রাসূল (সা:)’র হাতে তৈরী মদিনার প্রথম মসজিদের ইতিহাস

ইসলামিক ঘটনা September 22, 2016 6,563
রাসূল (সা:)’র হাতে তৈরী মদিনার প্রথম মসজিদের ইতিহাস

আল্লাহ তাআলা হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সত্যদ্বীনসহ সর্বশেষ সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল হিসেবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। নবুয়ত লাভের পর বিশ্বনবি মক্কায় ইসলাম প্রচার শুরু করেন। এতে তাঁর প্রতি নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়।


নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রিয়সঙ্গী হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সঙ্গে নিয়ে আল্লাহর নির্দেশে মদিনার উদ্দেশ্যে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২২ সেপ্টেম্বর মক্কা ত্যাগ করেন।


প্রিয়নবির আগমন বার্তার সংবাদ পেয়ে মদিনাবাসীগণ আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন। মদিনার সর্বস্তরের মানুষ প্রতিদিন বিশ্বনবিকে অভ্যর্থনা জানাতে মদিনার তিন মাইল অদূরে কুবা পল্লীর হাররা নামক স্থানে জড়ো হতেন। তাঁর দেখা না পেয়ে সবাই হতাশ হয়ে ঘরে ফিরে যেতেন।


একদিন এক ইয়াহুদি তাদের দুর্গের প্রাচীরে ওঠে বহু দূরে মরুভূমির ধূলাবালি উড়তে দেখে মদিনাবাসীকে তাঁর আগমন সংবাদ জানান। সঙ্গে সঙ্গে মদিনাবাসীগণ আনন্দের অতিশয্যে মায়া মমতা ও ভালোবাসায় বিশ্বনবিকে সদরে বরণ করে নেন।


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসে সর্ব প্রথম কুলসুম ইবনুল হিদমের আতিথ্য গ্রহণ করেন। সেখানে তিনি ১৪ দিন অবস্থান করেন। বিশ্বনবি কুলসুম ইবনুল হিদম রাদিয়াল্লাহু আনহুর খেজুর শুকানোর জায়গায় একটি মসজিদ তৈরি করেন। এটি ইসলামের ইতিহাসে মুসলমানদের প্রথম স্থাপনা। যা কুবায় স্থাপিত হয়। এটি ঐতিহাসিক মসজিদে কুবা।


মসজিদে কুবা উম্মতে মুহাম্মাদির সর্ব প্রথম মসজিদ। সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে মসজিদে হারাম, মসজিদে নববি এবং মসসিদে আকসার পরই মসজিদে কুবার স্থান। মসজিদে কুবা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে মসজিদ প্রথম দিন থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার উপর (মসজিদে কুবা) -তাই বেশি হকদার যে, তুমি সেখানে নামাজ কায়েম করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। আর আল্লাহ্ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ১০৮)


প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত মসজিদে কুবাকে অনেকবার সংস্কার ও পূনঃনির্মাণ করা হয়। বিশ্বনবির পর ইসলামের তৃতীয় খলীফা হজরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতকালে সর্বপ্রথম মসজিদে কুবার সংস্কার ও পূণঃনির্মাণ করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরো সাত বার এই মসজিদের পূণঃনির্মাণ ও সংস্কার করা হয়।


অনেক পুরনো ও জীর্ণ হয়ে যাওয়ায় সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে মসজিদটির পুনর্নির্মাণ করা হয়। এই মসজিদ পুনর্নিমাণে পুরো মসজিদে এক ধরনের উন্নতমানের সাদা পাথর ব্যবহার করা হয়।


বর্তমানের যে কুবা মসজিদের স্থাপনা রয়েছে, তা অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। মসজিদটির চার কোনে রয়েছে সুদৃশ্য ৪টি মিনার ও দুই তলা বিশিষ্ট মসজিদে কুবার ছাদে রয়েছে ১টি বড় গম্বুজসহ অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট ৫টি গম্বুজ রয়েছে। তাছাড়া ছাদের অন্য অংশে আছে গম্বুজের মতো ছোটো ছোটো অনেক অবয়ব। চারপাশের খেজুরের বাগান ও বনায়ন মসজিদটির সৌন্দর্য্ কে করে তুলেছে অতুলনীয়। যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। সূর্যাস্তের হলদে বিকালে মসজিদটি দেখলে হৃদয় ভরে যায়।


মদিনায় মসজিদে নববির দক্ষিণ পশ্চিম দিকে মসিজদে কুবা অবস্থিত। মসজিদে নববি থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৩•২৫ কিঃ মিঃ । হিজরতের পর বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় ১০ বছর কাটিয়েছেন। এ সময়ে বিশ্বনবি পায়ে হেঁটে কখনো উটে আরোহণ করে কুবা মসজিদে যেতেন এবং সেখানে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করতেন।


হজরত উসাইদ ইবনে হুজাইব আল আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘মসজিদে কুবায় এক ওয়াক্ত নামায আদায় করা; সওয়াবের দিক থেকে একটি ওমরা আদায়ের সমতুল্য।’ (তিরমিজি)


মসজিদে কুবার এ অনন্য সম্মান ও মর্যাদার কারণে বিশ্বনবির ইন্তিকালের পরও হজরত আবু বকর, হজরত ওমরসহ বিশিষ্ট সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম বিশ্বনবির অনুকরণে প্রায়ই মদিনা থেকে মসজিদে কুবায় আসতেন ও তাতে নামাজ আদায় করতেন।

বর্তমানে মদিনায় অনেক সুন্দর সুন্দর মসজিদ রয়েছে। মসজিদে নববির পর সৌন্দর্য্য ও নান্দনিকতার তালিকায় মসজিদে কুবা অন্যতম। ওমরা, হজ ও দর্শণার্থীদের জন্য মসজিদে কুবা সাওয়াব ও সৌন্দর্যে্যর অনন্য প্রতীক।


আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মক্কা মদিনা জিয়ারাতের সময় মসজিদে কুবা পরিদর্শন ও তথায় নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন।

আমিন।