শিক্ষকের সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে যা বলছে ইসলাম!

ইসলামিক শিক্ষা October 6, 2016 1,611
শিক্ষকের সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে যা বলছে ইসলাম!

৫ই অক্টোবর চলে গেল বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি শ্রদ্ধা ও সম্মানের সহীত পালন করা হয়। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শিক্ষকের মর্যাদার একটি হাদিস বর্ণনা করেন।


‘তোমরা জ্ঞান অর্জন কর এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব শিষ্টাচার শিখ। তাঁকে সম্মান কর; যার থেকে জ্ঞান অর্জন কর। সুতরাং যার থেকে জ্ঞান অর্জন করা হয় তিনিই হলেন শিক্ষক। শিক্ষকের সুমহান মর্যাদা কথা গুরুত্বসহকারে ঘোষণা করেছে ইসলাম।


১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর প্যারিসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ১৪৫টি সুপারিশের মাধ্যমে ইউনেস্কো শিক্ষকদের জন্য বিশ্ব শিক্ষক দিবসের দাবি তোলে। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্ব ব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব শিক্ষক দিবস।


শিক্ষকের অবদানকে স্মরণ করার জন্য শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্বের ১০০টি দেশে ‘এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল’ (Education International - EI) ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রেখে দিবসটি পালন করে।


যা শিক্ষকদের প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকতার মহান পেশা ও সীমাহীন অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়। এবারের শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- ‘শিক্ষকের মূল্যায়ন, মর্যাদার উন্নয়ন।’


শিক্ষকরা হলেন প্রত্যেক জাতির সুনাগরিক তৈরির করার সুমহান কারিগর। শুধু তাই নয়, শিক্ষকদের মহান শিক্ষা

ও পরিশ্রমের ফলেই সমগ্র বিশ্ব অবলোকন করছে দেখছে সুসভ্য সমাজ ও শিক্ষিত জাতি।


ইসলাম শিক্ষকদের দিয়েছে এক অনন্য মর্যাদা। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যেও শিক্ষকদের মর্যাদা ছিল ব্যাপক সমাদৃত।


একবার হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু তার বাহনে ওঠার জন্য সাওয়ারির রেকাবে পা রাখলেন।


আর হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু রেকাবটি শক্ত করে ধরেন।


তখন হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত বললেন, হে রাসুলুল্লাহ’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাচাতো ভাই! আপনি হাত সরান। উত্তরে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘না’, আলিম (বিদ্যান ব্যক্তি) ও বড়দের সঙ্গে এমন সম্মানসূচক আচরণই করতে হয়।


মানুষ শিক্ষকের কাছ থেকেই জ্ঞানার্জন করে থাকেন। আর শিক্ষক থেকে আহরিত জ্ঞানই মানুষকে যথার্থ শক্তি ও মুক্তির পথনির্দেশ দিতে পারে।


মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলা আইয়্যামে জাহেলিয়াতের সময়ে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘আমাকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে।’।


অন্যত্র তিনি আরো বলেন, ‘আমি বিশ্ববাসীর জন্য উত্তম আদর্শ ও চরিত্র শিক্ষাদানের জন্য প্রেরিত হয়েছি।


বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষা, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষক ও শিক্ষার ব্যাপক প্রচার ও প্রসারে সব সময় সচেষ্ট ছিলেন।


তাইতো তিনি বদরের যুদ্ধে শিক্ষিত বন্দীদের সঙ্গে এ শর্তে চুক্তি করেছিলেন যে, তারা মদিনার শিশুদের শিক্ষা দেয়ার বিনিময়ে মুক্তি লাভ করবেন; যা বিশ্বের ইতিহাসে অনন্য নজির স্থাপন করেছে।


হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন জনৈক বয়স্ক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হলে উপস্থিত সাহাবায়ে কিরাম নিজ স্থান থেকে সরে তাকে জায়গা করে দেন।


তখন তিনি (বিশ্বনবি) ইরশাদ করেন, `যারা ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করে না, তারা আমার দলভুক্ত নয়।` (তিরমিজি)


ইসলামের দৃষ্টিতে শিক্ষকতা তথা শিক্ষার গুরুদায়িত্ব পালন অত্যন্ত সম্মানিত ও মহান পেশা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সামাজিক দায়িত্ব ও মর্যাদার দিক থেকে শিক্ষকতার এ মহান পেশা গুরুত্বপূর্ণ হলেও বর্তমান সমাজে এ মহান দায়িত্বকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখা হয়।।


দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকরা অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়। অনেক সময় শারীরিকভাবে নিগৃহীত হওয়ার প্রমাণও পাওয়া যায়। যা অত্যন্ত ঘৃণ্য ও অমানবিক কাজ।


অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ছাড়া কেউই আমার নিকট আপন নয়।’


এর কারণ হলো- দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবন এবং আখিরাতের বিশাল স্থায়ী জীবনের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য জ্ঞানার্জনের বিকল্প নেই। আর এ শিক্ষকরাই জ্ঞান দানের কাজে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।