একটি নোট পরে যায়। কিন্তু ব্যাস্ত ভাবে চলতে থাকায় সেটি খেয়াল করেন নি। পিছন থেকে একজন তাকে বারবার ডাকা সত্বেও তিনি সেটা খেয়াল করেন নি। সেখান থেকেই এ গুজবের উৎপত্তি। নিজের সম্পত্তি কখনো অযথা খরচ করেন নি বিল গেটস।


পুলিশ কাস্টডিতে থাকা বিল গেটস এর ছবি নিয়ে অনেক রকম খবর চাউর আছে। কেউ কেউ তো বলেই থাকেন উনি একবার চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিলেন যার ফলে তাকে পুলিশ ধরে নিয়েছিলো। তবে আসল ঘটনা এটি নয়। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া ও দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর অপরাধে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিলো ও জরিমানা করেছিলো। ঠিক একই কারণে উনি আরও দুইবার গ্রেফতার হন।


১৯৯৪ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ এর সঙ্গে। জেনিফার, রুবি ও ফৈবি নামক তিন সন্তানের জনক বিল গেটস। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির মালিক হওয়া সত্বেও তিন সন্তান কে কৌশলে ঠিকই এসবের মোহ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। নিজের পায়ে দাড়াতে উৎসাহ দিয়েছেন।


বিল গেটস এর প্রতিষ্ঠিত “বিল আন্ড মেলিন্ডা গেটস” ফাউন্ডেশন বৃহৎ একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। অসহায় ও দুস্থদের মাঝে সারা বিশ্বব্যাপী কাজ করে এ ফাউন্ডেশন। বিল গেটস এর সম্পদের বৃহৎ একটা অংশ এখানে ব্যয় করেন তিনি।


বিল গেটস এর একটি স্বপ্ন হলো “আগামী দিন গুলোতে ইন্টারনেট হবে সারা পৃথিবীর জন্য টাউন স্কয়ার”। তার এই স্বপ্নের দিকেই ধাবিত হচ্ছে বিশ্ব। অচিরেই হয়তো পূরণ হবে তার স্বপ্ন।