‘The Legend of Tarzan’ (2016) ইতিহাস ও কল্পনার সংমিশ্রনে তৈরী এক নতুন কিংবদন্তী, যা দেখেনি কেউ আগে… !!!

মুভি রিভিউ September 29, 2016 5,552
‘The Legend of Tarzan’ (2016) ইতিহাস ও কল্পনার সংমিশ্রনে তৈরী এক নতুন কিংবদন্তী, যা দেখেনি কেউ আগে… !!!

আমরা সবাই ছোটবেলা থেকে কম বেশী ‘মোগলী’ ও ‘টারজান’ এর গল্প পড়ে ও কার্টুন দেখে বড় হয়েছি। এই দুজনের মধ্যে প্রধান যে মিল তা হল দুজনের অরিজিন একই। দুজনেই ছোটবেলায় বাবা-মা হারিয়ে জঙ্গলে পশুদের মাঝে বড় হয়েছে। ‘মোগলী’ বড় হয়েছে নেকড়েদের কাছে ও ‘টারজান’ গরিলাদের কাছে। আমি মাঝে মাঝে ভাবতাম, ‘মোগলী’ই মনে হয়ে বড় হয়ে ‘টারজান’ হয়, কিন্তু পরে গিয়ে বুঝেছি, দুজনে সম্পুর্ণ দুই ভিন্ন চরিত্র। ‘মোগলী’র আবির্ভাব হয়েছে ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ইংলিশ লেখক ‘রুডইয়ার্ড কিপলিং’ এর সাড়া জাগানো বই ‘দ্য জঙ্গল বুক’ এর মাধ্যমে এবং ‘টারজান’ এর আবির্ভাব ঘটেছে বিখ্যাত আমেরিকান লেখক ‘এডগার রাইস বারোজ’ এর ‘টারজান’কে নিয়ে লেখা ১৯১২ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত সাড়া জাগানো ২৪টি আলাদা আলাদা উপন্যাসের মাধ্যমে। বাই দ্য ওয়ে, এই লেখক কিন্তু আবার বিখ্যাত ‘জন কার্টার’ এরও জনক !
















‘টারজান’ ও ‘মোগলী’কে নিয়ে ইতঃপুর্বে অনেক ক্ল্যাসিক লাইভ অ্যাকশন মুভি ও অ্যানিমেশন তৈরী হয়েছে কিন্তু সেগুলোর কোনটিই মনে রাখার মত কিছুই নয়। তবে, মজার ব্যাপার হচ্ছে এ বছর ২০১৬ সালে ‘মোগলী’ ও ‘টারজান’ দুজনকেই রূপালী পর্দায় নতুন করে লাইভ অ্যাকশন রূপে নির্মাণ করা হয়েছে। এ বছর সর্ব প্রথম মুক্তি পেয়েছে ‘মোগলী’কে নিয়ে নির্মিত ‘দ্য জঙ্গল বুক’ যা মূলত ‘ওয়াল্ট ডিজনী’র ১৯৬৭ সালের নির্মিত অ্যানিমেটেড মুভি ‘দ্য জঙ্গল বুক’ এর রিমেক ছাড়া কিছুই নয়, অর্থাৎ নতুন বোতলে পুরনো মদ। ‘আয়রন ম্যান’ এর নির্মাতা ‘জন ফেবরু’ এর নির্মিত ‘দ্য জঙ্গল বুক’ মুভিটি সারা বিশ্বে ৯৬৫ মিলিয়ন আয় করে বিশাল মাপের ব্লকবাস্টারে পরিণত হয়েছে এবং যথারীতি এই মুভির সিক্যুয়ালের পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেছে পুনরায় ‘জন ফেবরু’ এর পরিচালনায় যা মুক্তি পাবে ২০১৯ সালে।













এখন আসা যাক ‘টারজান’ এর বেলায়। ‘মোগলী’তো এ বছর তার ভেলকি দেখিয়ে চলে গেছে, এখন দেখার পালা ‘টারজান’ কেমন কি করলো। বিখ্যাত ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম পর্বের নির্মাতা এবং বর্তমানে ‘হ্যারি পটার’ স্পিন অফ মুভি ‘ফ্যান্টাস্টিক বিস্ট’ মুভির পরিচালক ‘ডেভিড ইয়েটস’ এর পরিচালনায় এ বছর মুক্তি পায় ‘দ্য লেজেন্ড অফ টারজান’ যেখানে ‘টারজান’ এর ভুমিকায় অভিনয় করেন ‘ট্রু ব্ল্যাড’ টিভি সিরিজ খ্যাত ‘আলেকজান্ডার স্কারসগার্ড’ এবং ‘জেন পটার’ চরিত্রে অভিনয় করেন সকলের প্রিয় ‘সুইসাইড স্কোয়াড’ এর ‘হারলে কুইন’ খ্যাত ‘মার্গট রবি’। এই মুভির কাজ মূলত শুরু হয় ২০০৩ সালে। পরবর্তিতে ২০০৮ সালে খবর পাওয়া যায় ‘দ্য মামি’ সিরিজ খ্যাত ‘স্টিফেন সমার্স’ এ মুভির আরো একটি আলাদা ভার্সন লিখছেন যার কাজ শুরু হবার কথা ছিল ২০১১ সালে এবং এই মুভিটি তৈরী করার কথা ছিল হুবহু ‘পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান’ সিরিজের মত করে। কিন্তু পরবর্তিতে সব পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায় এবং অবশেষে ‘ডেভিড ইয়েটস’কে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়ে ‘টারজান’কে নতুন করে রূপালী পর্দায় পরিচয় করার জন্য। ‘টারজান’ চরিত্রের জন্য প্রথমে ভাবা হয়েছিল ‘হেনরি ক্যাভিল’, ‘টম হার্ডি’ ও ‘চার্লি হানাম’ এর কথা কিন্তু পরে ‘ডেভিড ইয়েটস’ তার নিজের পছন্দে ‘আলেকজান্ডার স্কারসগার্ড’কে নির্বাচিত করেন ‘টারজান’ চরিত্রে। ‘জেন’ চরিত্রে ‘ডেভিড ইয়েটস’ এর পছন্দ ছিল ‘জেসিকা চ্যাস্টেইন’ আবার স্টুডিওর পছন্দ ছিল ‘মার্গট রবি’ ও ‘এমা স্টোন’। অবশেষে ‘এমা স্টোন’কে হারিয়ে ‘মার্গট রবি’ পেয়ে যায় ‘জেন পটার’ এর চরিত্র। মুভির দুই ভিলেন ‘ক্যাপ্টেন লিওন রোম’ চরিত্রে নেয়া হয় ‘ক্রিস্টফ ওয়াল্টজ’ এবং আদিবাসী সর্দার ‘মোবঙ্গা’ চরিত্রে ‘ডিজিমন হোংসু’কে, এছাড়াও মুভির অন্যতম প্রধান একটি গুরুত্বপুর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন ‘স্যামুয়েল এল জ্যাকসন’।












King Leopold II


চলুন এই ফাঁকে একটু ইতিহাস থেকে ঘুরে আসি। ১৮৮৪-১৮৮৫ সালে ‘বার্লিন কনফারেন্স’ এ বেলজিয়ামের কিং ‘লিওপোল্ড দ্য সেকেন্ড’ কঙ্গোকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দাবী করে যেন তার আন্ডারে সেখানকার জনগণ ও আদিবাসীরা উন্নত জীবনযাপন করতে পারে। অতঃপর তার দাবীর প্রেক্ষীতে উক্ত কনফারেন্সে কঙ্গোকে বেলজিয়াম ও ইউনাইটেড কিংডম থেকে আলাদা একটি রাষ্ট্রে পৃথক করা হয় কিন্তু পরবর্তীতে ‘লিওপোল্ড দ্য সেকেন্ড’ তার শর্ত ভংগ করে কঙ্গোতে ব্যাপক হারে স্থানীয় নারী-শিশু ও আদিবাসী হত্যা করতে থাকে এবং আদিবাসী পুরুষদের দাসে পরিণত করে। ‘লিওপোল্ড’ মূলত এই ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে তার ভাড়াতে মার্সেনারীদের সাহায্যে। সে বিভিন্ন জনকল্যান মূলক প্রজেক্টের নামে ব্যাপক হারে অর্থ আত্মসাৎ করতে শুরু করে। ‘লিওপোল্ড’ অবৈধ ভাবে প্রচুর পরিমাণে হাতির দাত (আইভরি) কালেক্ট করতে থাকে ও ১৮৯০ সালে রাবারের দাম বেড়ে যাবার পর সে জোর করে আদিবাসীদের দিয়ে রাবারের চাষ করতে বাধ্য করে। সব মিলিয়ে তার রাজত্বে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মানুষকে সে হত্যা করে যা বিংশ শতাব্দীর শুরুতে অন্যতম আন্তর্জাতিক স্ক্যান্ডাল হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। এত কিছুর কারণে অতঃপর ১৯০৮ সালে বেলজিয়াম সরকার কতৃক ‘লিওপোল্ড’কে জোর পুর্বক ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয়। ১৮৮৯ সালে যখন ‘লিওপোল্ড’ জোর পুর্বক অত্যাচার দ্বারা রাবারের চাষ করাচ্ছিল আদিবাসীদের দিয়ে, ঠিক সেই সময় ‘জর্জ ওয়াশিংটন উইলিয়ামস’ যিনি কিনা একাধারে আমেরিকার সিভিল ওয়ার সোলজার, ক্রিশ্চিয়ান মিনিস্টার, রাজনীতিবিদ, উকিল, সাংবাদিক ও আফ্রিকান-আমেরিকান ইতিহাসের লেখক, তিনি তদন্ত করতে কঙ্গোতে উপস্থিত হন এবং নিজের চোখে কিং ‘লিওপোল্ড’ এর এই সকল অত্যাচারের নমুনা প্রতক্ষ্য করেন। অতঃপর তিনি ১৯ জুলাই ১৮৯০ সালে কিং ‘লিওপোল্ড’কে একটি চিঠি লেখেন যেখানে তিনি ‘লিওপোল্ড’ কে জানান যে তার নামে তার সৈন্যরা মানুষের উপর বর্বর অত্যাচার করছে ফলে তার সম্মান ও মর্যাদা নষ্ট হচ্ছে তাই তিনি যেন অবিলম্বে এসব বন্ধ করেন। ‘জর্জ ওয়াশিংটন উইলিয়ামস’ এর লেখা এই চিঠিটিই ছিল কঙ্গোতে হতে থাকা সৈরশাসনের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের মধ্যে প্রথম প্রকাশ্য প্রতিবাদ। তিনি সারা বিশ্বের মানুষের কাছে কঙ্গোতে ঘটা এই বর্বর অত্যাচারের চিত্র ফাঁস করে দেন এবং ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটির কাছে ‘লিওপোল্ড’ এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবার জন্য আহবান করেন। তিনি না থাকলে কঙ্গোর এই অবিচারের কথা কখনোই সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌছাতে পারতো না। তার এই প্রতিবাদের জন্য ইতিহাসের পাতায় তার নাম সম্মানের সাথে লেখা আছে।













এবার আসা যাক মূল কথায়। ‘দ্য লেজেন্ড অফ টারজান’ মুভির গল্প সাজানো হয়েছে ১৮৮৪ সালে কিং ‘লিওপোল্ড দ্য সেকেন্ড’ এর রাজত্বে কঙ্গোতে ঘটে যাওয়া এই সত্য সৈরশাসনের উপর ভিত্তি করে। যেখানে ‘জর্জ ওয়াশিংটন উইলিয়ামস’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ‘স্যামুয়েল এল জ্যাকসন’। মুভির গল্প শুরু হয়েছে ১৮৮৪ সালে যখন ‘টারজান’ ওরফে ‘জন ক্লেটন দ্য থার্ড’/’লর্ড গ্রেস্টোক’ তার আফ্রিকার অতীত জঙ্গল জীবন ছেড়ে তার স্ত্রী ‘জেন’কে নিয়ে লন্ডনে তার প্রকৃত বংশপরিচয়ে বসবাস করছে। সেখানে তার নাম, খ্যাতি, বংশমর্যাদা সব কিছুই বিদ্যমান তবুও সে তার অতীত ভুলতে পারে না। জাহাজ ডুবি হয়ে তার বাবা ‘জন ক্লেটন দ্য সেকেন্ড’ ও মা ‘অ্যালিস ক্লেটন’ ছোট্ট ‘জন’কে নিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিলে এক সময় অসুখে মা ও গরিলাদের আক্রমনে বাবা মারা যাবার পর গরিলাদের আশ্রয়েই ছোট্ট ‘জন’ বেড়ে ওঠে এবং পরিণত হয় ‘টারজান’এ। এক সময় ‘জেন’ এর সংস্পর্শে এসে সে সভ্যতার সন্ধান পায় ও নিজের বংশপরিচয় জানতে পারে। অতঃপর ‘জেন’কে বিয়ে করে ‘টারজান’ পরিচয় ছেড়ে সে জঙ্গল থেকে সভ্যতার মাঝে ফিরে আসে। এই সব টুকরো টুকরো ঘটনাই মাঝে মাঝে ‘জন’ ও ‘জেন’কে তাদের অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তাদেরকে সব সময় এই স্মৃতিগুলো তাড়া করে ফেরে। এভাবে যখন তাদের দিন কাটছিল তখনই হঠাৎ কিং ‘লিওপোল্ড’ এর কাছ থেকে কঙ্গোতে যাবার জন্য আমন্ত্রণ পায় ‘জন’। ‘জন’ যখন এই আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেয় তখন তার সাথে দেখা হয় ‘জর্জ ওয়াশিংটন উইলিয়ামস’ এর। ‘জর্জ’ তাকে জানায় কঙ্গোতে হতে থাকা কিং ‘লিওপোল্ড’ এর অত্যাচারের কথা এবং ‘জন’কে তার সাথে কঙ্গোতে যাবার জন্য সে অনুরোধ করে যেন তারা দুজনে সেখানকার অত্যাচারের প্রমাণ সংগ্রহ করে সারা বিশ্বের কাছে সেগুলো প্রচার করতে পারে। ‘জন’ রাজী হয় ‘জর্জ’ এর প্রস্তাবে এবং ‘জেন’কে সাথে নিয়ে আবার একবার ফিরে যায় সেই কঙ্গোতে যেখান থেকে সে ‘টারজান’ হয়েছিল। সেখানকার পুরনো আদিবাসীরা যারা ‘টারজান’কে জঙ্গলের দেবতা হিসেবে মানে, তারা তাকে ও ‘জেন’কে ফিরে পেয়ে অনেক খুশি হয় কিন্তু ‘জন’ জানতো না তাকে কঙ্গোতে আমন্ত্রণ জানানোর পিছনে কত বড় এক ষড়যন্ত্র কাজ করছে। অতঃপর যখন ‘জেন’কে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তখন ‘জেন’কে উদ্ধার ও আদিবাসীদের এই দাসত্বের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিতে ‘জন’ পুনরায় পরিণত হয় ‘টারজান’ এ।






আমরা ‘দ্য জঙ্গল বুক’ দেখেছি, যেখানে গোটা পটভুমী সাজানো ছিল জঙ্গলকে কেন্দ্র করে। হয়তো এই মুভিতেও অনেকেই তাই আশা করে থাকবে, কিন্তু ‘দ্য লেজেন্ড অফ টারজান’ পুরোটাই ভিন্ন আঙ্গিক, পটভুমী ও গল্প নিয়ে তৈরী যার জন্য কেউ হয়তো প্রস্তুত নাও থাকতে পারে। এই মুভিতে ‘টারজান’কে দেখা যাবে সব সময় স্যুটেড বুটেড জেন্টেলম্যান অবস্থায়। ‘মোগলী’র মত একটি নেংটি পরে জংলী হিসেবে নয়। তবে ‘টারজান’ শহরে চলে গিয়ে ‘জন’ হয়ে গেছে বলে ‘টারজান’ এর অরিজিন স্টোরী কিন্তু কেউ মিস করবেন না এখানে। ঐযে বললাম, ‘জন’ ও ‘জেন’ তাদের অতীত ভুলতে পারে না, তাই অতীতের সকল ঘটনাই গোটা মুভিতে চমৎকার ভাবে ফ্ল্যাশব্যাক হিসেবে দেখানো হয়েছে। ‘জন’ এর বাবা-মা, ‘জন’ থেকে ‘টারজান’ হয়ে ওঠা, ‘টারজান’ ও ‘জেন’ এর প্রথম দেখা সব কিছুই দেখানো হয়েছে ফ্ল্যাশব্যাক হিসেবে। শহর ও জঙ্গল এই দুই সময়ের গল্প যেন প্যারালাল ভাবে চলেছে গোটা সময়। মুভির গল্প সম্পুর্ণ অরিজিনাল, ‘দ্য জঙ্গল বুক’ এর মত কোন রিমেক নয় এবং আগেই বলেছি গল্পের সোর্স নেয়া হয়েছে সত্য ইতিহাস থেকে। মুলত ‘টারজান’কে নিয়ে যে এমন একটি শহুরে গল্প তৈরী করা যায়, তা ‘দ্য লেজেন্ড অফ টারজান’ না দেখলে তা কল্পনাও করা যাবে না। মুভির অন্যতম বড় পাওয়া হচ্ছে এর গ্রাফিক্স ও অ্যাকশন। ‘টারজান’ ও ‘জন ক্লেটন’ দুই চরিত্রেই ‘আলেকজান্ডার স্কারসগার্ড’ তার সেরাটা উপহার দিয়েছে। এই মুভির প্রিন্সিপাল ফটোগ্রাফী শুরুর আগেই নিজেকে ‘টারজান’ এর মত ফিজিক্যাল শেপে আনার জন্য ‘আলেকজান্ডার’ ৪ মাস ধরে ফিজিক্যাল ট্রেনিং নিয়েছে ও ২৪ পাউন্ড ওজন বৃদ্ধি করেছে। ‘জেন’ চরিত্রে ‘মার্গট রবি’র কোন তুলনা হবে না। সবাই বলে ‘মার্গট’ এর জন্ম হয়েছে ‘হারলে কুইন’ করার জন্য, আমি সেই সাথে ‘জেন’কেও যোগ করবো। ‘ক্রিস্টোফ ওয়াল্টজ’ ভিলেন হিসেবে নজরকাঁড়া ছিল। কখনো নরম, কখনো হিংস্র, কখনো ভিতু, কখনো লড়াকু বেশ ভালই ভ্যারিয়েশন দেখিয়েছে সে তার চরিত্রে আর ‘ডিজিমন হোংসু’ তার চরিত্রে যেমন হবার কথা তেমনই ছিল তবে গোটা মুভিটি যে টেনে নিয়ে গেছে সে আর কেউ নয় ‘জর্জ ওয়াশিংটন উইলিয়ামস’ চরিত্রে ‘স্যামুয়েল এল জ্যাকসন’। কখনো সাহস, কখনো হিউমার সব মিলিয়ে ‘টারজান’ এর একজন যোগ্য সহযোদ্ধা ছিল এই চরিত্রটি যা না থাকলে গোটা মুভির বেজটাই নষ্ট হয়ে যেত।













‘IMDb’ তে 6.5 ও ‘পঁচা টোমেটো’ থেকে ৩৬% রেটিং পাওয়া ১৮০ মিলিয়ন বাজেটের এই মুভিটি উত্তর আমেরিকায় আয় করেছে ১২৬ মিলিয়ন ও সারা বিশ্বে ৩৫৫ মিলিয়ন। সোজা কথা বলতে গেলে মুভিটি ফ্লপ, কিন্তু কেন ? মূলত মুভিতে যেভাবে গল্পটি দেখানো হয়েছে, ‘টারজান’কে নিয়ে এমন গল্পের জন্য দর্শকেরা প্রস্তুত ছিল না। মুভির কিছু কিছু জায়গায় গল্প স্লো হয়ে গেছে। অনেক ফ্ল্যাশব্যাক প্রশ্নের কোন উত্তর পাওয়া যায়নি যেমন ‘টারজান’ কিভাবে সভ্যতার মাঝে ফিরে এলো ? ‘জেন’ ও ‘টারজান’ এর রোমান্স কিভাবে শুরু হলো ? মুভিতে এই দুজনের বিবাহ পরবর্তী রোমান্সকে জোর দেয়া হয়েছে যা দেখতেও অনেক ভাল লেগেছে কিন্তু তাদের প্রথম দিকের রোমান্সকে সম্পুর্ণ অবহেলা করা হয়েছে। দর্শক আসলে ‘টারজান’কে শহুরে স্যটেড বুটেড ‘জন ক্লেটন’ হিসেবে নিতে পারেনি কারণ ইতঃমধ্যে তারা প্রথমে ‘দ্য জঙ্গল বুক’ মুভিতে ‘মোগলী’কে গোটা জঙ্গল বেজড গল্পে দেখে এসেছে অথচ এ মুভির গল্প ‘দ্য জঙ্গল বুক’ থেকে কয়েক গুণে ভাল ছিল। আমার মতে এই মুভি ‘দ্য জঙ্গল বুক’ এর সাথে একই বছরে মুক্তি দেয়া উচিত হয়নি, কারণ দর্শকেরা ‘মোগলী’র ঘোর থেকেই ঠিকমত বের হতে পারেনি। তাদেরকে সময় দেয়া উচিত ছিল এই নতুন রূপের, নতুন গল্পের ‘টারজান’কে গ্রহণ করার জন্য। মুভিতে সৈরশাসন, দাসপ্রথা, আদিবাসীদের উপর অত্যাচার, মানুষের সাথে পশুর ভালবাসা সব কিছুই অনেক সুন্দর করে উঠে এসেছে। ‘ডেভিড ইয়েটস’ চমৎকার ভাবে পরিচালনা করেছেন এই মুভিটি। কিন্তু গল্পটিই কাল হয়ে দাড়িয়েছে এই মুভিটির জন্য। যাই হোক, ‘দ্য জঙ্গল বুক’ এর মত আপাতত এই মুভির কোন সিক্যুয়াল আশা করা যাচ্ছে না। অবশেষে, মুভিটি যেমনই হোক না কেন, ‘টারজান’কে নিয়ে হলিউডে যত সৃষ্টি আছে, তার মধ্যে অন্তত বেস্ট মুভি হিসেবে ‘দ্য লেজেন্ড অফ টারজান’ই এগিয়ে থাকবে।