M.S. Dhoni: The Untold Story (২০১৬) – ইচ্ছাশক্তির দৃষ্টান্ত

মুভি রিভিউ October 13, 2016 5,650
M.S. Dhoni: The Untold Story (২০১৬) – ইচ্ছাশক্তির দৃষ্টান্ত

The man you know, the journey you don’t” – যাকে আপনি চেনেন কিন্তু তার সম্পর্কে আপনি কিছুই জানেন না। বলছিলাম সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউড সিনেমা ” M.S. Dhoni: The Untold Story” এর ট্যাগ লাইন নিয়ে। এক লাইনে বুঝিয়ে দিয়েছে কি দেখানো হবে, জনরা কি হবে মুভিটির। চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু অনুসারে নানা ভাবে ভাগ করা হয়েছে। যেমন- হাস্যরসাত্মক, অ্যাকশনধর্মী, রোমান্টিক, সামাজিক ইত্যাদি। নানা ভাগগুলোর অন্যতম বায়োপিক। বিশেষ ব্যক্তির জীবনী নির্ভর গল্প নিয়ে তৈরি হওয়া সিনেমাগুলোকে বায়োপিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ ধরণের চলচ্চিত্রে বিশেষ কোনো গল্প নয়, বরং সরাসরি একজন মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনাকে উপজীব্য করে তৈরি হয়। হ্যাঁ সেই মানুষের গল্প, যাকে এখন সবাই চেনে, জানে, যার হাত ধরে ইন্ডিয়া ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় করে ২৮ বছর পর, সেই মানুষের গল্প নিয়ে সাজানো M.S. Dhoni: The Untold Story সিনেমাটি। লেখাটিতে পুরো সিনেমা, সিনেমার বাইরে ও ধোনির জীবনের কিছু কথা বলা হবে, তাই যারা সিনেমা দেখেননি বা ধোনি সম্পর্কে আগে থেকেই তেমন কিছু জানেন না, তাদের না পড়াই ভালো। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে স্পয়লারযুক্ত লেখাটি পড়েই ফেলেন তাহলে তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আপনার।




মুভির দৃশ্য শুরু হয় উত্তেজনাকর ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল দিয়ে, খেলা হচ্ছে ভারত বনাম শ্রীলংকার মাঝে। হুট করে সিধান্ত নিয়ে নিলেন ধোনি, ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করে নিজেকে উপরে এনে হাল ধরবেন তিনি, কারন উইকেট পড়ে গেছে তিনটি। সেখানে ঝুলছে, সেওয়াগ, শচীন ও ভিরাট কোহলির মত তারকাদের নাম। তারপর…… তারপরের কাহিনী তো সবার জানা কিন্তু এর পিছনের কাহিনী কয়জনের জানা আছে? ফ্লাস ব্যাক করে নিয়ে চলে যায় ১৯৮১ সালের ৭ জুলাইয়ে, যেদিনে জন্মগ্রহন করেন সরকারি পাম্প কর্মকর্তা পান সিং ধোনির এক পুত্র সন্তান। পারিবারিক ভাবে নাম হয় মহেন্দ্র সিং ধোনি। ধোনি আসলে তার বংশগত টাইটেল ,পারিবারিক নাম মাহি বন্ধু, বোন, বাবা, মা সবার কাছেই মাহি নামেই সর্বাধিক পরিচিত। আজকের এই সুপারস্টারের কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না, নেশা ছিল ফুটবলের দিকে। স্কুল ফুটবলে গোল কিপিং করত সে। সেখানে স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষকের নজরে পড়ে যায় মাহি, কারন তখন উইকেট কিপার এর খুব দরকার ছিল। মাহিকে বলা হয় ক্রিকেট খেলবে নাকি? উত্তরে সে বলে, ” ছোট বল দিয়ে আমি খেলি না ” পরে মাত্র একদিনের সিধান্তে গোলকিপার মাহি থেকে হয়ে যায় সে উইকেট কিপার মাহি। কিন্তু ক্রিকেটে তার শুধু একটি মাত্রই ভালো লাগার দিক ছিল, ব্যাটিং। কিন্তু শিক্ষকের কড়া নির্দেশ উইকেট কিপিং এ মনোযোগ দিতে হবে। তখনকার দিনের ক্রিকেট দেখলে বোঝা যায় ব্যাটসম্যান ব্যাট করবে, বোলার বোলিং করবে আর কিপার কিপিং করবে। যেহেতু কিপিং খুব কষ্টের কাজ তাই সেদিকেই মনোযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু নেশা যার ব্যাটিং করা, তাকে কি আর দমিয়ে রাখা যায়? শিক্ষককে লুকিয়ে সে ব্যাটিং অনুশীলন করত, বড় বড় ছয় আর চারের মারগুলো ছিল দেখার মত।

.

আসলে সেভাবে ব্যাটিং প্রশিক্ষনের সুযোগ না পাবার জন্য মাহির ব্যাটিং টেকনিক হয়েছে তার নিজের মত। ক্রিকেটের গদবাধা নিয়মের সে তার ব্যাটিং করেনি। কিন্তু সুযোগ আসলেই কম পেতো কারন তাকে স্কুল টুর্নামেন্টে নামানো হত ৭/৮ নং পজিশনে। সেখান থেকে আর কি করা যায়, বড়জোড় ম্যাচ উইনিং ১০/১২ রান। সেখান থেকেই মূলত তার ফিনিশার হয়ে ওঠা। একবার অনেক অনুরোধ করে ওপেনিং এ নামে মাহি, সেই শুরু এরপর থেকে নাম ছড়িয়েছে সে। বিগ হিটার, রাঞ্চির অন্যতম ট্যালেন্ট হয়ে ওঠে সে। সুযোগ আসে ন্যাশনাল লেভেলে যাবার কিন্তু পদেপদে বাধার সম্মুখীন হয় সে, কখনো বা টিমমেটদের কারণে, কখনো কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে, কখনো বা কপালের কারণে। নাহলে যেখানে যুবরাজের সাথে অভিষিক্ত হবার কথা ছিল সেখানে মাহির অভিষেক হয় আরো ৫ বছর পর। এই ৫ বছর কি করেছিল মাহি তাহলে? নিজের জীবনের বাউন্সার সামলে ছিল একেরপর এক। বাবার ভয়, জীবনে বেঁচে থাকার তাগিদ সব কিছু মিলিয়ে খেলা ও জীবনকে একসাথে নিয়ে এক অদম্য লড়াই করে চলেছিল সে। কিন্তু একসময় সে অনুভব করতে পারে, তার জীবনের প্যাশন ই সব কিছু, হয়তো চাকরী ছাড়া সে বাঁচতে পারবে কিন্তু তার প্যাশন ক্রিকেট, তাকে ছাড়া সে শান্তিতে থাকতে পারবে না।


বাবার ভয়কে অতিক্রম করে রেলওয়ের চাকরি ছেড়ে সেই যে ট্রেনে উঠে পড়ে মাহি, এরপর শুধু সফলতা। হয়তো ঐদিনের খড়গপুরের ঐ ট্রেনটা না ধরলে আজকের মহেন্দ্র সিং ধোনি – দ্য ক্যাপ্টেন কুল হয়ে উঠতে পারতেন না। এরপরের কাহিনী সবার জানা, তবে সেখানে একটু অজানা কাহিনী আছে। ২০০৫ বাংলাদেশ সফরে অভিষিক্ত হন মহেন্দ্র সিং ধোনি, কিন্তু সেখানে তার কিন্তু যাবার কথা ছিল না, ছিল দীনেশ কার্তিকের। কিপিং টেকনিক ও ব্যাটিং টেকনিকে সে মহেন্দ্র সিং ধোনি থেকে অনেক বেশি আগানো ছিল। বলা বাহুল্য অনেকটা সৌরভ গাংগুলির একটা গ্যাম্বিং সিধান্তের কারণেই ঢুকে পড়ে ধোনি জাতীয় টিমে। কিন্তু পরপর ৫ ম্যাচে ব্যার্থতার পর অনেকটায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ক্যারিয়ার। পাকিস্তান এর বিপক্ষে খেলায় ছিল অনিশ্চিত কিন্তু টিম ইন্ডিয়া বেশ আশা করেই তাকে মূল একাদশে জায়গা দেয়। কিন্তু আমার মতে ধোনির কাছে এতদিন ছিল শুধু হার্ড ওয়ার্ক এবং স্ট্রাগল; লাক বলে আমরা যা দেখি মাঠে সেটা মূলত ঐ ম্যাচ থেকেই। কারন প্লেনে পরিচিত হয় ধোনি এক অচেনা মেয়ের সাথে, যার জন্য সে শচীনের অটোগ্রাফ এনে দেয় কিন্তু মেয়েটি ধোনিকে চিনতো না। ধোনি নিজেই কনফেস করে, “আমি এমন কিছু করি নি, যার জন্য আপনি আমাকে চিনবেন !! “ ঠিক তখন মেয়েটি বলেছিল পরের ম্যাচে আপনি ভালো খেলবেন এবং দেশের সব মানুষ আপনার নাম জানবে। ধোনি তখনো নিজের নাম তাকে বলেনি, শুধু মেয়টির নাম জেনে নিয়ে বলেছিল “প্রিয়াংকা কাল না হয় টেলিভিশনে আমার নাম টা দেখে নিবেন।” প্রিয়াংকা ছিল ধোনির সেই লাক, যার কারণে ধোনি খুব বাজে অবস্থাতেও দারুণ ফলাফল করে। হ্যাঁ সেই ম্যাচে ১৪৭ রান করেছিল ধোনি। কোন অর্ধশতক ছাড়াই ক্যারিয়ারে একেবারে সরাসরি সেঞ্চুরি করে সে, রীতিমত স্টার বনে যায়। পাকিস্তানের বোলারদের বলা যায় বেধড়ক পিটিয়েছিল একা। একজন স্টেট লেভেলের খেলোয়াড় বনে যায় হার্ডহিটার।সেদিনো কিন্তু মাহি একটি কাজ করেছিল, ক্যাপ্টেনকে বলেছিল দাদা আমাকে একটু উপরে নামান না!!! ঝাড়খান্ডের ঝড়ে রীতিমত উড়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু জীবন থেকে হারিয়ে ফেলে ভালোবাসার প্রিয়াংকা কে, যাকে মাহি বলেছিল “এখনো অনেক সময় আছে “ কিন্তু তাকে খুব কম সময়ে ভালোবাসা দিয়ে সড়ক দূর্ঘটনাতে অকালে প্রাণ হারায় প্রিয়াংকা। এখনেই মুভির নামের মাহত্ন ” The Untold Story “, এ ঘটনা জানত কয়জন?? মানসিকভাবে ভগ্ন মাহি ২০০৭ বিশ্বকাপে টিম ইন্ডিয়ার হয়ে মাঠে নামে। কিন্তু টিম ইন্ডিয়া বাংলাদেশের কাছে শোচনীয়ভাবে হেরে বিদায় নেয় বিশ্বকাপ থেকে। এরপর কাহিনী মোটামুটি সবার জানা। টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন, টি – ২০ বিশ্বকাপ বিজয় ও ২০১১ আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ জয়। কিন্তু ২০১১ সালের বিজয় কিন্তু একদিনে আসেনি এজন্য ছিল ধোনির ৩ বছরের পূর্ব পরিকল্পনা। সেওয়াগ, সৌরভ এবং রাহুল দ্রাবিড় এই তিন গ্রেট প্লেয়ারকে দলে না রাখার মত সিধান্ত সে দিয়েছিল। ধোনির মতে তারা ভালো ব্যাটসম্যান কিন্তু ভালো স্পোর্টস ম্যান নয়। তাদের ফিটনেসের অভাব রয়েছে। ধোনি বলেছিল-


” একজন ব্যাটসম্যান প্রতিদিন রান করবে না, একজন বোলার একদিন খারাপ করবে একদিন ভালো করবে কিন্তু একজন ভালো ফিল্ডার রোজ ২০/২৫ রান বাঁচাবে, যা প্রতিপক্ষের উপর প্রভাব ফেলবে।”


.বদলে যায় টিম ইন্ডিয়ার চিত্রপট, টেস্ট র‍্যাঙ্কিং এ নাম্বার ওয়ান থেকে শুরু করে ২০১১ তে জিতে নেয় আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ। ঝাড়খান্ডের এক ছোট ছেলে যার জীবন শুরু হয়েছিল ফুটবলের গোল কিপার হবার জন্য সে হয়ে যায় ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের সব থেকে সেরা ও সফল ক্যাপ্টেন। যে ইন্ডিয়াকে সব দিয়েছে টি২০ বিশ্বকাপ, আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ এবং টেস্টে নাম্বার ওয়ান।




এবার আসেন সিনেমাটি আপনি কেন দেখবেন? সত্য কথা বলতে গেলে সিনেমাটি আপনি দেখবেন আত্নার শান্তির জন্য। ৩ ঘন্টা ১০ মিনিট ব্যাপি সিনেমাটি কখনো আপনাকে বোরিং করবে না। এমনকি আপনার মনে হবে একটু টেনে দেখি। কি চমৎকার স্টোরি টেলিং আর গল্পের বুনন। যেখান থেকে সিনেমা শুরু করা হয় ঠিক সেখান থেকেই সিনেমার ইতি টানা হয়। মাঝ দিয়ে বলে দেওয়া হয় একটি অজানা গল্প। নিরাজ পান্ডে যখন থেকে এই সিনেমার কাজে হাত দিয়েছেন তখন থেকেই আমার বিশ্বাস ছিল তিনি দারুণ কিছুই নির্মান করবেন এবং তিনি সেটা করেছেন। মুভিটি আপনাকে হাঁসাবে,কাঁদাবে, ভালোবাসার সম্পর্কে এক দারুণ দিক প্রদর্শন করবে।


মুভিটির সব জায়গা ঠিক থাকলেও দুইটি স্থানে বেশ বড় ধরণের ঝামেলা রয়েছে। এক, ধোনির এক্স গার্ল ফ্রেন্ড প্রিয়াংকাকে নিয়ে তেমন কোন কথা আগে শোনা যায়নি, যা সিনেমাতে দেখানো হয়েছে। দুই, ধোনির বর্তমান স্ত্রী সাক্ষি কে দেখানো হয়েছে একজন হোটেল ম্যানেজমেন্টের উপর ইন্টার্নি ছাত্রী হিসাবে যে কিনা মাহি কে চিনতই না। কিন্তু কাগজ কলম অন্য কথা বলে, সেখানে দেখা যাচ্ছে মাহি ও সাক্ষি দুইজন ছোট বেলা থেকেই পরিচিত ছিল, পরিবারের মাঝেও ভালো মিল ছিল। তাহলে, ১ম গার্ল ফ্রেন্ড কোথা থেকে আসল? আর এইভাবে বা স্ত্রীকে কেন দেখানো হল? যদি মুভিতে যা দেখনো হয়েছে তা সত্য হয় তাহলে এতোদিন যে নিউজ শুনেছিলাম তা ছিল সম্পূর্ণ বানোয়াট। এর উত্তর একমাত্র এম.এস. ধোনি দিতে পারবেন এছাড়া রয়েছে ভিএফএক্স এর দারুণ কারসাজি। মুভিতে ধোনির চরিত্রে অভিনয় করেছিল সুশান্ত সিং রাজপুত। ইন্টারন্যাশনাল খেলার সবগুলো স্থানে ধোনির মুখের উপর ভিএফএক্স দিয়ে তার চেহারা বসিয়ে দিয়ে পুরোপুরি বাস্তবে পরিণত করেছেন মুভিটিকে। বলা যায় ইন্ডিয়ার ওয়ান অফ দ্য বেষ্ট ভিএফএক্স এর কাজ করা হয়েছে সিনেমাটিতে।


সিনেমাটি দেখার সব থেকে বড় কারন হল সুশান্ত সিং রাজপুত। কতটা ডেডিকেশন থাকলে পুরোপুরি নিজেকে অন্যের আদলে গড়ে নেওয়া যায়। জার্সি পড়ার পর সুশান্ত হেঁটে যায় আপনি শিউর থাকেন পিছন থেকে তাকে আপনি ধোনি বলেই ভাববেন। একদম অবিকল ধোনির মত করে হাটা, ব্যাট ধরার স্টাইল, চুল থেকে শুরু করে মাথায় হ্যাট সব সব কিছু ছিল একদম পারফেক্ট। এতদিন ধরে জানতাম “হেলিকাপ্টার শর্ট” ধোনির নিজের স্টাইল, সিনেমা দেখে আপনার সে ভুল ও কেটে যাবে। হেলিকাপ্টার শর্ট ধোনির না, ধোনির বন্ধু সন্তোসের। সন্তোস শিখিয়েছিল ধোনিকে, কিভাবে আনপ্লেয়াবেল বলকে বাউন্ডারিতে পাঠানো যায়। সেই হেলিকাপ্টার শর্ট ও আয়ত্ত করেছেন সুশান্ত সিং রাজপুত। এজন্য তিনি পুরো ৪ মাস ট্রেনিং করেছেন, হাটা, কথা বলা, ব্যাটিং স্টাইল সব কিছু একদম পারফেক্ট। সুশান্ত সিং রাজপুত ভালো অভিনয় করা সত্ত্বেও এখনো কেন এতো আন্ডাররেটের একজন অভিনেতা বুঝলাম না। দেখা যাক এবার ধোনির ছোয়ায় তার ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় কি না

.

মুভিটি দেখে আপনি জীবন সম্পর্কে কয়েকটি ভালো ধারণা পাবেন। যা হয়ত বদলে দিতে পারে জীবনের চালিকা শক্তিকে-


পরিবারের সাপোর্ট সব থেকে আগে দরকার। মাহির আজকে এই ধোনি হওয়া উঠত না, যদিনা তার বাবা তাকে সেই সুযোগ দিত। মা- বোন তাকে এতো সাপোর্ট করত। যদি আপনার পরিবারে থেকে থাকে এমন ট্যালেন্ট থাকে সাহায্য করুণ, তার মেধাকে বিকাশিত হতে দিন। কারন সুযোগ বারবার আসে না, আর সে সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য দরকার পরিবারের সহযোগীতা।


জীবনে খ্যাতির জন্য অবশ্যই দরকার প্রচুর পরিশ্রম।


একই সাথে পড়ালেখা ও খেলা চালিয়ে যাওয়া খুব কষ্টের। আপনি একই দিন এক্সাম দিয়ে আবার খেলতে যাওয়া, আবার ফিরে এসে প্রিপারেশন নিয়ে পরদিন এক্সাম দিয়ে আবার খেলা, খুবই অধ্যবসয়ের ব্যাপার। ধোনিকে দেখলে হয়তো বুঝতে পারবেন, কি পরিশ্রম তিনি করছেন প্যাশনকে টিকিয়ে রাখার জন্য।


জীবনে ভালো বন্ধু দরকার। যারা আপনার সব সময় পাশে থাকবে, তার সেই বন্ধুদের কোনদিন ভুলে গেলে চলবে না। তাহলেই আপনি জীবনে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে যাবেন। যার উজ্জ্বল নিদর্শন মহেন্দ্র সিং ধোনি ও তার বন্ধুরা। বন্ধুর জন্য নিজের সব কাজ ফেলে কয়জন পারে দৌড়াদৌড়ি করতে? একটু ভেবে দেখবেন

জীবনে যদি অন্যের সাফল্য দেখে আপনি সেখানে দাঁড়িয়ে যান তাহলে ঠিক সেখানেই আপনি নিজেকে হারিয়ে দিলেন। সাফল্যকে দেখা ভালো কিন্তু তাকে অতিক্রম করে নিজের সাফল্যের দিকে ছুটে যেতে হবে। যুবরাজ ও ধোনির মাঝে বাস্কেটবল কোর্টের দৃশ্য তা খুব ভালোভাবেই বলে দেয়।



ভালোবাসা একটি শক্তির মত, জীবনকে বদলে দিতে পারে আবার ধ্বংস করে দিতে পারে। হারিয়ে ফেলা ভালোবাসাকে শোকে পরিণত না করে শক্তিতে পরিণত করুণ, দেখবেন সেই ভালোবাসা আপনাকে কোথায় পৌছে দেয়। প্রথম প্রেমকে ভোলা যায় না, সর্বত্র তার বিচরণ কিন্তু তাকে সাথে নিয়ে নতুনকে আলিঙ্গন করে নেবার নামই শক্তি।

.

M.S. Dhoni: The Untold Story মুভির অজানা কিছু কথাঃ


ধোনি চরিত্রে অভিনয় করার জন্য খুবই ইচ্ছা পোষন করেছিল অক্ষয় কুমার কিন্তু ধোনির চেহারার সাথে সাদৃশ্য না থাকার জন্য তাকে নিরাজ পান্ডে নিরাশ করেন।

মুভির চিত্রায়নের জন্য বিহারের সেই স্কুল, স্কুলের মাঠ ও রুম ব্যবহার করা হয়েছে ,যেখান থেকে মাহি উঠে এসেছিল।

সিনেমার প্রোডিউসার মহেন্দ্র সিং ধোনি নিজেই।

২০০৭ এর পর আবার ভূমিকা চাওয়া হিন্দি সিনেমাতে কাজ করেন এই M.S. Dhoni: The Untold Story এর মধ্য দিয়ে।

সুশান্ত সিং রাজপুত ও অমুপম খের এর একসাথে এটি প্রথম কাজ

সিনেমার কাজ শুরু হয় ২০১১ সালের ওয়ার্ল্ড কাপ জয়ের পর।

প্রথমে চিন্তা করা হয় টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া দিয়ে শেষ করা হবে সিনেমার দৃশ্য। স্ক্রিপ্ট ও সে পর্যন্ত লেখা ছিল, সিনেমার রানিং টাইম হয়ে দাড়ায় ৬ ঘন্টা ২০ মিনিট

M.S. Dhoni: The Untold Story সিনেমাটি কি আসলেই বায়োপিক নাকি নতুন কাউকে উৎসাহিত করার একটি প্রয়াশ তা আমি জানি না। তবে সিনেমার গল্প এবং ধোনির জীবনের উঠে আসা আসলেই মাইন্ড ব্লোয়িং। ইন্ডিয়াতে ধোনি যদি এখন একটি রোল মডেল হতে পারে, তাহলে আমার মতে আমাদের দেশেও এমন কয়েজন আছে। ধোনির না জানা কথা তো আমরা জেনে গেলাম। কিন্তু যিনি পায়ে ৭ টি অপারেশন নিয়ে এখনো মাঠে দৌড়ে বেরাচ্ছেন। একাই টেনে নিয়ে চলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন দিনের সূর্যকে। ১৪০ কি.মি এর সেই গতি হয়তো থেমে গিয়ে থাকবে কিন্তু সেই মানুষটি কিন্তু এখনো থেমে নেই। ধোনি যদি নির্মম ভাবে বোলারদের বেধড়ক পেটাতে পারে আর সেটা যদি ইন্সপিরেশন হয়, তার সংগ্রাম যদি ইন্সপিরেশন হয়, তাহলে মাশরাফি কি বাংলাদেশের জন্য আইডল হতে পারেন না? ধোনি সিনেমা দেখে আমরা উচ্ছ্বাসিত হই কিন্তু আমাদের এমন আইকন যার কথা কয়টা মানুষ জানে? ধোনি যদি ইন্সপিরেশন হয় তাহলে মাশরাফি হলে আমাদের জন্য সংগ্রামের রোল মডেল। বলিউড অনেক এগিয়েছে, তাদের যোগ্য সন্তাদের সম্মান দিচ্ছে। ধরে রাখছে চলচ্চিত্রের মধ্যমে ইতিহাসের পাতাতে, কিন্তু আমরা কি করছি?


M.S. Dhoni: The Untold Story দেখার পর আমার মনোভাব, আমাদের ও একটা বায়োপিক হবে সেখানে থাকবে মাশরাফি আর আমি তাকে নিয়ে লিখব। আমার দেখা সেরা আইডল, আমার ক্যাপ্টেন, আমার ভালোবাসার একজন মানুষ।


রেটিংঃ ৮/১০