ঘুরে আসুন নওগাঁর জবই বিল

দেখা হয় নাই October 15, 2016 3,535
ঘুরে আসুন নওগাঁর জবই বিল

আমাদের দেশে ভ্রমণ পিপাসুদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা আশপাশে চোখ মেলে তাকাতে চান না। তারা ভ্রমণের জন্য পাড়ি জমান অচেনা কোনো দূর দেশে।


কিন্তু এই দেশটা যে অনেক সুন্দর, সবুজ শ্যামল প্রকৃতির মায়ায় ভরা সোনার বাংলাদেশ- তারা তারা ঘুরে ধেকতে চান না।


যারা মনে করেন দেশে মন জুড়ানোর মতো কিছু নেই তারা একটি বারের জন্য হলেও ঘুরে আসতে পারেন নওগাঁ জেলার বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র জবই বিল। যেখানে রয়েছে প্রকৃতির নির্মল রসায়নের এক অপরূপ আনন্দধারার বহমান।


সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃতির একটি অনবদ্য এ বিল। ঐতিহ্যবাহী এই বিলটি উত্তর-ভারতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বাংলাদেশের সাপাহার উপজেলাকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে দক্ষিণে পুনর্ভবা নদীতে মিলিত হয়েছে।


বিলের পশ্চিম পাশে সীমান্ত ঘেঁষে রয়েছে উপজেলার আইহাই, পাতাড়ী ও গোয়ালা ইউনিয়নের একাংশ। বিলটির প্রকৃত নাম দামুর মাহিল বিল। কিন্তু জবই গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পরবর্তীকালে এর নামকরণ হয়েছে জবই বিল।


নওগাঁর বিনোদনের জন্য অন্যতম বিনোদনের স্থান এই জবই বিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সময় কাটাতে জবই বিলে গিয়ে নৌকা বাইচ দেখে আনন্দ উল্লাস করে থাকেন পর্যটকরা। সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী এই বিলের আয়তন প্রায় এক হাজার একর। বর্ষাকালে পূর্ণ যৌবনে বৃদ্ধি পেয়ে এর আয়তন হয় প্রায় তিনহাজার একর। বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক মাছে ভরা থাকে এই বিল। প্রতিবছর শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া হতে অসংখ্য অতিথি পাখি আসে এই বিলে। সে সময় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান হতে অনেক দর্শনার্থী আসে এই বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে।


১৯৯৮ সালে তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী সরকারি এলাকার মৎস্যজীবীদের ভাগ্য উন্নয়নে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারিভাবে এই বিলটিকে একটি বৃহৎ মৎস্য প্রকল্প হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। সেই সঙ্গে বিলের দুই পাশের লোকজনের যাতায়াত ব্যবস্থাকে সহজতর করতে বিলের বুকে বাঁধ নির্মাণ, এক কিলোমিটার এপ্রোচ সড়কসহ ২শ’ মিটার একটি ব্রিজ নির্মাণ করেন। পরে ওই বিলে হাজার হাজার টন মাছ উৎপাদন করে এলাকার প্রায় সাড়ে ৮শ’ মৎস্যজীবী। বর্তমানে সাপাহার উপজেলার জবই বিলের মাছ দেশ জুড়ে সমদৃত। এই বিল হতে সারা বছর প্রাকৃতিতে পাওয়া বিশালাকৃতির শৌল, বোয়াল, আইড়, পাবদা, বাইনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজার, টাউন হল মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে।



নওগাঁ জেলার ঐতিহ্য এই জবই বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে অনেকেই আসেন পরিবার-পরিজন বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। উত্তরের সীমান্ত জেলা শহর নওগাঁ থেকে নজিপুর-সাপাহার-পোড়া মধইলগামী বাসে চড়ে আপনি সহজেই এখানে আসতে পারেন। জেলা শহর হতে দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। ব্যক্তিগত যান হলে তো কথাই নেই। দূর হতে আসতে চাইলে রাত যাপনের জন্য নওগাঁ জেলা সদরে রয়েছে মানসম্পন্ন আবাসিক হোটেল। বিল পাড়ের মানুষের প্রিয় খাবার পাতিহাঁস বা রাজহাঁসের মাংস আপনি এখানে উপভোগ করতে পারেন। যা এলাকার বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁয় পাবেন।


ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর, শ্যামলী থেকে বাসে সরাসরি নওগাঁয় আসা যায়। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি ঢাকা বাসগুলো ছাড়ে। শ্যামলী, হানিফ, এস আর, কেয়া, বাবলু, ডিপজল, টিআরসহ অনেক পরিবহন সংস্থার এসি ও নন এসি বাস চলে এ পথে। ভাড়া ৪০০-৬০০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে নওগাঁয় আসে শ্যামলী পরিবহন ভাড়া ৭০০ টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে আন্তঃনগর, একতা এক্সপ্রেস, লালমনি, নীল সাগর ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস, রাজশাহী থেকে বরেন্দ্র ও তিতুমীর, খুলনা থেকে সীমান্ত ও রূপসা এক্সপ্রেসে সান্তহার নেমে সহজেই নওগাঁয় আসা যায়।



নওগাঁ শহরে থাকার জন্য শহরের সান্তাহার রোডে হোটেল অবকাশ, সান্তাহার রোডে হোটেল ফারিয়াল, ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মোটেল চিশতি, বরুনকান্দি এলাকায় মোটেল প্লাবন, মুক্তির মোড়ে হোটেল আগমনী, শহরের পার-নওগাঁ এলাকায় হোটেল যমুনা, পুরনো বাসস্ট্যান্ডে হোটেল শরণি রয়েছে। এসব হোটেলে ২০০-১৫০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।